ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ড. ইউনূস ক্ষমতায় থাকার জন্য মৌলবাদীদের এক জায়গায় করেছেন: গয়েশ্বর চন্দ্র

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২১:২৯, ২৫ মে ২০২৫

ড. ইউনূস ক্ষমতায় থাকার জন্য মৌলবাদীদের এক জায়গায় করেছেন: গয়েশ্বর চন্দ্র

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ‘ক্ষমতায় থাকার জন্য মৌলবাদীদের একখানে করেছেন’ এমন অভিযোগ তুলেছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

রোববার (২৫ মে) দুপুরে এক আলোচনা সভায় অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রধানের নানা পদক্ষেপের সমালোচনা করতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমন অভিযোগ তোলেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা ন্যাশনালিস্ট পার্টি, আমরা দেখতেছি যে, এখন জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে যারা আছে অর্থাৎ সোশ্যাল ইকোনমি এবং ক্যাপিটেল ইকোনমি এটাই তো দ্বন্দ্ব, বাম-ডান এর বেশি কিছু না। এখন আরেকটা ন্যাশনালিস্ট পার্টির কাছে মৌলবাদী যেমন, যারা প্রগতিশীল বাম রাজনীতি মৌলবাদী করে তারা তেমনই একই চারা এটা ড ইউনূস সাহেব ডিভাইড করে দিয়েছেন। মৌলবাদীদের একখানে করে ফেলছে ক্ষমতায় থাকার জন্য।”

‘‘পৃথিবীতে যে শক্তিকে আপনি (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) সন্তষ্ট করতে চান, সারা পৃথিবীতে মৌলবাদীর জন্মদাতা-মদদদাতা ওই দেশটা (যুক্তরাষ্ট্র)। তারা লাদেনের জন্মদাতা আবার তারাই লাদেনের শেষ করা।”

গয়েশ্বর বলেন, ‘‘আমাদের নতুন সংকট যেটা বুঝি সেটাকে আমরা সংকট মনে করি না। কারণ আমাদের কণ্ঠের সাথে আরেকজনের কণ্ঠের যখন অমিল নাই, আমাদের সুর-তার-লয়-কথা যখন এক, আমাদের দমাবে এই শক্তি কার? কার শক্তি আছে?”

‘‘আমরা এখানে (আলোচনা সভায়) যারা আছি ঘুরে-ফিরে কিন্তু সব দলের একই মত একই কথা; আমরা যদি বলি, কালকে রাস্তায় নামব তাহলে আমার মনে হয়, ইউনূস সাহেব থাকতে পারবে না।”

তিনি এও বলেন, ‘‘তারপরও আমরা চাই, ড. ইউনূসই সফল হোক, ড. ইউনূসের সফল মানেই তো আমাদের জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের একটা সফলতা।”

‘‘আজকেও বলে যাচ্ছি, গণতন্ত্র জনগণের মৌলিক অধিকার, জনগণের মালিকানা, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত করার দিনটি না দেখে ঈম্বর যে আমাকে চিতায় না তুলে।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে দেশ বাঁচাও বন্দর বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে এই আলোচনা সভা হয়।

‘বৈষম্যবিরোধীরা ডিসি-এসপি অফিসে যাবে?’

গয়েশ্বর বলেন, ‘‘এই বৈষ্যম বিরোধী আন্দোলন যারা করেছে তাদের ৯০% লেখাপড়ায় চলে গেছে। কেউ ফিল্ডে নাই। আমার নাতনী আপনারা আমার মেয়ে নিপুণ রায় চৌধুরীকে চিনেন ওর মেয়ে ইনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ক্লাস টেন এ পড়ে এখন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত, এখন তাকে আনতে পারবেন না রাজনীতিতে।”

‘‘আজকে যারা নাকি জুলাই-আগস্টের এগারো দিনের আন্দোলনে যারা মুকুট পড়লো অর্থাৎ ছাত্রদের সেই ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো স্বাভাবিক কারণেই তো তারা আমাদের কাছে অনেক বড়, অনেক বড়। কিন্তু তারা নিজেরা নিজেরা ছোট হচ্ছে। যে জাতি তাদেরকে মাথা তুলেছে সেই তারা যদি মাথা থেকে পায়ের তলে পড়ে যায় সেজন্য কি জাতি দায়ী?”

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘আমরাও আন্দোলন করেছি মন্ত্রী হওয়ার আগ পর্যন্ত, আমি সচিবালয় চিনি নাই।”

‘‘কিন্তু উনারা (বৈষ্যমবিরোধী ছাত্ররা) ডেইলি ডেইলি সচিবালয় যায় কেনো? উনারা ডেইলি ডেইলি ডিসি অফিসে যায় কেনো? উনারা এসপিদের ধমকায় কেনো? তারা টিএনও অফিসে বসে থাকে কেনো? তারা ওসি টেবিলে বসে থাকে কেনো?”

‘ভোটের কথা বললে উনাদের যন্ত্রণা হয় কেনো?

