কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে ভারত অধিনায়ক
বৃষ্টিতে আড়াই দিন নষ্ট হওয়ায় অনেকেই হয়ত কানপুর টেস্টে ড্র দেখছিলেন। কিন্তু রোহিত শর্মা জয় ছাড়া আর কিছুই ভাবছিলেন না। দুই দিনেরও কম সময়ে বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দিয়ে ৭ উইকেটে জয়ের পথে অবিশ্বাস্য আগ্রাসী ব্যাটিং করেছে স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে ৩৪.৪ ওভারে ২৮৫ রান। ৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭.২ ওভারে ৯৮ রান। প্রথম ইনিংসে রান রেট ৮-এর উপর। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৬-এর কাছে। দুই ইনিংসেই টি২০ মেজাজে ব্যাটিং করেছে ভারত। এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের নেপথ্যে কী পরিকল্পনা ছিল, জানিয়েছেন ভারত অধিনায়ক।
কানপুরে বৃষ্টি ও তার জেরে মাঠ ভিজে থাকায় প্রায় আড়া দিন নষ্ট হওয়ায় মনে হচ্ছিল, খেলার ফয়সালা হবে না। কিন্তু চতুর্থ দিন ছবিটা বদলে দেয় ভারত। বাংলাদেশের ২৩৩ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভার থেকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করে তারা। টেস্টের ইতিহাসে দ্রুততম ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ ও ২৫০ রান করে ভারত। এই ইনিংসের ফলেই আড়াই দিনে টেস্ট জিতে নেয় তারা।
খেলা শেষে এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের নেপথ্য কাহিনি জানিয়েছেন রোহিত,‘আড়াই দিন বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ার পরে আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাংলাদেশকে অল আউট করব। সব কিছু নির্ভর করছিল ওরা কত রান করতে পারে। একবার যখন দেখলাম ওরা ২৩০ রান করল, তখন ঠিক করলাম দ্রুত রান তুলব। কারণ, কত রান করব সেটা বড় বিষয় ছিল না, বড় বিষয় ছিল দ্বিতীয় ইনিংসে কত ওভার বল করার সুযোগ পাব। কারণ, পিচে বোলারদের জন্য বিশেষ সুবিধা ছিল না। সেখানে বোলারেরা যা করেছে তার জন্য ওদের কোনও প্রশংসা যথেষ্ট নয়।’
দ্রুত রান তুলতে গেলে যে আউট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে তা জানতেন রোহিত। কিন্তু সেই কথা মাথায় ছিল না তাঁর। তিনি শুধু আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলেন,‘বড় শট খেলতে গেলে আউট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমাদেরও ছিল। কম রানে অল আউট হয়ে যেতে পারতাম। ১০০-১৫০ রানে অল আউট হলেও দুঃখ ছিল না। আমরা শুধু নিজেদের একটা সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম। ড্রয়ের কথা ভাবছিলাম না।’
১২৮.১৮ স্ট্রাইক রেটে ৫১ বলে ৭২ ও ৪৫ বলে ৫১ রানের বিধ্বংসী দুটি ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা জশস্বী জয়সওয়াল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে জয়সওয়াল রান করেছেন ১২৮.১২ স্ট্রাইকরেটে। যা কোনো নির্দিষ্ট সিরিজে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ। ছাড়িয়ে গেছেন গ্রেট মোহাম্মদ আজহারউদ্দীনকে (১৯৯৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১২১.৯৬ স্ট্রাইকরেট)।‘দলের জন্য কী করতে পারি, সেটা নিয়েই ভাবছিলাম। আমি যেভাবে খেলতে চাই সেভাবেই খেলার কথাই বলেছিলেন রোহিত ভাই ও স্যার (কোচ গৌতম গম্ভীর)।’—ম্যাচসেরার পুরস্কার হাতে বলছিলেন জয়সওয়াল।
১ সেঞ্চুরিতে ১১৪ রান, সঙ্গে ১১ উইকেট— দূরন্ত অলরাউন্ড নৈপূন্যে সিরিজসেরা রবিচন্দ্রন আশ্বিন। চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসে আশ্বিনের (১১৩ রান) সেঞ্চুরিটি এসেছিল অত্যন্ত কঠিন সময়ে। পরে বল হাতে নেন ৬ উইকেট। কানপুরে তার শিকার ২ ও ৩ মোট ৫টি। এ নিয়ে মুত্তিয়া মুরলিধরনের সঙ্গে যৌথভাবে টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১১বার সিরিজসেরা হলেন তুখোড় এ অলরাউন্ডার। একই কথা জানিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনও। সিরিজ়ের সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে তিনি বলেন,‘রোহিত চেয়েছিল আমরা যাতে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮০ ওভার বল করতে পারি। সেটাই আমাদের বলেছিল। আমরা ঠিক করেছিলাম শুরু থেকে বড় শট খেলব। রোহিত নিজেই সেই পথ দেখিয়ে দিয়েছিল। বাকিরা সে ভাবেই খেলেছে। সেই কারণেই জিতেছি।’
এ নিয়ে শেষ ৯টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলে ৮টিতেই জিতলো ভারত। আর গত ১১ বছরে ঘরের মাঠে টানা ১৮টি টেস্ট সিরিজে অপরাজিত থাকল মোড়ল দেশটি। আগামি ১৬ অক্টোবর থেকে বেঙ্গালুরু, পুনে ও ওয়াংখেড়ে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তিন টেস্টের সিরিজ খেলবে রোহিতের দল।
মিরাজ