
ছবি: সংগৃহীত
মস্তিষ্কে স্মৃতি ধারণের শক্তির পেছনে অক্টোপাস-আকৃতির কোষ, অ্যাস্ট্রোসাইট, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে—এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এক দশক ধরে শুধুমাত্র নিউরনকেই চিন্তার এবং স্মৃতির স্থপতি মনে করা হলেও, এক নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে এই কম আলোচিত কোষগুলোও মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি গঠনে বড় ভূমিকা রাখছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমআইটির একদল গবেষকের মতে, এই অ্যাস্ট্রোসাইট কোষগুলো তাদের অসংখ্য শাখা-প্রশাখা (tentacle) দিয়ে একাধিক নিউরনের সংযোগস্থলে জড়িয়ে থাকে এবং সেখানে তথ্য আদান-প্রদানে অংশ নেয়। গবেষক লিও কোজাচকভ বলেন, ‘অ্যাস্ট্রোসাইটকে আপনি একপ্রকার অক্টোপাস হিসেবে ভাবতে পারেন, যার প্রতিটি শাখা বিভিন্ন স্নায়ুর সঙ্গে সংযুক্ত।’
এই কোষগুলো বিদ্যুৎচালিত সংকেত না পাঠিয়ে ক্যালসিয়াম সিগন্যালিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে। কোষের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়ামের ওঠানামা নতুন বার্তা তৈরি করে, যা নিউরনে প্রভাব ফেলে।
স্মৃতি সংরক্ষণে নিউরনের বিকল্প হতে পারে অ্যাস্ট্রোসাইট
গবেষণাটিতে মেশিন লার্নিং মডেলের সহায়তায় দেখা গেছে, অ্যাস্ট্রোসাইটের প্রতিটি ‘প্রসেস’ আলাদা কম্পিউটেশনাল ইউনিটের মতো কাজ করতে পারে। এভাবে একটি কোষ হাজার হাজার সংযোগের মাধ্যমে তথ্য ধারণ করতে সক্ষম, যা কম নিউরনে বেশি স্মৃতি সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি করে।
গবেষকদের মতে, নিউরনের তুলনায় অ্যাস্ট্রোসাইট কম শক্তি খরচ করে, ফলে এটি বেশি কার্যকর ও শক্তির দিক থেকে সাশ্রয়ী হতে পারে।
আলঝেইমারসহ স্মৃতি-বিকৃতি রোগে নতুন দিগন্ত
এই মডেল শুধু নিউরোসায়েন্স নয়, আলঝেইমারসহ বিভিন্ন স্মৃতিভিত্তিক স্নায়ুরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। গবেষক দলের অন্যতম সদস্য কোজাচকভ বলেন, ‘যদি আমরা অ্যাস্ট্রোসাইটের সংকেত প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা শনাক্ত করতে পারি, তাহলে সেগুলো লক্ষ্য করে ওষুধ তৈরি সম্ভব হতে পারে।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাতেও কাজে আসতে পারে এই মডেল
গবেষকরা বলছেন, অ্যাস্ট্রোসাইটের এই জটিল কিন্তু দক্ষ গঠন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI–তে প্রয়োগ করে এমন হার্ডওয়্যার তৈরি করা যেতে পারে, যা অনেক বেশি তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম হবে এবং অনেক কম শক্তি খরচ করবে। এতে করে ভয়েস রিকগনিশন, রোবটিক্স বা নিউরোপ্রোথেটিকসের মতো প্রযুক্তি আরও উন্নত হতে পারে।
সূত্র: লাইভ সায়েন্স।
রাকিব