ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার ভোরে দ্বিতীয় ওয়ানডে

নেলসনে মাশরাফিদের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

নেলসনে মাশরাফিদের সিরিজ বাঁচানোর লড়াই

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথম ওয়ানডেতে যে বেহাল অবস্থা দেখা গেছে, তাতে সিরিজ যে কঠিন থেকে আরও কঠিনতর হবে, তা বলেই দেয়া যায়। সঙ্গে আবার আছে দলের সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীমের ইনজুরি। বাংলাদেশ দল আরও বেহাল দশায় পড়ে গেছে। সেই দশা এখন কাটানো গেলেই হয়। না হলে বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় যে নেলসনের সেক্সটন ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে রয়েছে, তা হারলেই ২-০ ব্যবধানে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাবে। কোনভাবে যদি বাংলাদেশ দল জিততে পারে, তাহলে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-১ সমতা আসবে। এখন সিরিজ হার হয়, না আসে সমতা; তাই দেখার বিষয়। নেলসনে বাংলাদেশ দল এর আগে একটি ওয়ানডে ম্যাচেই খেলেছে। তাতে আছে সুখস্মৃতিও। গতবছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচের ধারণা থেকে বোঝা যাচ্ছে, উইকেটে রান হবে। যেমনটি হয়েছে ক্রাইস্টচার্চে ৭৭ রানে হারা প্রথম ওয়ানডেতে। নেলসনে খেলা একটি ম্যাচ প্রেরণা হয়ে ধরা দিতে পারে। তবে নিউজিল্যান্ড দলটি যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিংয়েও যে দুর্বার; তাও বোঝা গেছে। নিজ দেশে খেলা। বাংলাদেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে টানা দুটি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে নিউজিল্যান্ড। সেই ক্ষত দূর করার এবারই সুযোগ। সেই সুযোগটি নিশ্চয়ই কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে কিউইদের। এ সিরিজে বাংলাদেশের চাওয়া ছিল ভাল খেলা। সেটি প্রথম ওয়ানডেতে ধরা দেয়নি। এখন সামনে যে দুটি ম্যাচ রয়েছে, সেই ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশ দল ভাল খেললে, সেটিই প্রাপ্তির খাতায় যোগ হবে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। তার কাছে মনে হচ্ছে, মাঠ নিয়ে যেটুকু ধারণা আছে; তা কাজে দেবে। তামিম বলেছেন, ‘এখানে একটা ম্যাচ খেলেছি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বড় রান তাড়া করে আমরা জিতেছিলাম। উইকেট একই রকম নাও থাকতে পারে। তবে কম-বেশি ধারণা আছে এই মাঠের ব্যাপারে, যা অবশ্যই কাজে দেবে। বেশিরভাগ ক্রিকেটারই এখানে খেলেছেন এবং পারফর্ম করেছেন, সেই আত্মবিশ্বাস অবশ্যই থাকবে।’ প্রথম ওয়ানডেতে ১৫৮ রানে ৪ উইকেট ফেলে দেয়ার পরও নিউজিল্যান্ডকে আটকে রাখা যায়নি। ১৩৭ রান করা টম লাথাম ও ৮৭ রান করা কলিন মুনরোর ১৫৮ রানের জুটিতেই বিশাল রান গড়ে ফেলে নিউজিল্যান্ড। আর সেখানেই আসলে খেলা নিউজিল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। জিততে যখন বাংলাদেশের সামনে ৩৪২ রান লাগে, তখনই তো কিউইদের হাতে জয় ধরা দেয়ার সম্ভাবনা জেগে যায়। বাংলাদেশ ২৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি। মনে হচ্ছিল, লড়াই করেই হারবে দল। কিন্তু ৫৯ রান করা সাকিব, অপরাজিত ৫০ রান করা মোসাদ্দেক ও ৪২ রান করে ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়া মুশফিকই যা একটু প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেন। তাতে কোন কাজই হয়নি। অভিজ্ঞ বোলারদের যে লাথাম আর মুনরো মিলে তুলাধুনা বানান, তাতেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। জয়ের আশাও মাঠে মারা পড়ে। এবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এখন দল কী করে সেদিকেই সবার নজর থাকছে। তবে এটাও ঠিক, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে যে বাংলাদেশের জেতা কঠিন; তাও সবার বোঝা হয়ে গেছে। ক্রাইস্টচার্চ থেকে নেলসনে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দল। একদিন বিশ্রামও নিয়েছে। আজ নেলসনে পুরো দল অনুশীলনে নামবে। সেই অনুশীলনে মাঠ, উইকেট সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা নেবেন দলের ক্রিকেটাররা। তা নিয়ে বৃহস্পতিবার মাঠে নামবেন। প্রথম ওয়ানডেতে সবকিছুই খারাপ গেছে। সফরটাও তাই হারের গোলকধাধাতেই আটকে আছে। নিউজিল্যান্ডে গিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে হারের পর প্রথম ওয়ানডেতেও হেরেছে বাংলাদেশ দল। বাজে ফিল্ডিং ও খারাপ বোলিংয়েই যে এমনটি হয়েছে, তা দেখাই গেছে। একের পর এক ক্যাচ মিস এবং বাজে বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডে শেষে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তাই আক্ষেপও করেছিলেন, ‘আমাদের ফিল্ডিং অনেকটাই ছিল বাজে। অনেক দুই-তিন নিয়েছে ওরা, যেগুলো চেক দিতে পারতাম। ২০ রানের মত ওখানেই বেশি হয়েছে। বোলিংয়ে শর্ট বল বেশি করেছি। ২৮০-৩০০ রান এখানে হবেই। বোলিং-ফিল্ডিং ভাল হলে আমরা ৪০ রান কম দিতে পারতাম। সেক্ষেত্রে শুরুতে দ্রুত উইকট হারানোর পরও আমাদের সুযোগ থাকত। বাড়তি ওই রানটাই আমাদের ভুগিয়েছে। আমরা একটু বেশিই শর্ট বল করেছি। এই কন্ডিশনে শর্ট বল অবশ্যই করতে হবে। তবে সেটা কার্যকরভাবে করতে হবে, নিউজিল্যান্ডের বোলাররা যেমন করেছে। ওদের শর্ট বলগুলো এসেছে আমাদের মাথা বরাবর। আমাদের শর্ট বল ছিল ওদের বুক উচ্চতায়, যেটা ওরা অনায়াসেই খেলতে পেরেছে। বড় হতাশার জায়গা ছিল ফিল্ডিংয়ে। ফিল্ডিংয়ে একটু ভাল করলে বোলাররাও হয়ত একটু অনুপ্রাণিত হতো।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘ভাল লেগেছে যে এতকিছু হওয়ার পরও আমরা ইতিবাচক থাকতে পেরেছি ব্যাটিংয়ে। শুরুতে দ্রুত উইকেট হারালেও পরে মোটামুটি একটা রান করেছি। সামনে যদি আমরা ওদের ২৮০-৩০০ রানে আটকে রাখতে পারি, এই ম্যাচ তাহলে বিশ্বাস জোগাবে যে আমরা সেই রান তাড়া করতে পারি।’ যে ভুলগুলো হয়েছে, এখন সেগুলো শুধরে নিয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে নামতে পারলেই হয়। সেই আত্মবিশ্বাসে প্রথম ওয়ানডের চেয়ে ভাল কিছু হতেও পারে। আর যদি সেই ভাল জয় এনে দেয়, তাহলে সিরিজে বুধবার হার নয়, সমতাও আসতে পারে।
×