অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ
উইন্ডিজে টেস্টে ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়তে পারেনি বাংলাদেশ। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সংস্কৃতিহীনতার পুরনো প্রসঙ্গ উস্কে দিয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান প্রশ্ন রেখেছেন, এ দেশে কত জন মানুষ টেস্ট ম্যাচ দেখেন? দায়টা যেন শুধু দর্শকের! তাহলে টি২০তে হচ্ছে না কেন? ছোট্ট ফরমেটের ধুন্ধুমার ক্রিকেট নিয়ে যে আগ্রহের কমতি নেই। সে প্রতিপক্ষ ভারত, অস্ট্রেলিয়া বা জিম্বাবুয়ে, যে-ই হোক। আমিরাতে গত টি২০ বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ থেকে ফিরতে হয়েছিল শূন্য হাতে, কোন ম্যাচ না জিতেই। সেই থেকে খেলা সর্বশেষ ১১ ম্যাচের ১০টিতেই হার!
আরেকটি বিশ্বকাপ সামনে রেখে প্রস্তুতির মিশনটা শুরু হয়েছে ক্যারিবীয় অঞ্চলে। টেস্ট-ভরাডুবির পরও উইন্ডিজে পা রাখার আগে টি২০ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বলেছিলেন, আগের সফরের অভিজ্ঞতা তাদের জন্য বড় প্রেরণা। সেবার টেস্ট হারলেও ওয়ানডে ও টি২০ দুটি সিরিজই জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার তারকাখচিত দল নিয়ে ভঙ্গুর ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজ খোয়ানোর শঙ্কা। বৃষ্টি প্রথম ম্যাচে বাঁচিয়ে দিলেও ডমিনিকায় দ্বিতীয় টি২০তে ব্যর্থ মাহমুদুল্লাহদের হার ৩৫ রানে। গায়ানায় তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ বৃহস্পতিবার।
২০১৮ সালে আগের সফরে পিছিয়ে পড়েও ২-১ ব্যবধানে টি২০ সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ১২ রানের জয়ে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। সাকিবের নেতৃত্বে এরপর তৃতীয় টি২০তেও বৃষ্টি আইনে ১৯ রানের জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল। ডমিনিকায় প্রথম ম্যাচে মাহমুদুল্লাহরা এবার বৃষ্টির কারণে ১৩ ওভারে নেমে আসা প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ১০৫ রানের বেশি করতে। এনামুল হক বিজয় ১০ বলে ১৬, সাকিব ১৫ বলে ২৯ ও নুরুল হাসান সোহানের ১৬ বলে ২৫ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। আউট হয়েছেন সিঙ্গেল ডিজিটে।
একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় টি২০তে আগে ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় স্কোর গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাবে ৬ উইকেটে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশের সংগ্রহ। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫২ বলে অপরাজিত ৬৮ রান করেন সাকিব। মাহমুদুল্লাহ ১১ ও আফিফ হোসেন ৩৪। পিঠের চোটে মুনিম শাহরিয়ার ছিটকে গেলে বিজয়ের সঙ্গে ওপেন করেন লিটন দাস। পার্থক্য কেবল আগের ম্যাচে ওপেনিং জুটি থেকে আসে ২ রান, এই ম্যাচে ৮! নিশ্চয়ই তামিম ইকবালকে মনে পড়ছে! ২০২০ সালের মার্চে সর্বশেষ টি২০ খেলা অভিজ্ঞ এ ওপেনারের ছোট্ট ফরমেটের ক্যারিয়ার নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
সেই থেকে বাংলাদেশ টি২০ খেলেছে ৩২টি। এই সময়ে ১০টি ভিন্ন ওপেনিং জুটি বাজিয়ে দেখেছে মানেজমেন্ট! বারবার পরিবর্তন এলেও এখন পর্যন্ত কোন ওপেনিং জুটিই জমেনি। এত অদল-বদলেও যে সাফল্যের দেখা মিলছে না। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলছেন, ‘যেহেতু ওপেনিংয়ে আমরা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দেখতে পাচ্ছি না, একটু অদলবদল অনেক সময় হতেই পারে। দল হিসেবে আমরা ভাল খেলতে পারছি না। সেটারই প্রভাব পড়ছে সবকিছুতে।’
গত ৩২ ম্যাচে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটিতে সর্বোচ্চ উঠেছে ১০২ রান, গত বছরের জুলাইয়ে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তুলেছিলেন সৌম্য সরকার আর মোহাম্মদ নাঈম। ৩২টি২০তে ওপেনিংয়ে ফিফটি ছাড়ানো জুটি হয়েছে মাত্র ৩টি। এ সময়ে গড়ে উঠেছে ১৯.৪৪ রান। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে যে কোন দলের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ওপেনিং জুটি। এখানেই বাংলাদেশ নিয়মিত ধাক্কা খাচ্ছে। অক্টোবর-নবেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের আগেও সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্বোধনী জুটি। সিরিজে সমীকরণ আছে বোলিং নিয়েও।
ডমিনিকায় প্রথম ম্যাচে দুই পেসার নিয়ে নামলেও দ্বিতীয় ম্যাচে খেলানো হয় তিন পেসার। মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন তাসকিন আহমেদ। তিন জন মিলে ১১.১৮ গড়ে দিয়েছেন ১১ ওভারে দিয়েছেন ১২৩ রান। অথচ তিন স্পিনার শেখ মেহেদি হাসান (৪ ওভারে ১/৩১), সাকিব (৪ ওভারে ১/৩৮) ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (১ ওভারে ০/১) মিলে বাকি ৯ ওভারে দিয়েছেন ৭০ রান। ওভারপ্রতি ৭.৭৭ করে। তাসকিন এদিন ৩ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে কোন উইকেট পাননি। ৪ ওভারে ৩৭ রান খরচ করা মুস্তাফিজও উইকেটশূন্য। ঐতিহ্যগতভাবে স্পিনারদের পরিসংখ্যান ভাল। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাঠেও।
অকেশনাল মোসাদ্দেকও যেমন নিজের প্রথম ওভারেই কোনো রান না দিয়ে প্রতিপক্ষ অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে সাজঘরে পাঠিয়েছেন। সুতরাং গায়ানায় সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে তিন পেসার, না তিন স্পিনার, সেটি দেখার অপেক্ষা।