ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

টেস্টেও হোয়াইটওয়াশ- ব্যর্থতার বৃত্ত পূরণ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭

টেস্টেও হোয়াইটওয়াশ- ব্যর্থতার বৃত্ত পূরণ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজের পর টেস্ট সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ দল। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিনেই খেলা শেষ হয়ে যায়। ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জয় তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড। ফলে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো সফরকারী বাংলাদেশ। এর আগে ওয়ানডে এবং টি২০ উভয় সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বরণ করতে হয়েছে। টেস্টেও একই ভাগ্য বরণ করে চরম ব্যর্থতার ষোলকলাই পূর্ণ করল বাংলাদেশ দল। সোমবার চতুর্থ দিনের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস ৩৫৪ রানে শেষ হয়। ৬৫ রানে পিছিয়ে থেকে নামা বাংলাদেশের চরম ব্যাটিং বিপর্যয় ঘটে। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৭৩ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর কিউইদের টার্গেট দাঁড়ায় ১০৯ রান। ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে জয় নিশ্চিত করে কিউইরা। ওয়েলিংটনে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে তারা জিতেছিল ৭ উইকেটে। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে দারুণ কিছু করা নিয়ে বড় একটা সংশয় ছিলই। কারণ এ টেস্টের আগেই ইনজুরিতে ছিটকে যান অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েস। সেটার ছাপ পড়ে দলের প্রথম ইনিংসে। মাত্র ২৮৯ রানেই প্রথম ইনিংস শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। দ্বিতীয় দিনশেষে স্বাগতিক কিউইরা ৭ উইকেটে ২৬০ রান তুলেছিল। সফরকারী বোলাররা যে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে করে মনে হচ্ছিল বেশ ভাল অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন বৃষ্টির কারণে ভেসে যায়। সোমবার ম্যাচের চতুর্থ দিনেও মাঠ ভেজা থাকার কারণে আগে ভাগে খেলা শুরুর কথা থাকলেও হয়নি। যখন খেলা শুরু হয়েছে তারপর বাংলাদেশের বোলাররা সাফল্য ধরে রেখে ভাল কিছু করতে পারেননি। হেনরি নিকোলস দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। দ্বিতীয় দিনের শেষ ভাগে বল হাতে ম্যাজিক দেখানো সাকিব আল হাসানই প্রথম আঘাত হানেন। তিনি ফিরিয়ে দেন টিম সাউদিকে (১৭)। দ্রুতই এ সাফল্য আসে, কিন্তু ততক্ষণে বাংলাদেশের করা প্রথম ইনিংসের রান প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে তারা। এরপর নিকোলসকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন নিল ওয়াগনার। নবম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে ওঠে। লিড পেয়ে যায় কিউইরা। নিকোলস নিশ্চিত এক সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় সাফল্যে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর ওয়াগনার রানআউট হয়ে ফিরে গেলে হাপ ছেড়ে বাঁচে বাংলাদেশ। ৩৫৪ রানে গুটিয়ে গেলেও লিড পেয়ে যায় ৬৫ রানের। