
চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি
চাকরি ফেরতের দাবিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে আয়োজিত সিএমএসএমই নারী উদ্যোক্তা মেলার সামনে আন্দোলন করেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এ মনসুর অনুষ্ঠান শেষ করে বের হওয়ার সময় তার গাড়ি আটকিয়ে অবরোধ করেন তারা।
এ সময় কয়েকজন নারীকর্মী গভর্নরের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তা সদস্যরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। এ সময় নারী কর্মীরা হেনস্তার শিকার হন। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। নিরাপত্তাকর্মীরা টেনেহিঁচড়ে তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন। পরে গভর্নর সেখান থেকে চলে যান। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবর সকাল থেকেই ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। চাকরিচ্যুত কর্মীরা বলেন, আমাদের অন্যায়ভাবে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও তারা সেটা বাস্তবায়ন করছে না।
আন্দোলনরত কর্মীদের একজন বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে ব্র্যাক ব্যাংকের সেবা দিয়ে আসছি। আমাদের পরিশ্রমের কারণে ব্র্যাক ব্যাংক আজ এই অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। অথচ আমাদের কোনো নোটিশ ছাড়াই চাকরিচ্যুত করেছে। আমরা আমাদের চাকরি ফেরত চাই।’
আরেক কর্মী বলেন, ‘আমাদের চাকরি চলে গেছে, এই বয়সে আমরা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি। আমরা আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগ করানো হয়েছে। আমরা গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পারি না। আজকে এখানে গভর্নর এসেছেন, আমরা তার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।’
এর আগে চাকরি ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে আসছেন ব্র্যাক ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মীরা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও আন্দোলন করেন তারা। ৯ ফেব্রুয়ারি ব্র্যাক ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত ২ হাজার ৬৬৮ জন কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।সে সময় মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা দাবি করেন, ব্যাংকের স্বেচ্ছাচারী নীতির কারণে তাদের অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২ হাজার ৫৫৩ জন কর্মী পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, ব্র্যাক ব্যাংকের স্লোগান হলো ‘আস্থা অবিচল’, কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো চিত্র আমরা দেখছি। পুনর্বহালের ফাইল বাংলাদেশ ব্যাংকে আটকে আছে, আমরা পাঁচবার চিঠি দিলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এখন আমরা পাঠাও চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারীভাবে এসব কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পুনর্বহালের নির্দেশ দিলেও গত ১৬ মাসেও তা কার্যকর হয়নি। ভুক্তভোগীদের দাবিগুলো হলো- চাকরিচ্যুত কর্মীদের অবিলম্বে পুনর্বহাল ও ক্ষতিপূরণ প্রদান। ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ। ভবিষ্যতে এ ধরনের অন্যায় প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রক্রিয়া প্রবর্তন। ভুক্তভোগীরা দ্রুত সরকারের হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সেলিম আর. এফ. হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পারফর্মেন্স করতে পারছিল না, এই ধরনের কিছু কর্মীকে নিয়ম মেনে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তারাই এসব করে বেড়াচ্ছে।’