ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

মুক্তিযুদ্ধ যেমন ভোলার নয়, তেমনি জুলাইও এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়

প্রকাশিত: ০৯:১৮, ২ জুলাই ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধ যেমন ভোলার নয়, তেমনি জুলাইও এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জীবনে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়, যা আমাদের জাতিসত্তা ও স্বাধীনতার মূল ভিত্তি। এই মহান আত্মত্যাগ, লাখো শহীদের রক্ত এবং অগণিত মানুষের সংগ্রাম কখনো ভোলা সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই মাসও তার তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই মাসেই ঘটেছিল এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান, যেখানে তথাকথিত ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের জন্য অসংখ্য মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরু থেকেই দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মোড় আসে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এর সূত্রপাত হলেও, দ্রুতই এটি দমন-পীড়ন, দুর্নীতি এবং মৌলিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক জন-আন্দোলনে রূপ নেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে সাধারণ জনগণ, শিক্ষার্থী, তরুণ-যুবক এবং বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন।

সরকার এই আন্দোলন দমনে চরম দমননীতি অবলম্বন করে। শান্তিপূর্ণ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়, টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়। অসংখ্য আন্দোলনকারীকে আটক করা হয় এবং তাদের ওপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। এই সংঘর্ষে বহু মানুষ নিহত হন এবং হাজার হাজার আহত হন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো আহতদের ভিড়ে উপচে পড়েছিল। গণমাধ্যমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল, যাতে প্রকৃত চিত্র প্রকাশ না পায়।

তবে, সরকারের এই দমন-পীড়ন জনগণের প্রতিরোধকে আরও জোরালো করে তোলে। নিহতদের রক্ত এবং আহতদের আর্তনাদ আন্দোলনকে আরও বেগবান করে। একপর্যায়ে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনও জনগণের পক্ষে অবস্থান নেয়। নিরুপায় হয়ে দীর্ঘদিনের শাসক শেখ হাসিনা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং দেশ থেকে সপরিবারে নির্বাসিত হন।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এটি প্রমাণ করে যে, ফ্যাসিবাদী শাসন যতই শক্তিশালী হোক না কেন, জনগণের ঐক্যবদ্ধ শক্তি তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। এই অভ্যুত্থান গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার এবং বিচার প্রতিষ্ঠার এক সাহসী সংগ্রামের প্রতীক হয়ে থাকবে। এই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছেন, তারা জাতির ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন এবং তাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে। মুক্তিযুদ্ধের মতোই, এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানও বাঙালির স্মৃতিতে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে চিরকাল অমলিন থাকবে।

সাব্বির

×