সাকব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর কয়েক বছর পর থেকেই এমনটা দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব। সাকিব আল হাসান যখন ব্যাটিংয়ে ভাল কোন ইনিংস খেলেন কিংবা বল হাতে ভাল কিছু করেন তখনই নতুন কোন রেকর্ড হয় কিংবা রেকর্ডবুক ওলট-পালট হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে রবিবার ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্কে আরেকবার তা হয়েছে। ৫২ বলে অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংস খেলে অনন্য এক বিশ^রেকর্ড গড়েছেন সাকিব।
আসলে টি-২০ ক্রিকেটে নতুন এক অধ্যায় খুলেছেন তিনি। এই ৬৮ রানের সুবাদে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০-তে ২ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন। আর অনেক আগেই বল হাতে ১০০ উইকেট পেরিয়ে এখন ১২০ উইকেট এ বাঁহাতির। ফলে ২ হাজার রান পেরিয়ে এখন আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের মালিক এ বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এছাড়া এদিন তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৩ ফরমেট মিলিয়ে ১৩ হাজার রানও পেরিয়েছেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজে সাকিবের দিকে দৃষ্টি ছিল সবার। কারণ ৯২ রান করলেই তিনি নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবেন আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসের পাতায়। হবে একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে ২ হাজারের বেশি রান ও ১০০ উইকেটের বেশি শিকারের অনন্য বিশ্বরেকর্ড। ডোমিনিকায় প্রথম টি২০ ম্যাচে ২৯ রান করে কিছুটা এগিয়ে যান। দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে রবিবার দলের চাপের মুখে ব্যাটিং করতে হয়েছে সাকিবকে।
প্রথম ম্যাচে শুরু থেকে অনেক আগ্রাসী থাকলেও এদিন ধীরস্থির ভঙ্গিতে ব্যাট করেছেন এবং দলকে বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে টেনে তুলেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুবকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়ে। আফিফ ফিরে যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত সাকিব লড়ে গেছেন। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি কেউ। ৪৫ বলে ফিফটি ছোঁয়া সাকিব পরের ৭ বলে করেছেন আরও ১৮ রান। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৫২ বলে ৫ চার, ৩ ছক্কায় ৬৮ রানে। ২০ ইনিংস ও ২ বছর সাড়ে ৯ মাস পর আবারও আন্তর্জাতিক টি২০ হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন সাকিব।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪৫ বলে অপরাজিত ৭০ রান করেন। তারপর আর অর্ধশতক না পাওয়া সাকিব অবশেষে খেললেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। এটি তার দশম অর্ধশতক আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে। এর মধ্যে ৬টিই করেছেন বিদেশের মাটিতে, ৪টি দেশে।
২ হাজার রান স্পর্শ করতে ৬৩ রান প্রয়োজন ছিল সাকিবের। ৬৮ রানে অপরাজিত থেকে এখন তার রান ২০০৫। প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ক্রিকেটে ২ হাজার রান ও ১০০ উইকেটের বিরল রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। তার রান এখন ৯৮ ম্যাচে ২০০৫ এবং উইকেট ১২০টি। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে সাকিবের ধারেকাছেও নেই কেউ। নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি দ্বিতীয় সেরা ১১১ উইকেট নিয়ে, কিন্তু রান মাত্র ২৪৯। আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবির ১৬২৮ রান, কিন্তু উইকেট ৭৬।
আর সাকিবের চেয়ে যারা অনেক বেশি রান করেছেন তাদের মধ্যে সেরা পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ ২৫১৪ রান করলেও উইকেট পেয়েছেন ৬১টি। মাহমুদুল্লহ রিয়াদ ২০২১ রান, ৩৭ উইকেট এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০১৭ রান, ৩৬ উইকেট। মাহমুদুল্লাহর পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচে ২০০০ রান পেরিয়েছেন সাকিব। তবে সাকিব মাত্র ৯৮ ম্যাচে, ৯৭ ইনিংসে পেরিয়েছেন ২ হাজার, মাহমুদুল্লাহর লেগেছে ১১৫ ম্যাচ ১০৭ ইনিংস। এদিন তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রান পেরিয়েছেন সাকিব। তার রান এখন ৩ ফরমেট মিলিয়ে ৩৮২ ম্যাচে ১৩,০১১। সাকিবের ওপরে আছেন দুজন। তামিম ইকবাল ৩৬৮ ম্যাচে ১৪ হাজার ৬০৯ রান এবং মুশফিকুর রহিম ৪১৫ ম্যাচে ১৩ হাজার ৪২৭ রান।
অবশ্য ক্রিকেট ইতিহাসে সাকিবের আগে ১৩ হাজার রান পেরিয়েছেন ৫৩ জন ক্রিকেটার। আরেকটি মাইলফল ছোঁয়ার সুযোগ সাকিবের চলতি সিরিজেই। তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ৩১ রান করতে পারলেই স্বীকৃত টি২০ ক্রিকেটে ৬ হাজার রান পূর্ণ হবে তার। এখন ৩৬৬ ম্যাচে সাকিবের রান ৫৯৬৯।