
আগামী দুই দশক জুড়ে বৈশ্বিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গতিপথ কেমন হবে, তার বড় একটা অংশ নির্ভর করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির ওপর। সম্প্রতি প্রকাশিত ন্যাটো’র একটি বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ভবিষ্যদ্বাণী।
ন্যাটো সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অর্গানাইজেশন (STO) প্রকাশ করেছে ‘সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ট্রেন্ডস ২০২৫–২০৪৫’ শীর্ষক প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, এআই ও কোয়ান্টাম প্রযুক্তির পাশাপাশি রোবটিকস, স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম, জৈবপ্রযুক্তি, মানব দক্ষতা বৃদ্ধি, মহাকাশ প্রযুক্তি, হাইপারসনিক গতি, নতুন উপকরণ, জ্বালানি এবং কানেক্টিভিটি প্রযুক্তি এই খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে যা নতুন বৈজ্ঞানিক যুগের সূচনা করবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব খাতে দ্রুত পরিবর্তন, উদ্ভাবন ও রূপান্তরের ফলে সামরিক ও বেসামরিক দুই ক্ষেত্রেই নতুন রোডম্যাপ তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশন আগামী অর্থনৈতিক বিশ্বব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে ন্যাটো।
প্রতিবেদনে আগামী দিনের ছয়টি কৌশলগত প্রবণতার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে: ‘প্রতিযোগিতার নতুন ক্ষেত্র’, ‘এআই ও কোয়ান্টামে শ্রেষ্ঠত্বের দৌড়’, ‘জৈবপ্রযুক্তি বিপ্লব’, ‘সম্পদের বৈষম্য’, ‘জনসচেতনতায় বিভাজন’ এবং ‘প্রযুক্তির আন্তনির্ভরতা’।
এছাড়া মহাকাশ, সাইবার জগৎ ও যুদ্ধের নতুন রূপ ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’-এর ক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতা সীমাহীন হয়ে উঠছে বলে প্রতিবেদনটি সতর্ক করেছে। ন্যাটো বলছে, এখন একটি স্যাটেলাইট সিগন্যাল দিয়ে বিশ্বের অন্য প্রান্তে পরিচালিত হচ্ছে সম্পূর্ণ সামরিক অভিযান; আবার একটি সাইবার হামলা পুরো সমাজব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
এই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতায় নেতৃত্ব দিতে হলে দেশগুলোকে এখনই প্রস্তুত হতে হবে। কারণ, এআই এবং কোয়ান্টাম প্রযুক্তির অগ্রগতি শুধু প্রতিরক্ষা নয়, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি কূটনীতিতেও প্রভাব ফেলছে। যেসব দেশ এই খাতে এগিয়ে থাকবে, তারা নীতিনির্ধারণ, সংকট মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বে অগ্রাধিকার পাবে।
তবে সবটাই যে ইতিবাচক, তা নয়। ‘জৈবপ্রযুক্তি বিপ্লব’-এর নেতিবাচক দিক নিয়েও সতর্ক করেছে ন্যাটো। এই প্রযুক্তি যেমন স্বাস্থ্যসেবা এবং নিরাপত্তা খাতে বিপ্লব ঘটাতে পারে, তেমনি এর অপব্যবহারেও তৈরি হতে পারে জেনেটিক অস্ত্র বা জৈব-অস্ত্রের মতো হুমকি। পাশাপাশি ভার্চুয়াল ও অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির বিস্তারও মানুষের তথ্যবিশ্বাস, সংকটকালীন প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরক্ষা নীতিতে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত কূটনীতি ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যেই কাজ করছে ন্যাটোর ইনোভেশন ফান্ড (NIF) এবং ডিফেন্স ইনোভেশন অ্যাকসেলারেটর (DIANA)।
এই প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তুরস্ক। ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি হিসেবে তুরস্কের রয়েছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা শিল্প। দেশটিতে বর্তমানে ৩,৫০০’র বেশি প্রতিরক্ষা কোম্পানিতে ১ লাখের বেশি দক্ষ কর্মী কাজ করছেন, যেখানে ৮০ শতাংশের বেশি পণ্য দেশীয়ভাবে তৈরি।
তুরস্কের শিল্প ও প্রযুক্তিমন্ত্রী মেহমেত ফাতিহ কাচির জানিয়েছেন, ন্যাটোর উদ্ভাবনী কর্মসূচিতে তুরস্ক ইতোমধ্যেই অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, “DIANA-র ২০২৩–২০২৪ প্রকল্প আহ্বানে আমরা পঞ্চম সর্বোচ্চ আবেদনকারী দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “তুরস্ক প্রস্তুত রয়েছে নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে। আমরা আমাদের উদ্ভাবনী মনোভাব, শিল্পশক্তি এবং কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে জোটের প্রযুক্তিগত রূপান্তরে নেতৃত্ব দেব।”
ন্যাটোর এই প্রতিবেদন যেন এক স্পষ্ট বার্তা আগামী দিনের প্রযুক্তি-যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, এবং এই যুদ্ধে টিকে থাকতে হলে এখন থেকেই নিতে হবে দূরদর্শী প্রস্তুতি।
সূত্র:https://tinyurl.com/584aseuk
আফরোজা