ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২

ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়ে ফাইনালে ইন্টার

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ৮ মে ২০২৫

ইতিহাসের অন্যতম সেরা জয়ে ফাইনালে ইন্টার

বার্সেলোনার বিরুদ্ধে ইন্টার মিলানের জয়ের নায়কদের উদ্যাপনের দৃশ্য

শ্বাসরুদ্ধকর, নাটকীয়, অবিশ্বাস্য- মিলানের সান সিরোতে যা ঘটল তার জন্য কোনো উপমাই যথেষ্ট নয়। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এমন উত্তেজনাপূর্ণ সেমিফাইনাল খুব বেশি দেখেনি বিশ্ব ফুটবল। ঘরের মাঠে প্রথম লেগে দুই দফায় পিছিয়ে পড়ে ৩-৩ ড্র করেছিল বার্সেলোনা। মঙ্গলবার রাতে রোমাঞ্চে ঠাসা এক লড়াই দেখল ফুটবল বিশ্ব।

১২০ মিনিটের ধ্রুপদি লড়াইয়ে ৪-৩ গোলে জিতে, দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ গোলের অগ্রগামিতায় বার্সার ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে শেষ ধাপে পৌঁছে গেল ইন্টার মিলান। বার্সেলোনার এই হতাশাজনক পরাজয়ে হ্যান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা হতাশ হলেও, সিমোনো ইনজাঘির ইন্টারের ইতিহাস গড়া ফাইনালে পা রাখা এক নতুন মাইলফলক।

৩ বছর পর আবার ইউসিএলের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ইন্টার, ১ জুন মিউনিখে হবে শিরোপা ফয়সালার দ্বৈরথ। ইটালিয়ান ক্লাবটির জন্য এটি দ্বিতীয় ইউসিএল ফাইনাল, আর তাদের ইয়ান সোমারের জন্য ম্যাচটা অবিস্মরণীয়, লামিনে ইয়ামালের মুহুমুর্হ আক্রমণ ঠেকিয়ে নায়ক বনে গেছেন সুইস এ গোলকিপার।    
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ৭০ বছরের ইতিহাসে এমন দৃশ্য সত্যিই বিরল। ১৯৫৫ সালে এই প্রতিযোগিতা শুরুর পর থেকে বহু নাটকীয়তা দেখলেও সান সিরোতে ইন্টার-বার্সা যা করেছে, সেটিও ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। শুধু জয়ই নয়, দুই দলের এই লড়াই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও ছুঁয়েছে।

দুই লেগ মিলিয়ে মোট ১৩ গোলের এই থ্রিলার ম্যাচ ফুটবলপ্রেমীদের উপহার দিয়েছে এক অবিস্মরণীয় রাত, যেখানে শেষ হাসি হেসেছে নেরাজ্জুরিরা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে ১৩ গোল এর আগেও একবার দেখা গেছে। ২০১৮ সালে ইতালিয়ান ক্লাব রোমা এবং ইংল্যান্ডের ক্লাব লিভারপুলের মধ্যকার সেমিফাইনালেও দুই লেগ মিলিয়ে হয়েছিল ১৩ গোল। সেবার লিভারপুল প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৫-২ গোলে জিতলেও ফিরতি লেগে রোমার কাছে ৪-২ গোলে হেরে বসেছিল।

সে যাত্রায়ও অ্যাগ্রিগেট ৭-৬ গোলে জিতে ফাইনালে গিয়েছিল লিভারপুল। সেই হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ ১৩ গোলের রেকর্ডটি এখন লিভারপুল ও রোমার সঙ্গে ইন্টার মিলান ও বার্সেলোনাও ভাগ করে নিচ্ছে। 
২১ মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজ ও প্রধমার্ধের যোগ করা সময়ে (৪৫+১ মিনিট) হাকান কালহানোগলুর গোলে ইন্টার এগিয়ে যাওয়ার পর বার্সেলোনার হয়ে একে একে জালের দেখা পান এরিক গার্সিয়া (৫৪ মিনিট), দানি ওলমো (৬০ মিনিট) ও রাফিনিয়া (৮৭ মিনিট)। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের যোগ করা (৯০+৩) সময়ে ফ্রান্সেসকো আচের্বি সমতা ফেরানোর পর অতিরিক্ত সময়ে (৯৯ মিনিটে) ব্যবধান গড়ে দেন দাভিদে ফ্রাত্তেসি। প্রথম লেগের মতো এবারও দারুণ খেলেন ১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল। তার কয়েকটি প্রচেষ্টা অসাধারণ নৈপুণ্যে ব্যর্থ করে দেন ইয়ান সমের।

দুই লেগ মিলিয়ে মোট ১৪টি সেভ করে দলকে ফাইনালে তুলতে বড় অবদান রাখেন এই সুইস গোলরক্ষক। ফিরতি লেগে ম্যাচ সেরা তিনিই। ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল বার্সেলোনা। গোলের জন্য ২২ শটের ১০টি লক্ষ্যে রাখতে পারে হান্সি ফ্লিকের দল। ইন্টারের ১৩ শটের ৭টি লক্ষ্যে ছিল। শুরুতে বল পায়ে রাখাতেই বেশি মনোযোগ ছিল দুই দলের। পরিষ্কার কোনো সুযোগ কেউ তৈরি করতে পারছিল না।

ড্রিবলিংয়ে কয়েকবার ঝলক দেখানোর পর পঞ্চদশ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে শট নেন ইয়ামাল, তবে বল যায় গোলরক্ষক বরাবর। তবে কাকতালীয়ভাবে, ২০১৮ সালে ১৩ গোলের সেমিফাইনাল জিতে ফাইনালে গিয়েও লিভারপুলকে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। এবার একই সংখ্যক গোলের থ্রিলার পার করে ফাইনালে উঠল ইন্টার।
চলতি মৌসুমে ফ্লিকের কোচিংয়ে অসাধারণ খেলতে থাকা বার্সেলোনার ‘ট্রেবল’ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে গেল,‘আমি জানি, সবাই হতাশ। আমরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম, কিন্তু... রেফারিকে নিয়ে কি বলব, তবে প্রতিটি ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত ওদের (ইন্টার) পক্ষে গেছে। আমি হতাশ অবশ্যই, তবে আমার দলকে নিয়ে নই। ওরা সবটুকু চেষ্টা করেছে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আমরা বাদ পড়েছি। পরের বছর চেষ্টা করব সমর্থকদের খুশি করতে।’  

এই ম্যাচের রেফারি ছিলেন সিমন মার্চিনিয়াক, যাকে মনে করা হয় বিশ্বের সেরা রেফারিদের একজন। তবে কিছুতেই নিজেকে বোঝাতে পারছেন না বার্সা বস,‘এই বিদায় আমাকে কষ্ট দিচ্ছে... আমার দল দারুণ খেলেছে। দল নিয়ে আমি গর্বিত, সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি আমরা। কখনো কখনো ব্যাপারটি এ রকমই, কিছু কিছু ব্যাপার কিছুটা অন্যায্য মনে হয়। তবে সেসব মেনে নিতেই হবে। রেফারিকে নিয়ে হয়ত একটু বেশিই বলে ফেলেছি। ইন্টারকে শুভেচ্ছা!’

×