ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

লেভানডোস্কিকে গোলহীন রাখলেন ওচোয়া

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩৭, ২৪ নভেম্বর ২০২২

লেভানডোস্কিকে গোলহীন রাখলেন ওচোয়া

মেক্সিকোর অভিজ্ঞ গোলরক্ষক গুইলার্মো ওচোয়া

ফুটবল বিশ্বকাপে সবমিলিয়ে ৪ ম্যাচ খেলে ফেলেছেন রবার্ট লেভানডোস্কি। পোল্যান্ডের অন্যকতম মহাতারকা তিনি। বিশ্ব ফুটবলের সুপার স্টার এই ফরোয়ার্ড গত বিশ্বকাপে ৩ ম্যাচ খেলে গোলহীন ছিলেন। দুই আসর পর গত বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েও গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় পোলিশরা। সবার দৃষ্টি লেভানডোস্কির দিকে থাকলেও তিনি আলো ছড়াতে পারেননি। কোন গোলের দেখা পাননি ৩৪ বছর বয়সী অভিজ্ঞ এ স্ট্রাইকার।

তবে এবার কাতার বিশ্বকাপে দলের প্রথম ম্যাচেই সুযোগ এসেছিল বিশ্বকাপে প্রথম গোলের দেখা পাওয়ার। পেনাল্টি পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে অবশ্য ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কারণ সামনে দাঁড়িয়েছিলেন মেক্সিকোর গোলপ্রহরী গুইলার্মো ওচোয়া। ৩৭ বছর বয়সী ওচোয়া এবার নিয়ে পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলছেন এবং সর্বশেষ দুই আসরে গোলরক্ষক হিসেবে দুর্ভেদ্য হয়ে বিশ্বব্যাপি ছিলেন ব্যাপক আলোচিত। এবার প্রথম ম্যাচেই লেভানডোস্কির পেনাল্টি ঠেকিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
পোল্যান্ড গত বিশ্বকাপে জায়গা পায় মাঝে দুই আসর খেলতে না পারার পরে। তবে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় তারা। সেনেগাল ও কলম্বিয়ার কাছে পোল্যান্ড হেরে যায় ও জাপানের বিপক্ষে জয় পায়। ৩ ম্যাচে পোলিশরা ২ গোল পেলেও একটিও আসেনি দলের অন্যতম স্ট্রাইকার লেভানডোস্কির পা থেকে। অথচ আলোচিত এই মহাতারকা পোল্যান্ডের পক্ষে সর্বাধিক ৭৬টি আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ডধারী।

আর কোনো পোলিশ ফুটবলার ৫০ গোলও করতে পারেননি আন্তর্জাতিক ফুটবলে। এবার ৩৪ বছর বয়সী লেভানডোস্কির শেষ বিশ্বকাপ। মর্যাদার মঞ্চে গোলের দেখা পাননি তিনি। মঙ্গলবার রাতে মেক্সিকোর বিপক্ষে সেই গোলের খরা কাটানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন লেভানডোস্কি। দেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৩৫ ম্যাচ খেলা এই তারকা ম্যাচের ৫৮ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিলেন বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করার।

কিন্তু তার সামনে ছিলেন দুর্ভেদ্য ওচোয়া। যিনি স্ট্রাইকারদের হতাশায় ডুবিয়ে সব প্রচেষ্টাকে নিরর্থক করে দেওয়ার ক্ষেত্রে দারুণ পারঙ্গম। ২০০০৬, ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পর ক্যারিয়ারের পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছেন ৩৭ বছর বয়সী ওচোয়া। মেক্সিকোর পক্ষে গোলরক্ষক হিসেবে সর্বাধিক ১৩৩ ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার। দেশের হয়ে সার্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার তালিকায় তার অবস্থান ছয়ে। সেই ওচোয়া যিনি পেনাল্টি ঠেকানো (টাইব্রেকারসহ) দারুণ দক্ষ।

তিনি যেন গোলপোস্টে রীতিমতো ধূমকেতুর মতো উড়ন্ত। অভিজ্ঞ লেভানডোস্কির শট তাই ঠেকিয়ে দিয়েছেন এবং দলকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন আরেকবার। এক অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার ও দেশের পক্ষে সর্বাধিক গোলদাতার রেকর্ডধারীকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন আরেক অভিজ্ঞ গোলরক্ষক। ওচোয়া সর্বপ্রথম আলোচনার জন্ম দেন ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৪টি দুর্দান্ত গোল বাঁচিয়ে। গোলশূন্য ড্রয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি।

সেদিন ওচোয়া বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সেরা ম্যাচ।’ গ্রুপ পর্বে সেবার মাত্র ১টি গোল হজম করেন তিনি এবং পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে হল্যান্ডের বিপক্ষে ২ গোল হজম করলেও অনেকগুলো বাঁচিয়েছেন, শেষ মুহূর্তের পেনাল্টিতে ২-১ গোলে ডাচরা জিতলেও ম্যাচসেরা হন ওচোয়া। ২০১৮ বিশ্বকাপে শিরোপাধারী জার্মানির বিপক্ষে ৯টি দুর্দান্ত গোল ঠেকিয়ে মেক্সিকোর ১-০ ব্যবধানের জয়ে ম্যাচসেরা হন তিনি।

সেই আসরে সবমিলিয়ে ৪ ম্যাচে ২৫টি গোল ঠেকিয়েছেন তিনি। ৭ ম্যাচে ২৭টি গোল ঠেকিয়ে সেরা বেলজিয়ামের থিবাউ কুর্তোয়ার পরেই অবস্থান ছিল তার। আর সেজন্যই লেভানডোস্কির গোল পাওয়া হয়নি পেনাল্টি থেকেও। তবে পোলিশ কোচ বলেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা মহাতারকা ম্যারাডোনা, সক্রেটিস, প্লাতিনির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এটাই ফুটবল। আমি জানি গোল করতে সে কতটা মুখিয়ে আছে বিশ্বকাপে।’ অথচ বার্সিলোনার হয়ে ১৯ ম্যাচে ১৮ গোল করা লেভানডোস্কি ফর্মের তুঙ্গে থেকেই বিশ্বকাপে এসেছেন।

×