ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে এমবাপে-হাকিমির বন্ধুত্ব

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২; আপডেট: ২২:২৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২২

জয়-পরাজয় ছাপিয়ে এমবাপে-হাকিমির বন্ধুত্ব

ফুটবল মাঠের বন্ধু আশরাফ হাকিমিকে সান্ত¡না দিচ্ছেন কিলিয়ান এমবাপে

অবশেষে জয়রথ থেমে গেছে মরক্কোর। আফ্রিকানদের দাপট থামিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে ফ্রান্স। বুধবার কাতারের আলবাইত স্টেডিয়ামে ফ্রান্স-মরক্কোর দ্বৈরথ ছাড়াও ফুটবলপ্রেমীদের নজরে ছিল দুই দলের সেরা দুই তারকা কিলিয়ান এমবাপে বনাম আশরাফ হাকিমির লড়াই। এদিনও ক্রীড়াপ্রেমীদের নজর কেড়েছে দুই বন্ধুর মধ্যকার বিশেষ কিছু মুহূর্ত।
গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। শেষ চারে মরক্কোকে হারিয়ে আবারও ফাইনালে ওঠার নজির গড়ে দিদিয়ের দেশমের দল। সেমিফাইনালের বাধা অতিক্রম করার পর পুরো ফ্রান্স শিবির যখন জয়োল্লাসে মেতে উঠেছে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা ফুটবলার এমবাপে তখন মরক্কো শিবিরে। হ্যাঁ, নিজের দেশের জয়ের আনন্দ ভুলে এমবাপে ছুটে যান তার প্রিয় বন্ধু আশরাফ হাকিমির খোঁজে। পুরো টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত খেলা মরক্কো যখন ফরাসিদের কাছে হেরে যায় তখন হাকিমিকে দেখা যায় মাঠের মধ্যেই নুইয়ে পড়তে। ঠিক তখনই এমবাপে ছুটে যান তার কাছে। মাঠের ঘাসে শুয়ে থাকা হাকিমিকে টেনে তুলেন তিনি। এমন দৃশ্য নজর এড়ায়নি কারও। প্রমাণিত হয় দুই দলের ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে একদল ছিটকে গেলেও বিন্দুমাত্র চিড় ধরেনি তাদের বন্ধুত্বে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা হয়ে থাকল অনন্য দৃষ্টান্ত।

তবে এখানেই শেষ নয়? হাকিমিকে বুকে জড়িয়ে সান্ত¡না দেন এমবাপে। একে অপরের সঙ্গে খোশগল্প সারছেন। এমনকি জার্সি বদলও করেন তারা। শেষে মরক্কোর জার্সি গায়ে হাস্যোজ্জ্বল ছবিও তুলেন ফ্রান্সকে ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক। এমবাপে আর হাকিমির এমন আবেগঘন মুহূর্তে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ফ্রান্সের অভিজ্ঞ কোচ দিদিয়ের দেশমও। এই সময়ে হাকিমির মাথায় আলতো স্পর্শে হাত নাড়েন তিনি।
এমবাপে আর হাকিমির বন্ধুত্বের শুরুটা ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে। ২০২১ সালে পিএসজিতে যোগ দেন হাকিমি। এরপর থেকেই এমবাপের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হয়ে ওঠেন এই মিসরীয় রাইট ব্যাক। এমবাপে ভালোবেসে হাকিমিকে পেঙ্গুইন বলে ডাকেন।

