ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১

জয়ের লক্ষ্যে ডাচদের মুখোমুখি আজ বাংলাদেশ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১২ জুন ২০২৪

জয়ের লক্ষ্যে ডাচদের মুখোমুখি আজ বাংলাদেশ

আজ সেন্ট ভিনসেন্টে ডাচদের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ লড়াই টাইগারদের

নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আজ বাংলাদেশের। এই ম্যাচের ওপরই নির্ভর করছে টি২০ বিশ^কাপে বাংলাদেশের ভাগ্য। জিতলে সুপার এইটে ওঠার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে, কিন্তু হারলে কঠিন সমীকরণের মারপ্যাঁচে পড়তে হবে। আজ সুদূর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট ভিনসেন্টে আরনস ভেল গ্রাউন্ডে সেই হারের শোধ নিয়ে সুপার এইটের সম্ভাবনা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ।

ওয়ানডে বিশ^কাপের সেই লড়াইয়ের পর আবার আরেক বিশ^কাপে দুই দলের লড়াই শুরু হবে আজ রাত ৮টা ৩০ মিনিটে।  গত বছর ওয়ানডে বিশ^কাপেও আশ্চর্যজনকভাবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচটি এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ দলের জন্য। সেদিন ইডেন গার্ডেন্সে জিততে পারলে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ তৈরি হতো। কিন্তু হেরে যায় বাংলাদেশ এবং সেমিতে ওঠার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে যায়।

এবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে দুদলই সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে এসেছে ক্যারিবীয় দ্বীপে। তবে ডাচরা ম্যাচের আগে ৪ দিন বিরতি পেয়েছে, বাংলাদেশ পেয়েছে মাত্র দেড় দিন। ডাচরা আবার জিততে চায়, কারণ ২ ম্যাচ খেলে তাদেরও পয়েন্ট ২ এবং জিতলে পরবর্তী পর্বে ওঠার রাস্তা সুগম হবে।
১১ বছর কোনো টি২০ ম্যাচ হয়নি সেন্ট ভিনসেন্টে। ২০১৩ সালে পাকিস্তান দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসে এখানে দুটি টি২০ খেলে। সেই দুটি ম্যাচেই তেমন বড় স্কোর হয়নি। সেখান থেকে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায় এই ভেন্যুতে ব্যাটিং সহায়ক কিছু থাকবে না। কারণ ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল) টি২০ আসরের ইতিহাসেও এখানে কোনো ম্যাচ হয়নি।

এরপরও কীভাবে টি২০ বিশ^কাপের ভেন্যু হিসেবে গ্রুপ পর্বের ৩টি ও সুপার এইটের দুটি ম্যাচ পেয়েছে সেন্ট ভিনসেন্ট সেটাই আশ্চর্যের। অবশ্য ব্যাটিংয়ের জন্য যেমনই হোক বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস তেমন চিন্তিত হবে না। কারণ নিউইয়র্কের ভয়ানক নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলার অভিজ্ঞতার পর আর কোনো উইকেট নিয়ে ভীতি থাকার কথা নয়।

উভয় দল জয় দিয়ে এবার বিশ^কাপ শুরু করে দ্বিতীয় ম্যাচ হেরেছে। নেদারল্যান্ডস জিতেছে নেপালের বিপক্ষে ৬ উইকেটে, আর বাংলাদেশ জিতেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কিন্তু সর্বশেষ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে নিউইয়র্কে খেলে হেরেছে ডাচরা এবং বাংলাদেশ। সবিমিলিয়ে তাই দুই দল একেবারে সমান পরিস্থিতির মধ্যেই আছে। এখানে পার্থক্য শুধু ডাচরা সেই হারের পর ৪ দিন বিশ্রাম পেয়েছে।

আগেভাগে সেন্ট ভিনসেন্টে এসে অনুশীলন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ দল সেটি পারেনি, তারা সোমবার ম্যাচ খেলে তারপর এসেছে এবং আজই নামতে হচ্ছে। যদিও ১০ বছর আগে এই মাঠে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা এত বছর কোনো কাজেই আসবে না। কারণ সেই ম্যাচে বর্তমান দলের শুধু মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠগুলোয় সাধারণ স্পিনাররা সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সেজন্য আরনস ভেলে উভয় দল স্পিন আক্রমণ সাজিয়ে একাদশ নামাবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলে এই ম্যাচেও পরিবর্তন আসতে পারে। জাকের আলী অনিকের পরিবর্তে একাদশে আসতে পারেন শেখ মেহেদি হাসান। অথবা মুস্তাফিজুর রহমানকে বিশ্রাম দিয়ে শেখ মেহেদি কিংবা শরিফুল ইসলামকে নামানো হতে পারে। এখন পর্যন্ত বোলিং পারফর্ম্যান্সে এই বিশ^কাপে দারুণ করেছে বাংলাদেশ।

