
মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিনে উইকেট নিয়ে আরও একবার বাংলাদেশ শিবিরে উৎসবের উপলক্ষ এনে দিলেন শরীফুল ইসলাম
মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন যেভাবে স্পিনারদের দাপট দেখা গেছে তাতে করে অন্য কোনো লড়াই থাকবে এই টেস্টে তা কেউ ভাবেনি। তবে দ্বিতীয় দিন থেকে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বৈরী প্রকৃতি।
প্রথম দিন শেষে সেই রাত থেকে অঝোর বৃষ্টি চলেছে বৃহস্পতিবার সারাদিন। তাই দ্বিতীয় দিন খেলাই হয়নি। শুক্রবার ম্যাচের তৃতীয় দিনও সেই বারিধারা খেলা মাঠে গড়াতে বিলম্ব করে দেয়। শেষদিকে আবার আলোর স্বল্পতায় অনেক আগেই খেলা সমাপ্ত করতে হয়। বৈরী প্রকৃতির সঙ্গে ব্যাট-বলের লড়াইয়ে অবশ্য সফরকারী নিউজিল্যান্ড ও বাংলাদেশ লড়াই করেছে সমানে-সমান। যদিও তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ৩৮ রান তোলা বাংলাদেশ এগিয়ে আছে ৩০ রানে। তবে উভয় দলের ব্যাটারদের বেশ লড়াই করতে হয়েছে। তবু গ্লেন ফিলিপস সব নজর কেড়ে নিয়েছেন বৃষ্টি¯œাত গুমোট পরিবেশে ঝড় তুলে। তিনি মাত্র ৭২ বলে ৮৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে ৮ রানের লিড এনে দেন। সফরকারীরা প্রথম ইনিংসে ১৮০ রান তোলে।
মিরপুর টেস্টে স্পিনারদের দাপট থাকবে সেটি আগে থেকেই জানা। কিন্তু প্রথম দিনেই তারা ব্যাটারদের রীতিমতো অসহায় করে দেবেন এতটাও প্রত্যাশা করেনি কেউ। কিন্তু প্রথম দিনেই স্পিনাররা তুলে নেন ১৩ উইকেট এবং সবমিলিয়ে পতন ঘটে ১৫ উইকেটের। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ব্যাটারদের জন্য বধ্যভূমি হওয়ায় খুব দ্রুত রেজাল্ট হবে সেটাই সবাই ভেবেছেন। কিন্তু এখন সেই টেস্ট চতুর্থ দিন গড়িয়েছে। কারণ বৃষ্টি খেলেছে দুদিন। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন কোনো দলকে মাঠেই নামতে দেয়নি অবিরাম বৃষ্টি। আর তৃতীয় দিন বৃষ্টি ও আলোর স্বল্পতায় মাত্র ৩২.৩ ওভার খেলা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৭২ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে নেমে তেমন স্বস্তি পায়নি। ৫৫ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিতভাবেই পিছিয়ে থাকার শঙ্কায় পড়ে তারা। কিন্তু দেড়দিন অপেক্ষার পর শুক্রবার ম্যাচের তৃতীয় দিন লাঞ্চ বিরতির পর খেলা শুরু হয়। তখন কিছুটা উঁকি দিয়েছে সূর্য। কিন্তু বেশিক্ষণ রোদ থাকেনি। বৃষ্টিস্নাত দিনে ড্যারিল মিচেল দেখেশুনে শুরু করলেও রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন ফিলিপস। মিরপুরের উইকেটে বলের যে আচরণ তাতে করে দেখেশুনে খেলেও খুব একটা সুবিধা করা যাবে না। এ কারণেই ফিলিপস চড়াও হয়ে খেলেছেন। আর তাতে করে দ্রুতই ভালো অবস্থানের দিকে এগোতে থাকে নিউজিল্যান্ড। ভয়ংকর মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলামের ওপরেই বেশি ঝড় গেছে। এ দুই স্পিনারকে তুলোধুনো করেছেন ফিলিপস। তবে ধীরস্থির মিচেল টিকতে পারেননি। তাকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন অফস্পিনার নাঈম হাসান। ৩৯ বলে ২ চারে ১৮ রান করেছেন তিনি। ১০ বলে ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। বাকি ৮ রান করেছেন কোনো বাউন্ডারি না হাঁকিয়ে ২৯ বল মোকাবিলায়।
সতর্ক থেকেও মিচেলের টিকতে না পারাই নিশ্চিত করে মিরপুরের উইকেটে যত দ্রুত কিছু রান করা যাবে ততটাই দলের জন্য মঙ্গল। সেটিই করেছেন ফিলিপস। কিন্তু তার সঙ্গে যোগ দেওয়া মিচেল স্যান্টনারকে মাত্র ১ রানেই বিদায় দিয়েছেন দারুণ বোলিং করা নাঈম। অবশ্য কাইল জেমিসন দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তাকে। এতেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট অর্ধশতক তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩৮ বলে। ততক্ষণে হাঁকিয়েছেন ৩ ছক্কা ও ৫টি চার। টি২০ মেজাজে ব্যাটিং অব্যাহত রেখেছেন ফিলিপস। তাই অষ্টম উইকেটে ৫৫ রানের জুটি হয়েছে তার ও জেমিসনের মধ্যে মাত্র ৫৪ বলে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম এই জুটি ভেঙেছেন ২৮ বলে ৩ চারে ২০ রান করা জেমিসনকে বিদায় দিয়ে। পরে অধিনায়ক টিম সাউদিকে নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে লিড এনে দেন ফিলিপস। ক্যারিয়ারসেরা ৮৭ রান করেন তিনি মাত্র ৭২ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায়। তাকেও শরিফুল ফিরিয়েছেন।
শেষ ব্যাটার হিসেবে পরের ওভারেই সাউদি (১৪) তাইজুলের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ৮ রানের লিড নিয়ে ১৮০তে থেমেছে কিউইরা। তা সম্ভব হয়েছে শুধু ফিলিপসের ব্যাটিং তা-বে। ৩টি করে উইকেট নেন তাইজুল ও মিরাজ এবং ২টি করে শরিফুল-নাঈম। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই মাহমুদুল হাসান জয়ের (২) উইকেট হারায়। তবে দ্রুত রান তুলতে থাকেন জাকির হাসান ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে ২৪ বলে ২ চারে ১৫ রানে শান্ত বিদায় নেন সাউদির পেসে। দিনশেষে ২১ বলে ১৬ রানে অপরাজিত জাকির, তাকে সঙ্গ দিচ্ছেন মুমিনুল হক। আলোর স্বল্পতায় ২ ঘণ্টা আগেই খেলা থামিয়ে দেওয়া হয়। আর সেটি শুরু করা যায়নি। তবু ২ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে এখন এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ৩০ রানের লিড কিছুটা স্বস্তিতে রাখলেও আজ চতুর্থ দিন অনেক ঘটনাই অপেক্ষা করছে মিরপুরে।