নিজস্ব সংবাদদাতা, লাকসাম, কুমিল্লা, ২৯ অক্টোবর ॥ লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একক প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মোঃ তাজুল ইসলাম। অপরদিকে বিএনপিতে রয়েছে সম্ভাব্য একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সাংগঠনিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এক সময়ে মনোহরগঞ্জ বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমান এমপির সুদৃঢ় নেতৃত্বে ও ব্যাপক উন্নয়নের কারণে বিএনপির ঘাঁটি এখন আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বর্তমান এমপির নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে পর্যাপ্ত সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ায় আওয়ামী লীগের অবস্থা অনেক ভাল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগ থেকে মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি এ আসন থেকে ৩ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে দলের হাল ধরেন তিনি।
লাকসাম-মনোহরগঞ্জের মানুষ মনে করে এ দু’উপজেলার উন্নয়নের রূপকার দলের কা-ারি এমপি তাজুল ইসলাম। তার নেতৃত্বে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। যার ফলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী এবং সর্বসাধারণের কাছে একজন প্রিয় মানুষে রূপান্তরিত হন।
এ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপিতে রয়েছে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপির দুই কেন্দ্রীয় নেতার অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে এ আসনে। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য উভয় নেতাই ধর্ণা দিচ্ছেন দলীয় হাইকমান্ডের কাছে। দু’গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কর্নেল (অব.) আনোয়ারুল আজিম। ২০০১ সালে এ আসনে সামান্য কিছু ভোটের ব্যবধানে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তিনি তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে রেখেছেন বলে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি। তাই আজিমপন্থীরা মনে করে দল তাকেই মনোনয়ন দেবে। তিনি তার কর্মদক্ষতা কাজে লাগিয়ে সাংগঠনিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন বলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের দাবি। অপরদিকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ও লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম (চৈতী কালাম) এ এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি গঠন করে আলোচনায় রয়েছেন। তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠনকে কাজে লাগাতে এলাকায় সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন। কালামপন্থী নেতাকর্মীরা মনে করে এ আসনে দল তাকে মনোনয়ন দেবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় দুই নেতার অভ্যন্তরিক দ্বন্দ্ব নিরসন করতে না পারলে আসনটি পুনরুদ্ধার করা অনেকটা অনিশ্চিত। অন্যদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্বাহী কমিটি শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য ড. রশিদ আহম্মদ হোসাইনী। তিনি দলীয় হাইকমান্ডের সবুজ সংকেতের অপেক্ষাই রয়েছেন। তিনি দুই নেতা অনুসারীদের ঐক্যবদ্ধ করে এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চান। বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’বার নির্বাচিত মনোহরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ ইলিয়াছ পাটোয়ারী। তিনি দলকে সুসংগঠিত করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
লাকসাম-মনোহরগঞ্জ আসনে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী প্রফেসর ড. গোলাম মোস্তফা তিনবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জামানত হারিয়েছেন। তিনি এবারও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টিতে সম্প্রতি যোগদান করেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য এটিএম আলমগীর। তিনি একজন দলছুট নেতা। তিনি বিএনপির মদদে জাতীয়পার্টিতে হঠাৎ যোগদান করে আওয়ামীলীগের সু-শৃঙ্খল অবস্থান ও নিশ্চিত বিজয় ঠেকানোর উদ্দেশ্যে পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে জাতীয় পার্টি থেকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে বিএনপি অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছেন বলে লোকমুখে শুনা যাচ্ছে। মূলত এ আসনটি বিএনপির দখলে নেয়ার অপচেষ্টা চলছে। তাই তিনি জাতীয় পার্টির এরশাদের সঙ্গে যোগ হয়ে মনোনয়ন নিতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। এ আসনে জামায়াত ইসলাম থেকে সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব এএফ সোলায়মান চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।