
সুলতানি আমলে পোড়ামাটি দিয়ে তৈরি ঐতিহাসিক কমলাপুর জামে মসজিদ। বরিশাল জেলার গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এ মসজিদটি সতেরো শতকের শেষের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
১.৮৩ মিটার বা ছয় ফুট পুরু দেয়ালবিশিষ্ট মসজিদটি উত্তর-দক্ষিন দিকে ১৭.২২ মিটার বা ৫৬ ফুট দৈর্ঘ্য এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকে ৮.০৮ মিটার বা ২৬ ফুট দৈর্ঘ্য।
দেয়ালগুলিতে বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে মোট দুইটিসহ সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব পাশে মসজিদের মধ্যভাগের প্রবেশ পথটি বাকিগুলোর থেকে বড় হওয়ায় এটিকে প্রধান ফটক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। মসজিদের কিবলার (সামনে) দিকে তিনটি অর্ধ অষ্টভুজ মিহরাব রয়েছে। এরমধ্যে মাঝখানের মিহরাবটি বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং দু’প্রান্তে দুটি ছোট অষ্টভুজ বুরুজ রয়েছে। পাশাপাশি ইটের তৈরি এই মসজিদকে খিলানের সাহায্যে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যার প্রত্যেকটি ভাগে একটি করে সামান্য কন্দাকৃতির গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের মধ্যখানের কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপর দুটি অপেক্ষা বড়। গম্বুজগুলির শীর্ষে রয়েছে পদ্ম ও কলসের নকশা।
মসজিদের অলংকরণের মধ্যে রয়েছে সুলতানি বৈশিষ্ট্যের পোড়ামাটির কাজ। প্রবেশপথের আয়তাকার অংশে প্যাঁচানো ফুলের নকশা, গোলাপ নকশা, জালি নকশা প্রভৃতি মোটিফ সম্বলিত পোড়ামাটির ফলক দিয়ে সাজানো হয়েছে।
এছাড়াও মিহরাবের বহুখাঁজ নকশাগুলি আজও দেখতে অসাধারণ। এছাড়া মসজিদের তিনপাশ দিয়ে রয়েছে হাটার রাস্তা এবং মসজিদের সামনের অংশে রয়েছে সু-বিশাল বসার স্থান। যার পূর্বদিকে (সামনের অংশে) ছোট ছোট চারটি স্তম্ভ রয়েছে।
মসজিদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সৈয়দ সুমন আহম্মেদ জানান, প্রধান প্রবেশপথে যে শিলালিপিটি ছিল তা হারিয়ে যাওয়ার কারনে মসজিদের নির্মাণসময় সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হিসেবে সতেরো শতকের শেষভাগে এটি নির্মাণ হয়েছিলো।
স্থানীয় বাসিন্দা এমদাদ হোসেন হাওলাদার বলেন, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মসজিদটিতে অসংখ্যবার সংস্কার কাজও হয়েছে।
১৯৮৭ ও ২০১২ সালের সংস্কার কাজ তিনি নিজেই দেখেছেন দাবি করে এমদাদ হোসেন হাওলাদার বলেন, ঝড়ের কারণে মসজিদের গম্বুজগুলোর ওপর থাকা কলসের নকশা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাছাড়া আরও কিছু সমস্যা রয়েছে, যেজন্য এখন আবার জরুরি ভিত্তিতে মসজিদের সংস্কার করা প্রয়োজন।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে মসজিদটি দেখভালের জন্য আগে নিয়মিত একজন লোক থাকলেও এখন তিনি নিয়মিত নন।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ২৬ শতক জায়গার ওপর মসজিদ কমপ্লেক্সের পাশেই এখন একটি মাদ্রাসা রয়েছে। সেখানকার শিক্ষক ও শিক্ষর্থীরাই এখন মসজিদের দেখভাল করছেন। মসজিদ ভবনের উত্তরপূর্ব কোণে একটি বিদেশী সংস্থা ওজুখানা নির্মান করে দিয়েছেন। এছাড়াও ওজুর জন্য মসজিদের পূর্বদিকে পুকুর রয়েছে।
মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিরা জানান, মসজিদের ভেতরের অংশে তিনটি কাতারে ৮০ থেকে ৯০ জন মুসুল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া বাহিরের খোলা অংশ নিয়ে দুই থেকে তিনশ’ মুসল্লী একত্রে নামাজ আদায় করেন। তারা আরও জানান, প্রতি শুক্রবার দূর-দুড়ান্ত থেকে জুমআর নামাজ আদায় ও মসজিদ দেখতে অসংখ্য মানুষ এখানে ছুঁটে আসেন।
রাজু