কিন্তু ব্যাটিংয়ের ধারাবাহিক ব্যর্থতা লেগেই আছে। এবার কিছুটা ভালো উইকেটে টপঅর্ডারদের কাছ থেকে বড় কিছুর প্রত্যাশা বাংলাদেশ দলের। আগের ম্যাচ শেষে তাওহিদ হৃদয় বলেছেন, ‘প্রত্যেক ম্যাচেই সব দলের সবাই রান করে না, ১-২ জন খেলে। সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট, এখানে ১১ জন খেলে না। যে ২-৩ জন খেলবে সেদিন যেন খেলাটা শেষ করতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত।

ব্যাটাররা রান করছে না, ইনশাআল্লাহ সামনের ম্যাচগুলোতে করবে। আশা করি তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াব।’ অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগে একমাত্র তিনিই উজ্জ্বল। উভয় ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন তিনি। কঠিন উইকেটেও ঝড়ো ব্যাটিং করেছেন। আর তাই এবার বাকিদের জ¦লে ওঠার অপেক্ষা। লিটন কুমার দাস প্রথম ম্যাচে ভালো ইনিংস খেললেও দ্বিতীয় ম্যাচে আত্মবিশ^াসী শুরুর পর দ্রুতই ফিরে গেছেন। তাকে বেশ ভালো ছন্দে আছেন বলেই মনে হচ্ছে।

ডাচদের বিপক্ষে তারও জ¦লে ওঠা জরুরি। শেষদিকে ভরসার নাম মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ঠিকই তার কাজ করছেন। শুধু অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এখনো নিষ্প্রভ সেটিই বড় ঘাটতি হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ দলের জন্য। 
নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ৪ বার টি২০ ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ। ৩ বার জিতলেও ২০১২ সালে হেগে তাদের কাছে হেরে যায়। গত বছর ওয়ানডে বিশ^কাপে হেরে যায় এবং ২০২২ সালের টি২০ বিশ^কাপে তীব্র লড়াইয়ের পর বাংলাদেশ জিতেছে। তাই ডাচরা আত্মবিশ^াসী এবার বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে হারিয়ে দিতে।

কারণ বিশ^কাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলের কাছে বাংলাদেশ টি২০ সিরিজ হেরেছে। সেটি আরও বেশি প্রত্যয়ী করে তুলেছে ডাচদের। এবারই প্রথম সুপার এইটে ওঠার মোক্ষম সুযোগ তাদের। প্রথম বাধা বাংলাদেশ এটি যেভাবেই হোক টপকাতে বদ্ধপরিকর ডাচরা। শেষ ম্যাচে নামতে হবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা আরও কঠিন হবে।

কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে অবশ্য লঙ্কানদের হারিয়েছে ডাচরা। বাংলাদেশও ইতোমধ্যে লঙ্কানদের হারিয়ে ও প্রোটিয়াদের সঙ্গে দারুণ লড়াইয়ের পর আত্মবিশ^াসী। এখন যে কোনো দলকে হারাতে উন্মুখ বাংলাদেশ। গত টি২০ বিশ^কাপে মাত্র ৯ রানে জিতলেও গত বছর ওয়ানডে বিশ^কাপে ৮৭ রানের বড় ব্যবধানে নেদারল্যান্ডসের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু সুপার এইটে ওঠার জন্য মরিয়া বাংলাদেশ এবার শোধ নিতে চায়।

তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব বলেছেন, ‘মানসিকভাবে চিন্তা করলে আমরা অনেক শক্ত আছি। আমাদের দলীয় একতা অসাধারণ। আমি মনে করি আমরা যদি এভাবে খেলতে থাকি, তবে কোনো দলই আমাদের কাছে ব্যাপার নয়। আর এটা নিয়ে আমরা আলোচনা করি যে টি২০তে যে কোনো দলকে আমরা হারাতে পারি।

×