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘‘ভোটের কথা বললে উনাদের কেনো জানি যন্ত্রণা হয় এটা বুঝি না। উনার যদি কেউ মনে করেন উনাদের একটা রাজকীয় দল তৈরি করবেন, কবে সেটা হবে, কবে জিতবে তারপরে করবেন? তাহলে এটা তো ভাই গণতন্ত্রের কথা না।

‘‘আমরা তো শেখ হাসিনার ছায়া দেখতে পাই। মনে আছে না, কিছু হলে শেখ হাসিনা বলতো যে, তার তথাকথিত উন্নয়ন ধারা ঠিক রাখতে হলে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে হবে একই রেজিমকে রাখতে হবে, উনারা বলছেন পাঁচ বছর উনাকে থাকতে হবে। তাই সেই ছায়াই তো এখন আমরা দেখতে পারছি আজকে। আমাদের সেই ছায়া তো দেখার কথা ছিলো না।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, ভালো সংস্কার নির্বাচনের জন্য সংস্কার করে নির্বাচন দিতে গেলে ডিসেম্বর লাগবে না, আগেই নির্বাচন দেয়া সম্ভব। আমাদের দাবি হলো, ডিসেম্বরের মধ্যেই আমরা নির্বাচিত সরকার দেখতে চাই।”

‘‘কারণ বুঝতাম আপনি (মুহাম্মদ ইউনূস) যদি ভালো কাজ করেন, জনগনের স্বার্থের পক্ষে কাজ করেন তাহলে দুই-চারদিন বেশি হলে আমাদের কোনো আপত্তির কিছু থাকতো না। আমরা সেটা দেখতে পারছি না। দিন যত যাচ্ছে আপনি এত দরজা খুলে ফেলেছেন পতিত স্বৈরাচার বিভিন্ন সময়ে অগণতান্ত্রিক শাসনে বেড়ে গড়ে উঠা অপশক্তি আর আধিপত্যবাদী সামাজ্য শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার নানা সুযোগ নিতে পারে, এর দায়ও আপনাকে নিতে হবে, এই দায় আমরা নেবো না।”

চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশীদের হাতে দেয়া, মানবতার করিডোর প্রদানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হবে বলে হুশিয়ারি দেন সিপিবির এই শীর্ষ নেতা।

‘বিদেশি কোম্পানিকে বন্দরের দায়িত্ব দেয়া একটা চক্রান্ত’

বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘‘দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড না, আল্লাহতালার ফেরেস্তা আসলেও ১৯০ মিটারে বেশি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়তে পারবে না, ৯ মিটারের জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে না।”

‘‘এই বন্দর যে অপরারেট দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে ওই অপারেটর দিয়ে পরিচালিত করতে পারবে। ওই অপারেটর ছাড়া দেশিয় ইন্টারপ্রিনিউর পরিচালিত করতে পারবে। দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড এখানে আসলে সামান্যতম কোনো কাজে লাগবে না, একটা পয়সা সেখানে বিনিয়োগ করার কোনো সুযোগ নায়ে। সমস্ত বন্দরই সব কিছু করে ফেলেছে। এটা একটা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র।”

‘প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ভুল নিউজ ছাড়লো কারা?

‘গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, ‘‘আমরা জানি না, প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের এই ধরনের কথা বলেছেন কিনা। আমার বিশ্বাস তিনি এরকম কথা বলবেন না। তিনি এতো ইম্যাচুয়েড লোক নয় যে, তিনি বলবেন, পদত্যাগ করব।”

‘‘কিন্তু এটা মার্কেটে ছাড়ল কারা? সমস্ত নিউজে এই বিভ্রান্তি-প্রোপাগান্ডাটা ছাড়লো কারা? এই নতুন দল আমাদের ছাত্র বন্ধুদের এনসিপির তারা। তারা হচ্ছে, সোর্স বিবিসি নিউজ করছে, রয়টার্স নিউজ করছে, নিউইয়র্ক টাইমস নিউজ করছে, নির্বাচনের চাপে ইউনূস পদত্যাগ করবেন। কেউ কি উনাকে পদত্যাগ করতে বলেছে। আমরা কেউ বলিনি।”  

অন্তবর্তীকালীন সরকারেরও সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রফেসর ইউনূসকে শ্রদ্ধা করি, তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা। কিন্তু তার পুরো ক্যাবিনেটে একটা পলিটিক্যাল লোক নাই। রাষ্ট্র একটা বড় পলিটিক্যাল প্রতিষ্ঠান। একজন সমাজকর্মী-এনজিও কর্মী দিয়ে রাষ্ট্র চলবে না।”

‘‘রাষ্ট্র চালাইতে হলে রাজনীতিবিদদের দরকার আছে। আমরা যেটা শুরু থেকে বলে আসছিলাম যে, হয় অভ্যুত্থানের অংশজনদের নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমত্যের সরকার করেন অথবা এই যে উপদেষ্টা পরিষদ আছে এটা পূনর্গঠন করেন।”

‘ইশরাকের শপথ না দেয়ার কারণ এক উপদেষ্টা’

নুর অভিযোগ করে বলেন, ‘‘এই যে, দেখেছেন ইশরাক হোসেনকে আদালত রায় দিয়েছে মেয়র হিসেবে কিন্তু উপদেষ্টা তাকে বসতে দেবে না। কারণ উত্তরে তার লোক বসাইছে পয়সা পাতি নিয়া, কাজ-টাজ ভাগ কইরা দিয়া তার নেতা-কর্মীদেরকে তৈরি করা।”

‘‘আর দক্ষিণ ঢাকাও তাদের লাগবে। ইশরাক বসলে তো তাদের সমস্যা। কারণ ইশরাক বিএনপি করে, বিএনপির লোকের আধিপত্য থাকবে। এই যে, ইশরাক সমর্থকরা ৫-৭ দিন আন্দোলন করল?”

সংগঠনটির প্রধান জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সভাপতিত্বে ও বিএলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশের জাসদ সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ প্রমূথ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

রিফাত

×