
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, সংস্কার ও বিচার দীর্ঘ মেয়াদী প্রক্রিয়া। বিচার দশ বছর পরেও করা যাবে। বিচারের জন্য অপেক্ষা করলে ৫০ বছরেও নির্বাচন করা যাবে না। দেশে সংস্কারের নামে সার্কাস চলছে। দেশের রাজনীতি, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস, সংস্কৃতি, মানুষ কোনটা গ্রহণ করবে, কোনটা গ্রহণ করবে না তা সরকার জানে না।
সোমবার ১৪ জুলাই দুপুরে নগরীর পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ষষ্ঠ মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, বর্তমান সরকারের কোন সংস্কারই দেশের মানুষ গ্রহণ করে নাই। নারী সংস্কার, মিডিয়া সংস্কার, এনবিআর সংস্কার কোনটিই বাস্তবায়ন করা যায়নি। এ সরকার বড় দল হিসেবে আমাদের ও আরেকটি রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়েছে। দেশের ৫০ ভাগ লোককে বাদ দিয়ে তারা সংস্কারের কথা বলছেন। সেই সংস্কার কি আগামীতে পার্লামেন্টে পাস হবে। সরকারের লক্ষ্য সংস্কারের নামে একতরফা নির্বাচন করে দেয়া।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে আমি বারবার বলেছিলাম বিএনপি-জামায়াতকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা যাবে না। তাদের ছাড়া নির্বাচন হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু হবে না। দেশের সকল মানুষ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে। সকলকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে। আমি আওয়ামী লীগের পক্ষের লোক নই। তবু বলছি আওয়ামী লীগকে কিসের ভয়। তারা তো আধমরা অবস্থায় আছে। নির্বাচনে আসেন, কে পাস করবে করুক। এই মবতন্ত্র দিয়ে ইলেকশন সম্ভব হবে না। যে দল নিবন্ধন হয়নি সেই দলকে নিয়ে সরকারকে ঠিক করে কি হবে, কি হবে না।
মব নিয়ে জিএম কাদের বলেন, মবতন্ত্র বর্তমান সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। মবতন্ত্র থাকা অবস্থায় তারা আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারবে না। আইন শৃঙ্খলা রক্ষা না হলে দেশে বেকার সমস্যা বাড়বে। মিল-ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দেশে ইনভেস্টমেন্ট বাড়ছে না। এতে করে বেকারদের সংখ্যা বাড়ছে। জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে, অভূক্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ফলে দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। অনেকে ফ্যাসিবাদের দোসর আখ্যা দিয়ে মানুষের জমি-জমা, ব্যবসা-বাণিজ্য লুট করছে।
দেশের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান দেশে চরম নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। আমরা গৃহযুদ্ধ, দূর্ভিক্ষ, ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে যাচ্ছি। যারা এই মবকে ব্যবহার ও মবের শক্তি প্রদর্শন করে মানুষকে হয়রানি করেছিল, তারা এখন সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। পুলিশ ও প্রশাসনের মনোবল শুণ্য করেছে। তারা এখন কাজ করতে পারছে না। আপনি যদি পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজ করাতে না পারেন, তাহলে মব দিয়ে ইলেকশন হবে। সেটি কি দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি বলেন, গণঅভ্যূত্থানের হত্যা নিয়ে মিথ্যা মামলা করে আমাদের নেতাকর্মীদের জেলে ঢোকানো হয়েছে। তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। অথচ আমাদের ছেলেরা অভ্যূত্থানে শহীদ হয়েছে। চারজন জেল খেটেছে। আমাদের মেয়রকে অ্যারেস্ট করার পরিকল্পনা করেছিল বিগত সরকার। জাতীয় পার্টির এত ত্যাগের পরও বিচার, চার্জশীট ছাড়া আমাদের ছেলেদের ৮ থেকে ৯ মাস ধরে জেল খানায় রাখা হয়েছে। বিচারের আগে কাউকে শাস্তি দেয়া যায় না। অথচ তারা কারাভোগ করছে। সরকার দেশে এ ধরনের শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারের এই আচারণকে ভয় পাচ্ছি না, এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। জনগণের পক্ষে কাজ করতে গেলে কষ্ট করতে হবে, ঝুঁকি নিতে হবে, জীবন দিতে হবে। এভাবে লড়াই-সংগ্রাম করে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে জিএম কাদের বলেন, যারা বিগত দিনে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেছে সেই সমস্ত লোক আর দলে থাকতে পারবে না। পুরাতন ঝান্ডা নিয়ে আর রাজনীতি করার সুযোগ নেই। জাতীয় পার্টি প্রয়োজনে বিলীন হয়ে যাবে কিন্তুস্বার্থবাদীদের সমর্থন করবে না, সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজনীতি করবে না। যারা করতে চায়, তারা নতুন দল করুক। যারা দলীয় প্রোগ্রামে আসে না, তাদের চিহ্নিত করে রাখুন। কারণ তাদের রাজনীতির সাথে আমাদের রাজনীতি খাপ খায় না। আমরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনীতি করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, দলের নব-নিযুক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ইয়াসির আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, জেলা যুব সংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির আহ্বায়ক ফারুক আহমেদসহ অন্যরা। এরপর জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ দেশ ও জাতির কল্যানে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। শেষে পল্লী নিবাসে আমের চারা রোপন করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
Jahan