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিবই সেরা সাফল্য দেখিয়েছেন ৪ উইকেট শিকার করে। নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এবং পুরো সফরে ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই বিপদে পড়ে। সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ৮ রান করে। প্রথম ইনিংসের মতোই এবারও গোড়া থেকে বাংলাদেশ ইনিংসে হামলে পড়েন কিউই পেসাররা। আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে যোগ দেন ট্রেন্ট বোল্ট, সাউদি ও ওয়াগনার। সৌম্য সরকার অবশ্য দারুণ খেলছিলেন এদিনও। দ্বিতীয় উইকেটে ৪১ রানের জুটিও গড়ে ওঠে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে। পুরো সফরে এই প্রথম মাহমুদুল্লাহকে কিছুটা সাবলীল দেখা গেছে। ভাল একটি ইনিংস গড়তে যাচ্ছিলেন তিনি। আর সৌম্য ভাল খেলতে খেলতেই একটি ভুলে সাজঘরে ফেরেন ৩৬ রান করে। এরপর থেকেই বিপর্যয় নেমে আসে। সাউদির দ্বিতীয় শিকার হয়ে সাকিব (৮) ফিরে যান। এটি ছিল এ পেসারের টেস্ট ক্রিকেটে ২০০তম উইকেট। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ইতিহাসে পঞ্চম বোলার হিসেবে তিনি এ কৃতিত্ব দেখান। রিচার্ড হ্যাডলি মাত্র ৪৪ টেস্টে ২০০ উইকেট নিয়ে কিউইদের পক্ষে দ্রুততম এ মাইলফলক ছোঁয়ার ক্ষেত্রে। এরপরই সাউদির স্থান হয়ে গেল ৫৬ টেস্টে তা অর্জন করে। সাকিবের বিদায়ের পর মাহমুদুল্লাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। তিনি সাজঘরে ফিরেছেন ৩৮ রানে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং এবং এর সঙ্গে কিউই পেসারদের উজ্জীবিত আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে যায় বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৯২ রান থেকে এ কারণে দলের ইনিংসের চেহারা দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১১৫। মাত্র ২৩ রানে ৫ উইকেট হারানোর ফলে যে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সাব্বির রহমান ও নুরুল হাসান সোহান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। অলরাউন্ডার নামটা নামের সঙ্গে থাকলেও মেহেদী মাত্র ৪ ও নাজমুল হোসেন শান্ত ৮ রান করতে পেরেছেন। এরপরও বাংলাদেশের লিড এক শ’ পেরিয়েছে তাসকিন আহমেদ ও কামরুল ইসলাম রাব্বির দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস উপহার দিয়ে তাসকিন ৩০ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ৩৩ রান করেন। আর রাব্বির ব্যাট থেকেও আসে ক্যারিয়ারসেরা অপরাজিত ২৫ রান। নবম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়েন তারা। যেন দলের ব্যর্থ ব্যাটসম্যানদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন ধৈর্য ও স্থিতি থাকলে ভাল ইনিংস খেলা যায়। তাসকিন সাজঘরে ফেরার পর রুবেল হোসেন বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৭৩ রানেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। লিড পায় ১০৮ রানের। ৩টি করে উইকেট নেন সাউদি, বোল্ট ও ওয়াগনার। দীর্ঘ সময় হাতে, টার্গেট মাত্র ১০৯ রান। ফুরফুরে মেজাজে ব্যাটিং করেছে তাই কিউই ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশী বোলারদের কড়া শাসন করেছেন তারা। যেন ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন চড়াও হয়ে খেলে। কোন বোলারই পাত্তা পাননি টম লাথাম ও জিত র‌্যাভালের বিধ্বংসী মেজাজের সামনে। তবে ৩৩ রান করা র‌্যাভালকে বোল্ড করে একমাত্র সাফল্য এনে দিয়েছেন রাব্বি। সেটাই শেষ, জয় তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলেনি কিউই ব্যাটিংয়ে। বিশেষ করে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম নেমে টি২০ মেজাজে ব্যাটিং করেছেন। তিনি ১৫ বলে ৪ ছক্কায় ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। লাথাম ৪১ রান করে দলকে বিজয়ী করেই মাঠ ছেড়েছেন। মাত্র ১৮ ওভার ৪ বল খেলেই ১ উইকেট হারিয়ে ১১১ রান তুলে ৯ উইকেটের বিশাল জয় পায় তারা। বাংলাদেশ দলের হোয়াইটওয়াশ লজ্জায় আরেকটি মাত্রা যোগ হয়। তিন ফরমেটেই এবার কিউই সফরে ব্যর্থতার ষোলকলা নিয়ে শূন্য হাতে ফিরবে এখন দল। সবমিলিয়ে ৮-০ ব্যবধানে এবার নিউজিল্যান্ড সফরে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
×