
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বাংলাদেশ অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটরিয়ামে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের জন্য বিএনপি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। বিএনপি ক্ষমতা চায়, কারণ, আমরা তো ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করি। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, জনগণের ভোটের মাধ্যমে আমরা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাই। তবে আদৌ অল্প সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া সম্ভব কি না তা অনিশ্চিত। ১০ বছর যদি সংস্কার চলে, তা হলে কি দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের দিয়ে দেশ চলবে? তিনি বলেন, মানবিক করিডর দেওয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কারো সঙ্গে কথা বলেননি।
ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে লড়ছি। আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া। তা আমরা এখনো ফিরে পাইনি। অনেকে ভাবছে আমরা স্বস্তির মধ্যে আছি। কিন্তু রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় আছি। প্রতিদিন নতুন শর্ত যুক্ত হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম জটিলতা বাড়াচ্ছে। আমরা সংস্কারবিরোধী নই, ২০২২ সালে রাষ্ট্র মেরামতে সংস্কারের রূপরেখা বিএনপিই প্রথম দিয়েছে।
ফখরুল বলেন, প্রমাণ হয়ে গেছে বিএনপিই দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। তাই বিএনপির হাতেই দেশ নিরাপদ। অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এ সময় অর্থনীতি ও বিনিয়োগে কি পরিবর্তন হয়েছে? নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছে না। মূল্যস্ফীতি কমেনি, ব্যাংকের অবস্থা ভালো হয়নি। শিক্ষার সবচেয়ে করুণ অবস্থা। স্বাস্থ্য খাত ও হাসপাতালগুলোর করুণ পরিস্থিতি। তবে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য চাই, কারণ আমরাই তাদের বসিয়েছি। কিন্তু এমন কিছু করবেন না যা জনগণের বিরুদ্ধে যায়।
ফখরুল বলেন, আমাদের লড়াইয়ের মূল বিষয় গণতন্ত্রের সংস্কার। দুর্ভাগ্য আমাদের আমরা তা এখনো অর্জন করতে পারিনি। প্রতি দিন নতুন নতুন তত্ত্ব হাজির করা হচ্ছে, সময় নেওয়া হচ্ছে।
কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে আমরা মনে হয় সংস্কারবিরোধী। অথচ সংস্কার শুরুটাই করেছি আমরা।
ফখরুল বলেন, এখনো ৯০ শতাংশ আমলা ফ্যাসিস্টদের দোসর। অনির্দিষ্টকালের জন্য অনিশ্চিত অনির্বাচিত সরকার মানুষের জন্য উপকার আসতে পারে? তবে মঙ্গলবার প্রমাণ হয়েছে, খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। এটাও প্রমাণ হয়েছে বিএনপির হাতে দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র নিরাপদ। আমরা এমন সরকার গঠন করতে চাই যাতে জনগণের সমস্যা সমাধান করা যায়।
ফখরুল বলেন, সরকার অর্থনীতির জন্য কি করেছে? অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আগামীতে আরও হবে। বিনিয়োগ আসছে না, বিদেশীরা বলছে, নির্বাচিত সরকার ছাড়া তারা বিনিয়োগ করবে না। মুদ্রাস্ফীতি কমছে না। যারা এতদিন ব্যবসা করতে পারেনি, তাদের জন্য সরকার কিছু করেনি।
কাউকে না জানিয়ে করিডর দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, যেখানে আরাকান আর্মির কোনো সরকারই নেই। যদি দেওয়ার প্রয়োজন হয় দেওয়া হবে। আমরা মানবতার পক্ষে। তবে তা রাজনৈতিক দল এবং দেশের জনগণকে নিয়ে দেওয়া হবে। দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা কখনোই বাধা হব না বরং সামনে এসে দাঁড়াব। তবে দেশের মানুষের পক্ষে যায় না এমন কিছু কোনোদিনও করা যাবে না।
বিএনপির কাছেই এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিরাপদ বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্যই এত বছর লড়াই করেছি, কিন্তু দুঃখজনক হলো কাক্সিক্ষত গণতন্ত্র এখনো ফিরে পাইনি। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফিরে আসায় পুরো জাতি আলো দেখতে পেয়েছে।
নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হলে কোথাও যেন ভুল না হয়, গণতন্ত্র যাতে ভূলুণ্ঠিত না হয়, সে জন্য সবাইকে কথা বলতে হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদিনের সভাপতিত্বে এ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্য সিনিয়র আইনজীবীরাও বক্তব্য রাখেন।