অনূর্ধ্ব-২০ ওমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে গোলের পর স্বপ্না রানী ও আকলিমা খাতুনের উদ্যাপন
গায়ে-গতরে বাংলাদেশ দলের চেয়ে স্বাস্থ্যবতী ও লম্বা দল তুর্কমেনিস্তানের খেলোয়াড়রা। কিন্তু স্কিলে আবার এগিয়ে বাংলাদেশ। তাছাড়া সিনিয়র বিভাগের র্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশের (১৪০) চেয়ে তিন ধাপ এগিয়ে তুর্কমেনিস্তান (১৩৭)। তারপরও স্কিলের বিষয়টি বিবেচনা করে অনুমান করা হয়েছিল বাংলাদেশই জিতবে। শুক্রবার ঢাকার কমলাপুরে অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হেসেছে স্বাগতিক বাংলাদেশই। একতরফা খেলায় তারা হালি গোল’ (৪-০) উপহার দেয় তুর্কমেনিস্তানকে।
এর ফলে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ ওমেন্স এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে প্রথম রাউন্ডে এইচ-গ্রুপের শীর্ষ দলে পরিণত হতে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলার বাঘিনীরা। এই গ্রুপের অপর দল ইরান আগেই এক ম্যাচ জিতে (প্রথম ম্যাচে তারা তুর্কমেনিস্তানকে ৭-১ গোলে হারায়) ৩ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট নিয়ে ও গোলগড়ে পিছিয়ে পড়ে দুইয়ে আছে বাংলাদেশ। ২ ম্যাচের প্রতিটিতেই হেরে শূন্য পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিল তুর্কমেনিস্তান।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘শুরুতে মেয়েরা তাড়াহুড়ো করেছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তারা গুছিয়ে খেলে ও গোল আদায় করে নেয়। এই জয় আমাদের আগামী ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ভালো খেলতে অনুপ্রাণিত করবে।’
তুর্কমেনিস্তান কোচ মিনগাজোভ কামিল বলেন, ‘আমরা এই প্রথম এএফসির কোনো বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে খেলছি। মেয়েরা যথাসাধ্য খেলেছে। বাংলাদেশকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করার জন্য।’ পুরো ম্যাচে প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশেরই। বিশেষ করে প্রথমার্ধে তো একচেটিয়াই খেলে তারা। গোলরক্ষক রূপনাকে একবারও হাত দিয়ে বল ধরতে দেখা যায়নি। বরং তাকে বল পাওয়ার জন্য গোলপোস্ট ছেড়ে অনেক সামনে এসে ‘ডিফেন্ডার’-এর ভূমিকা পালন করতে হয়! তুর্কমেনিস্তান দল রক্ষণাতœক খেলায় প্রথম গোলটি পেতে অনেক সময় নেয় বাংলাদেশকে। প্রথম একাদশে ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার। কারণ অনুশীলনের সময় লিগামেন্টের ইনজুরিতে পড়েন তিনি। কোচ ছোটন জানান, শামসুন্নাহার খেলার জন্য ৬৫ ভাগ ফিট হলেও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে খেলিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাননি। ইরানের বিপক্ষে রবিবার ফিট হলে তাকে খেলানো হবে। শুক্রবারের ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ছিলেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা।
সংযুক্তি সময়ে (৪৫+১ মিনিটে) অবশেষে অধরা গোল অর্জন করে বাংলাদেশ। কর্নার পায় তারা। স্বপ্নার কর্নার নেয়া বল প্রতিহত করেন গোলরক্ষক আইশা। সেটা প্রতিহত হয়ে আকলিমার কাছে আসে। দেরি না করে বা পায়ের উড়ন্ত জোরালো শটে জাল কাঁপিয়ে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাসে মাতেন তিনি (১-০)। তবে জটলার মধ্যে বল নিয়ন্ত্রণের সময় আকলিমার হাতে বল লেগেছিল বলে রেফারির কাছে অভিযোগ জানায় তুর্কমেনিস্তান দল। কিন্তু সিরিয়ান রেফারি আলেসার বাদ্দৌর তাদের অভিযোগ পাত্তা না দিয়ে গোলের বাঁশি বাজালে স্টেডিয়ামে আগত গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার চারেক বাংলাদেশী দর্শক উল্লাসে ফেটে পড়ে। ৭১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। ডান প্রান্তে বল পেয়ে ইতি খাতুন উঁচু করে বল ফেলেন তুর্কমেনিস্তানের ছোট বক্সের ভেতরে। প্রতিপক্ষ দুই ডিফেন্ডারদের মাঝখান দিয়ে সেই বলে ডান পায়ের সংযোগ ঘটিয়ে সেটাকে গোলে পরিণত করেন আবারও সেই আকলিমা (২-০)। ৮০ মিনিটে আবারও গোল করে বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে ইতির উঁচু ক্রস থেকে বক্সের ভেতরে হেডে গোল করেন স্বপ্না (৩-০)। ৮১ মিনিটে বা প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ করে বাংলাদেশ। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে পোস্টের উদ্দেশ্যে ডান পায়ে শট নেন স্বপ্না। সেই শট তুর্কমেনিস্তানি ডিফেন্ডার কুরবানোভা পেরভানার পায়ে লেগে গোল হয়ে যায় (৪-০)।
বাংলাদেশ ॥ রূপনা চাকমা, আফিদা খন্দকার, নাসরিন আক্তার (উন্নতি খাতুন), সুরমা জান্নাত, ইতি খাতুন, সোহাগী কিসকু, স্বপ্না রানী, মাহফুজা খাতুন (হালিমা আক্তার), শাহেদা আক্তার রিপা (নওশন জাহান), আকলিমা খাতুন (আনিকা তানজুম), আইরিন খাতুন।