ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

এশিয়াড নারী ফুটবল

নেপালকে হারিয়ে শেষটা রাঙাতে চান সাবিনারা!

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০১:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নেপালকে হারিয়ে শেষটা রাঙাতে চান সাবিনারা!

বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও কোচ সাইফুল বারী টিটু

কথায় আছে, ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের সামনেও সুযোগ এসেছে এই বহুল প্রচলিত প্রবাদটি সত্যি প্রমাণ করার। 
চীনের হাংঝুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসের নারী ফুটবলে এবারই প্রথম অংশ নিচ্ছে তারা। তাদের গ্রুপের বাকি তিন দলের দুটি দেশই বিশ্বকাপে খেলা দেশ (জাপান এবং ভিয়েতনাম)। ফলে তাদের বিরুদ্ধে খেলতে গেলে ম্যাচের রেজাল্ট যে কি ভয়াবহ হবে, সেটা আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। আর বাস্তবে হয়েছেও তাই। প্রথম গ্রুপ (ডি) ম্যাচে ২০১১ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন জাপানের কাছে ৮-০ গোলে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয় লাল-সবুজ বাহিনী। দ্বিতীয় ম্যাচেও ৬-১ গোলে ¯্রফে উড়ে যায় ২০২৩ বিশ্বকাপে অংশ নেয়া আরেক দেশ ভিয়েতনামের কাছে। আর এই ম্যাচে হেরেই টুর্নামেন্টের নকআউট (কোয়ার্টার ফাইনালে) স্টেজে যাওয়ার যোগ্যতা হারায় সাইফুল বারী টিটুর শিষ্যারা।

টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে গেলেও এখনো আরেকটি ম্যাচ খেলা বাকি রয়ে গেছে মনিকাদের। সেটা নেপালের বিরুদ্ধে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। হিমালয়ের দেশ নেপালেও একই দশা বাংলাদেশের মতো। তারাও টানা দুই ম্যাচে হেরে (ভিয়েতনামের কাছে ২-০ এবং জাপানের কাছে ৮-০ গোলে হার) গেছে। ফলে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ-নেপাল উভয় দলের জন্যই ম্যাচটি হতে যাচ্ছে ¯্রফে নিয়মরক্ষার বা আনুষ্ঠানিকতার। 
না, ভুল বলা হলো। অন্য অর্থে কিন্তু ম্যাচটি শুধুই নিয়মরক্ষার নয়। বরং দুদলের জন্যই এটি হতে যাচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদা রক্ষার লড়াই। তার কারণ দুদলই সাফ অঞ্চলের, দুদলই প্রায় সমশক্তির (নেপাল ১০১, বাংলাদেশ ১৪২), দুদলেরই খেলার ধরন প্রায় এক এবং দুদলই পরস্পরের পরিচিত। 
আরও একটি কারণে এই ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে নেপালে গিয়ে এবং স্বাগতিক নেপালকেই হারিয়ে (৩-১)। এরা আগে চার বার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি নেপাল। পঞ্চমবারের সময় তারা আশাবাদী ছিল, এবারই অধরা শিরোপাটা হাতের মুঠোয় নেবে। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেয় গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যারা। 
এর প্রতিশোধ অবশ্য বছরখানেক পরে নিয়েছে নেপাল। ঢাকায় এসে তারা দুটি ফিফা প্রীতি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের সঙ্গে। প্রথম ম্যাচে ড্র হলেও পরের ম্যাচে টাইব্রেকারে জিতে সিরিজ জিতে নেয় ১-০ ব্যবধানে। সেই হারের জ্বালা এখনো জ্বলছে মারিয়াদের অন্তরে। স্বাভাবতই আজ তারা চাইবে নেপালকে হারিয়ে সেই জ্বালা-যন্ত্রণার উপশম ঘটাতে। আর এশিয়াড ফুটবল শুরুর আগে বাংলাদেশ দলের মূল লক্ষ্যই ছিল অন্তত একটি জয় কুড়িয়ে নেওয়া এবং সেটা নেপালের বিরুদ্ধে। 
তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে সাবিনারা এবার এশিয়ান গেমসে প্রথম দুই ম্যাচে মোটেও ভালো ফুটবল খেলতে পারেনি। যদিও দুট ম্যাচেই তাদের হার অনুমেয় ছিল, কিন্তু এত বেশি গোল খাওয়া এবং এত ডিফেন্সিভ খেলাটা মোটেও কাম্য ছিল না। মনে হচ্ছে নতুন কোচ টিটুর ফমের্শনের সঙ্গে এখনো খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি মাসুরা-সানজিদারা। আর মেয়েদেরও সেভাবে দোষ দিয়ে লাভ নেই। কেননা সাফ জয়ের পর বাফুফের ব্যর্থতায় তারা দশ মাস ‘বেকার’ বসে ছিল, কোন আন্তর্জাদিক ম্যাচ খেলতে পারেনি। তার ওপর দলে নানান সমস্যার সৃষ্টি হয়। 
দুই খেলোয়াড় ক্যাম্প থেকে বাদ পড়েন, এক ফুটবলার অবসর নেন, রহস্যজনক কারণে পদত্যাগ করেন কোচ ছোটন, নানা গ-গোল পাকিয়ে করে চাকরি ছেড়ে দেন টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি, সাবিনার নেতৃত্বে গোটা দল বকেয়া বেতন ও বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি চেয়ে বিদ্রোহ ও দাবি-দাওয়া পেশ করে বাফুফের কাছে। সবমিলয়ে দলের অবস্থা ছিল হ-য-ব-র-ল! সেই অবস্থা থেকে দল পুনর্গঠন করে আবারও খেলা শুরু করে ভালো খেলবে, এমনটা আশা করাটাও সমীচীন নয়। তারপরও দেখার বিষয়, শেষ ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে লক্ষ্যপূরণ করতে পারে কি না বাংলার বাঘিনীরা।