গোল করার পর পেঙ্গুইনের ভঙ্গিতে উদযাপনও করতে দেখা যায় তাদের। তাদের বন্ধুত্বের সেই মধুর সম্পর্ক দেখা যায় কাতারেও। সেমিফাইনালের টিকিট কেটেই নতুন ইতিাহস গড়ে হাকিমির মরক্কো। আর প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে অসামান্য এই কীর্তি গড়া হাকিমিকে টুইট বার্তায় অভিনন্দন জানান এমবাপে। পরে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে লড়াই নিশ্চিত হলে হাকিমিও টুইট করেন তার ফরাসি বন্ধুকে ট্যাগ করে। যেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘খুব শীঘ্রই দেখা হবে বন্ধু।’ যে দেখায় হেরে গেছেন হাকিমি। তবে হারলেও বিশ্বকাপের এবারের আসরে তারা প্রমাণ করলেন তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক যেন সবকিছুরই ঊর্ধ্বে। বিশ্বকাপের মঞ্চে ক্লাব ফুটবলের দুই সতীর্থের একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ছবি এখন ভাইরাল। যা, মন জিতে নিয়েছে গোটা দুনিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের।
আর আশরাফ হাকিমির জড়িয়ে ধরার এই ছবি নিজের ভেরিফাইড পেইজে পোস্ট করেন এমবাপে নিজেও। যে টুইটে ফরাসি তারকা লিখেছেন, ‘দুঃখো করো না ভাই। তোমরা যা করেছ তার জন্য প্রত্যেকে গর্বিত। তোমরা তো ইতোমধ্যেই ইতিহাস তৈরি করেছ।’

এমবাপের করা এই টুইট ভাইরাল হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। ফুটবলপ্রেমীরা ভালোবাসা উজাড় করে দিয়েছেন এই দুই ফুটবলারকে। কুর্ণিশ এবং প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তাদের হৃদয় জয় করে নেওয়া  সৌভাতৃত্বকে। এক সমর্থক এই দুই ফুটবলারের বন্ধুত্বের ছবি দেখে লিখেছেন, ‘ওদের জন্য গর্বিত। তোমরা দুজনেই স্পোর্টসম্যানশিপের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছো। ঠিক যেন দুই ভাই...।’ আর এই ছবির কারণেই ফুটবলবোদ্ধারা মনে করছেন ফাইনালে মরক্কোর সমর্থকদের সমর্থন থাকবে ফ্রান্সের দিকে। মরক্কোর এক ফুটবল অনুরাগী ইসাম বারাহিল তো টুইটারে সুস্পষ্ট করেই লিখে দিয়েছেন। তার ভাষ্য, ‘আজ তোমরা দুজনেই অসাধারণ খেলেছো। দুর্দান্ত চ্যালেঞ্জিং লড়াই হয়েছে মরক্কো এবং ফ্রান্সের মধ্যে। ফাইনালে আমি ফ্রান্সের সমর্থন করব এবং এমবাপে তোমার জন্যও আমার সমর্থন থাকবে কারণ তুমিই কাতার বিশ্বকাপের সেরা ফুটবলার।’ চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের নজির গড়েছিল ফ্রান্স। যার পেছনে নায়কের ভূমিকায় ছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। এবার কাতার বিশ্বকাপেও শুরু থেকে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি।

টানা দুই শিরোপা জয়ের ইতিহাস থেকে এমবাপেরা এখন কেবল এক ম্যাচ দূরে। রবিবার সেই ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। যেখানে এমবাপের আরেক ক্লাব সতীর্থ মেসি দাঁড়াতে পারেন বড় বাধা হয়ে। আগামী রবিবার লুসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে সেই লড়াই। শিরোপা ঘরে তোলার লড়াইয়ের মাঝে থাকবে ব্যক্তিগত পর্যায়ের হিসাব-নিকাশও। মেসি ও এমবাপে দুজনই ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে খেললেও এবার তারা মুখোমুখি অবস্থানে। মেসিকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়ের তকমা দেন ফুটবলপ্রেমীদের বড় একটা অংশ। আবার এমবাপেকে সময়ের সেরা ফুটবলারও মানেন অনেকে। কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল শেষেই মিলতে পারে সেসব প্রশ্নের উত্তর? বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপাই নিজের শোকেসে তুলেছেন লিওনেল মেসি। জাতীয় দলের জার্সিতে গত বছর জিতেছেন কোপা আমেরিকার ট্রফিও। এখন বাকি কেবল আরাধ্য বিশ্বকাপের শিরোপায় চুমো আঁকার! আর্জেন্টিনাকে ৩৬ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচানোর! শেষ হাসি ফুটবে কী লিওনেল মেসির মুখে? নাকি ২৩ বছরেই টানা দুই শিরোপা জয়ের নজির গড়বেন এমবাপে? ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার।

 

সম্পর্কিত বিষয়: