
দেশ ও জাতির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখে দেশের সাংবাদিকরা। যিনি মানুষের সুখ-দুঃখের কথা লিখবেন। লিখবেন ভোগান্তীর গল্প। অনেক অখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কাঠধারী সাংবাদিক অনিয়মের খাতায় নাম লিখান; তখন প্রকৃত সাংবাদিক সমাজ অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়।
সাংবাদিকতার নাম ব্যবহার করে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি ধামকি দিয়ে বাগিয়ে নেন বিভিন্ন সুযোগ সুবিধে। এতে করে আসল, সত্যিকারের সাংবাদিকদের মানহানি ঘটছে। মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে এই মহান পেশাটির উপর থেকে। সম্মানের বদলে অসম্মান কামাতে হচ্ছে। এতে করে আসল সাংবাদিকরাই পড়ছে ভোগান্তিতে।
নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের কাঠধারী সাংবাদিকদের মধ্যে অন্যতম আশরাফুল আলম ওরফে নোবেল পাটোয়ারি। তিনি একটি দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তার বিরুদ্ধে এসেছে অনেক অভিযোগ। তিনি এর পূর্বে কোন প্রতিষ্ঠানে সাংবাদিকতা করেননি। তার ভিজিটিং কার্ডে দেখা যায় তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও (ডিইউজে)’র মেম্বার। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি, আওয়ামীপন্থিদের সাংবাদিক সমিতি বিএফইউজে ও ডিইউজের সদস্য যা ইতিপূর্বেও এই পরিচয় ব্যাবহার করতেন।
ছাত্র জনতার অভ্যুথানের পর নতুন বাংলাদেশে নিজের চরিত্র পাল্টিয়ে নেন। আওয়ামী সরকারের সময় সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচীতে অংশ নেওয়া অফিসারদের ছবি ও পদবীর সূত্র ধরে তাদের বিরুদ্ধে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ উঠে এসেছে। তিনি হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ খুলে আওয়ামী দোসর ট্যাগ দিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হেনেস্তা করে চরিত্র হননের চেষ্টা করে আসছে। যা সাংবাদিকতার পরিপন্থী। অন্যর অপরাধ তুলে ধরার নামে নিজেই অপরাধ ও অনৈতিকতার সঙ্গে যুক্ত হন। নোবেল পাটোয়ারি এইভাবে অনেক সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সম্প্রতি গাড়ী ও ফ্লাট ক্রয় করেছেন।
হাসিনা সরকারের আমলে, আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আত্বীয় পরিচয়ে সরকারি দপ্তরগুলোতে দাপিয়ে বেড়াতেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জনকন্ঠকে বলেন, ‘আশ্রাফুল আলম ওরফে নোবেল পাটোয়ারি নামের এক ব্যাক্তি সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতিটি দপ্তরে ঘুরে বেড়ায়। সংবাদের কোন তথ্য বা সংবাদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তিনি আমার চেম্বারে আসেননা। এভাবে কেও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এসে যদি সময় নষ্ট করে, কাজের বিঘ্নতা ঘটায় এটা রাষ্ট্রের ক্ষতি বলে মনে করি। যা মোটেও কাম্য নয়।’
তিনি সরকারি বেসরকারি প্রায় ব্যাংকগুলোতে তার পরিচিত সচিব ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদবির বাণিজ্য করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। নোবেল পাটোয়ারী ঠিকাদারিও করেন। ‘আমার বাংলা মাল্টিমিডিয়া; নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ট্রেড লাইসেন্স। তিনি সাংবদিক ও আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করে বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডিদের দপ্তরে চাপ প্রয়োগ করে কাজ ভাগিয়ে নিতেন। তার এমন আচারণে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন ব্যাংক কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছর ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে অগ্রণী ব্যাংকের সাজ সজ্জিত করণে লাইটিংর এর কাজ বাবদ আমার বাংলা মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে আশ্রাফুল আলম নোবেল পাটোয়ারী ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার বিল উত্তলন করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্য ব্যাংকগুলোতেও লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ একাই করেন। আর এসব কাজের জন্য কমিশনের বিনিময়ে তাকে সহযোগিতা করতেন, তার অনুগত ব্যাংকাররা।
এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, এ ধরণের সমস্যা আমাদের সবসময়ই পড়তে হয়। তবে এখন কিছুটা কমেছে। নতুন সরকার রাষ্ট্রয়াত্ব ব্যাংকের দিকে গুরুত্ব দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বেগবান করতে কাজ শুরু করেছে। সেখানে যদি আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় তা খুবই দুঃখজনক। বিশেষ করে নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ও অখ্যাত পত্রিকাগুলোর পক্ষ থেকে অনেকেই এমন আচারণ করে থাকে। তিনি বলেন, আমিও চাই সংবাদ মাধ্যম পেশাদারিত্ব বজায় রেখে আমাদের ভুল ত্রুটি তুলে ধরুক। তা প্রচারের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগীতা থাকবে।
অগ্রণী ব্যাংকের এক ডিএমডি জনকন্ঠকে বলেন, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পেশার বাইরে গিয়ে তদবির করতে আসে। যা আমাদের জন্য বিব্রতকর। অনেকেই আসে টেন্ডারের সুপারিশ করতে। আমরা চাই এই বিষয়গুলো নিয়ে নিজারা চিন্তা করুক এবং আমাদের সহযোগীতা করুক। আমরা দেশের ভালো কিছু করতে চাই। তারা যেন আমাদের পাশে থাকেন।
সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সাংবাদিকদের উচিত যার যার পেশায় মনোযোগী হওয়া। নিয়মিত তদবির বাণিজ্য করা যাদের অভ্যাস তারা সাংবাদিক নয়। এখন থেকে কাঠধারী এই সাংবাদিকদের বিষয়ে আমরা আরও সতর্ক থাকবো।
এ বিষয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু ব্যাংক কর্মকর্তা নয় অন্য যেকোন সরকারি দপ্তরের অফিসারগণ সাংবাদিকদের ব্যাবহারে কষ্ট পাবে এটি ঠিক নয়। সাংবাদিকের পরিচয় বহন করে বিজ্ঞাপনের চাপ ও হুমকি ধামকি দেওয়া এক ধরনের ফৌজদারি অপরাধ। তাদের বিরুদ্ধে আইনআনুক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। আর ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠান বা কর্মকর্তরা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) বরাবর অভিযোগ দিলে আমরাও তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেব।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশ্রাফুল আলম নোবেল পাটোয়ারি বলেন, আমি অর্থনৈতিক খবরের নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্বে আছি, পত্রিকার নিউজ করা আমার দায়িত্ব নয়। আমি কাজ করে খাই, ধান্দাবাজি করি না। আমি এসব পছন্দ করিনা। আমি এখন অন্য লাইনে চলে গেছি। কিছুদিন পর আমার হজের ফ্লাইট।
তিনি বলেন, ‘আমার বাংলা মাল্টিমিডিয়া’ আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। আমি যে বেতন পাই তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই আমি কম টাকায় ইভেন্ট ম্যানেজম্যান্টের কাজ করে থাকি। আর আমি আগের মত আর নেই। কিছু ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করেন, আমি তাদের পদন্নতির বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছি তাই তারা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আগের সরকারের সময় অনেক নেতাদের সঙ্গে ছবি উঠা ছিলো স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে করেন তিনি।
রিফাত