কৃষ্ণা রানী সরকার
একটি দেশের ফুটবলের মানদ- পরিমাপ করা হয় সে দেশের পুরুষ ফুটবলের সাফল্যের নিরিখে। কিন্তু সিনিয়র লেভেলে পুরুষ ফুটবলে বলার মতো কোন অর্জন নেই ১৯ বছর ধরে। তাই দেশের ফুটবল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। তবে নারী ফুটবলের খোঁজ-খবর যারা রাখেন, তারা নিশ্চয়ই গর্ব করবেন। কেননা গত ৯ বছরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবলে আটবার শিরোপা জিতেছে তারা। এগুলো হলো : এএফসি অ-১৪ বালিকা চ্যাম্পিয়নশিপে (আঞ্চলিক, ২০১৫ ও ২০১৬), এএফসি অ-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে (আঞ্চলিক বাছাইপর্বে, ২০১৬), সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৭), জকি ক্লাব গার্লস ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ইনভাইটেশনাল ফুটবল টুর্নামেন্টে (২০১৮), সাফ অ-১৮ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০১৮), বঙ্গমাতা অ-১৯ ওমেন্স ইন্টারন্যাশনালে (২০১৯) এবং সাফ অ-১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে (২০২১)।
এত নজরকাড়া সাফল্যের মাধ্যমে সানজিদা, ঋতুপর্ণা, আঁখিরা তৈরি করে ফেলেছেন নিজস্ব ভক্ত-বলয়। তাদের খেলা দেখতে ভক্ত-সমর্থক-অনুরাগীরা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে এসে ভিড় করে, গলা ফাটিয়ে তাদের প্রতি সমর্থন জানায়, সাফল্যে অভিনন্দন জানায়। আসলে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনলে ফ্যানরা তার প্রতিদানটা এভাবেই ফিরিয়ে দেন। সম্প্রতি দুটি ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের সিরিজে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে সিরিজ জয় করেছে বাংলার বাঘিনীরা। নিজেদের চেয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এই সাফল্যকে দেখা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে।
লাল-সবুজ বাহিনীর এই অবিস্মরণীয় সাফল্যের সমাচার শুধু দেশেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ফুটবলবিশ্বেই। শোনা যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্লাবগুলোর নাকি নজর পড়েছে বাংলাদেশের এই নারী ফুটবলারদের ওপর।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলির বরাতে জানা গেছেÑ এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটা দেশের ক্লাব তাদের ঘরোয়া লীগে বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাফুফেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন তাদের মেয়েরা বিদেশের মাটিতে গিয়ে লীগ খেলতে পারে। এর আগে সাবিনা খাতুন মালদ্বীপ ও ভারতে এবং পরে কৃষ্ণা রানী সরকার সাবিনার সঙ্গে ভারতে গিয়ে সেখানকার ঘরোয়া ফুটবলে খেলে এসেছেন। সেখানে গিয়ে এই দুই স্ট্রাইকার নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে সক্ষম হয়েছেন। এই বিষয়গুলোও ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো জানে। বছরের পর বছর বাফুফের ক্যাম্পে থেকে অনুশীলন করার সুফল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন নারী ফুটবলাররা। তবে পাইপলাইন মজবুত রাখতে এবারের নারী ফুটবল লীগে দেয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। বাফুফে এবার বিপিএলের ক্লাবগুলোর জন্য একটা নিয়ম বাধতামূলক করে দিচ্ছে। সেটা হলো অবশ্যই তাদের নারী ফুটবল লীগে দল থাকতে হবে এবং লীগে অংশ নিতে হবে। এ পর্যন্ত মাত্র চারবার নারী ফুটবল লীগ অনুষ্ঠিত হয়েছে (২০১১, ২০১৩, ২০২০ এবং ২০২১ সালে)। প্রথম দুই লীগে দেশের শীর্ষস্থানীয় কটি দল অংশ নিলেও শেষের দুটিতে একমাত্র বসুন্ধরা কিংস ছাড়া আর কেউই অংশ নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বাফুফেকে অজপাড়াগাঁয়ের অখ্যাত ও মানহীন বেশ কিছু ক্লাবকে খেলিয়েছিল। কিংসে জাতীয় দলের সিংহভাগ খেলোয়াড় থাকায় লীগ হয় একপেশে (যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল এআরবিসি স্পোর্টিং ক্লাব)। এবার যেন সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি না হয় এবং লীগে দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ে, সেজন্য বাফুফে আগামী লীগ থেকে প্রতিটি দলে কমপক্ষে দুজন করে বিদেশী ফুটবলার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ফুটবলবোদ্ধরা মনে করছেন, যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়, তাহলে লিগের মান নিঃসন্দেহে বাড়বে। সেক্ষেত্রে ক্লাবগুলোও মানসম্পন্ন বিদেশী খেলোয়াড় সংগ্রহে সচেষ্ট হবে।
এরই মধ্যে দল গোছাতে শুরু করেছে ক্লাবগুলো। খুব শীঘ্রই দলবদলের দিনক্ষণ ঘোষণা করবে বাফুফে।