বিষাদে পরিণত হয় টাইগারদের
প্রথম টি২০ প্রকৃতির বৈরিতায় পরিত্যক্ত হলে বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো বলেন, ‘বৃষ্টির আশীর্বাদে সৌভাগ্যবান বাংলাদেশ!’ কারণ সেদিন ব্যাটিং দৈন্যতায় বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৩ ওভারেই ৮ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১০৫ রান করে বাংলাদেশ। ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে হওয়া সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে যেন সেটাই প্রমাণ করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩৫ রানের বড় জয়ে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। ঝকঝকে রোদে উজ্জ্বল পরিবেশে আগে ব্যাটিংয়ে নামা উইন্ডিজরা বাংলাদেশী বোলারদের ওপর তাণ্ডব চালান।
বিশেষ করে রোভম্যান পাওয়েলের বিধ্বংসী ও ব্র্যান্ডন কিংয়ের হিসেবি অর্ধশতকে ২০ ওভারে ক্যারিবীয়রা ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তোলে। বাংলাদেশী স্পিনাররা যথেষ্ট সমীহ আদায় করলেও বাংলাদেশের ৩ পেসার- তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম ছিলেন বিপর্যস্ত ও অগোছালো। পরে টপঅর্ডারদের ব্যর্থতায় ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান একাই লড়ে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেললেও ৬ উইকেটে ১৫৮ রানের বেশি করতে পারেনি সফরকারীরা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তেমন না হলেও নিজেদের মাঠ ডোমিনিকার সঙ্গে বেশ পরিচিত ক্যারিবীয়রা। বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয় ৫ বছর পর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হিসেবে মাঠে গড়ানো প্রথম টি২০। ক্যারিবীয়দের উৎসবে জল ঢেলে দেয় বেরসিক বৃষ্টি। সেদিন বৃষ্টিতে সিক্ত পরিবেশে টস জিতে আগে বোলিং করে ক্যারিবীয়রা। ২ পেসার ও ৩ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ। কিন্তু রবিবার ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশ, দারুণ ব্যাটিং উইকেট। তাই টস জিতেই ব্যাটিং নেয় উইন্ডিজ। ডেভন থমাসের ইনজুরিতে কিমো পলকে দলে ভেড়ায় তারা।
আর বাংলাদেশ দল বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের পরিবর্তে তাসকিনকে ও ব্যর্থ ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে বসিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে একাদশে নেয়। প্রথম ওভারে তাসকিন ১৪ রান দিলেও পরের ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে অফস্পিনার শেখ মেহেদি হাসান শিকার করেন কাইল মেয়ার্সকে (৮ বলে ১৭)। সাকিবও বাঁহাতি স্পিনে চতুর্থ ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এসেই মাত্র ১ রান দিয়ে সাজঘরে ফেরান শামার ব্রুকসে (০)। কিন্তু এরপর পেসারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং অব্যাহত থাকে। সেই সুযোগে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৪৬ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। কিং প্রথম থেকেই বেশ দেখেশুনে খেলেছেন।
তার দারুণ হিসেবি ব্যাটিং এবং বাংলাদেশী পেসারদের বিশৃঙ্খল বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। ৩০ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩৪ রান করে মোসাদ্দেক হোসেনের অফস্পিনে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন পুরান। মোসাদ্দেক ১৩তম ওভারটি মেডেনসহ উইকেট নেন। এর মধ্যেই কিং ৩৬ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পান। কিন্তু এরপর আর নিজেদের ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। এমনকি ৩ ওভারে মাত্র ১৫ রান দেয়া সাকিব ১৬তম ওভারে দেন ২৩ রান। রোভম্যান মাত্র ২০ বলে ফিফটি পান।
চতুর্থ উইকেটে কিং-রোভম্যান ২৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন। শেষ ৫ ওভারে ৭৪ রান তোলে ক্যারিবীয়রা। ফলে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানে থামে তারা। কিং ৪৩ বলে ৭ চার, ১ ছয়ে ৫৭ ও রোভম্যান ২৮ বলে ২ চার, ৬ ছক্কায় অপরাজিত ৬১ রান করেন। শেষদিকে কিছুটা ভাল বোলিং করে শরিফুল ৪ ওভারে ৪০ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। তাসকিন ৩ ওভারে ৪৬, মুস্তাফিজ ৪ ওভারে ৩৭ রান খরচা করেন। জবাব দিতে নেমে লিটন কুমার দাস (৫), এনামুল হক বিজয় (৩) ও চারে নেমে মাহমুদুল্লাহ (১১) দ্রুতই সাজঘরে ফিরলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ উইকেটে হিসেবি ব্যাটিংয়ে সাকিব-আফিফ হোসেন ধ্রুব ৪৪ বলে ৫৫ রান যোগ করেন। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৩ টপঅর্ডারকে খুঁইয়ে ৪৪ রান করা বাংলাদেশ ম্যাচে জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি।
আফিফ ২৭ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৩৪ রানে আউট হওয়ার পর সাকিব একাই লড়েছেন। ৪৫ বলে ফিফটি করেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ ফিফটির পর দশম এই অর্ধশতক পেয়েছেন ২০ ইনিংস পর। তিনি আর দলকে জেতাতে পারেননি। ৫২ বলে ৫ চার, ৩ ছয়ে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকলেও বাকিদের ব্যর্থতায় ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৮ রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহর পর সাকিব দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০তে ২ হাজার রান পূর্ণ করে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ব্যাট হাতে ২ হাজার রান ও বল হাতে ১০০ উইকেট শিকারের অনন্য বিশ^রেকর্ড গড়েন। কিন্তু বাংলাদেশ হেরে যায় ৩৫ রানে। রোমারিও শেফার্ড ও ওবেদ ম্যাককয় ২টি করে উইকেট নেন।
স্কোর ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস- ১৯৩/৫; ২০ ওভার (রোভম্যান ৬১*, কিং ৫৭, পুরান ৩৪, মেয়ার্স ১৭; শরিফুল ২/৪০)। বাংলাদেশ ইনিংস- ১৫৮/৬; ২০ ওভার (সাকিব ৬৮*, আফিফ ৩৪, মোসাদ্দেক ১৫; শেফার্ড ২/২৮, ম্যাককয় ২/৩৭)। ফল ॥ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ রোভম্যান পাওয়েল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)। সিরিজ ॥ ৩ ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।