
ছবি:সংগৃহীত
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে উপদেষ্টা পরিষদ, নির্বাচন, এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তার মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, "উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে, কিন্তু সেখানে অনেক ফ্যাক্টর এবং ব্যক্তি রয়েছে। একজন ব্যক্তি উপদেষ্টা পরিষদে যতই ভালো চিন্তা করুক না কেন, বাকিরা যদি তাকে সহযোগিতা না করে, তাহলে তিনি ভালো কাজ করতে পারবেন না।"
তিনি আরও যোগ করেন, "ডিসেম্বরে নির্বাচন আসলেই হবে কিনা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মার্চ পর্যন্ত সময় টেনে নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু মার্চেও নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস এখনো পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করেননি। তিনি 'হতে পারে', 'যদি', 'তবে'—এ ধরনের অস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করছেন। একজন নোবেল বিজয়ী হিসেবে তার কাছ থেকে আমরা এ ধরনের অস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করি না। তিনি যদি মার্চে নির্বাচন করতে চান, তাহলে মার্চের কত তারিখে তা হবে, সেটা ঘোষণা করুন। ডিসেম্বরে করতে চাইলে ডিসেম্বরের কত তারিখে হবে, সেটাও ঘোষণা করুন। কিন্তু তিনি তা করছেন না।"
রাশেদ খান বলেন, "আমার মনে হয়, তার আশপাশের লোকেরা তাকে বলছে যে, 'স্যার, কি দিয়ে কি হয় বলা যায় না, আপনি এখনই তারিখ ঘোষণা করবেন না।' তার আশপাশের অনেক ব্যক্তিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, কারণ দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আছি। আমার মনে হয়, তাদের মধ্যে কেউ কেউ ষড়যন্ত্র তৈরি করার চেষ্টা করছে।"
তিনি ২০০৭-২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, "যখন ফখরুদ্দিন আহমেদ ও মইনুদ্দিনের সরকার এসেছিল, তখন মানুষ তাদের মাথায় তুলে নাচছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে সমালোচনা শুরু হলো এবং শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের মুখে পড়ল। আমার মনে হয়, এই সরকারের অবস্থাও একই রকম। ডক্টর ইউনুস নিজে চাইলেও সহজে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে পারছেন না।"
রাশেদ খান গণ অধিকার পরিষদ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, "আমাদের দল নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের সঙ্গে কারা যুক্ত হচ্ছেন, আমরা কোন পথে হাঁটছি, নতুন দলের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন কিনা—এসব নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। বিএনপি ও জামাত একসময় একসাথে ছিল, কিন্তু এখন তাদের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক। গণ অধিকার পরিষদ কোথায় অবস্থান করছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিএনপির অ্যাক্টিং চেয়ারপার্সন তারেক রহমান কয়েকজন নেতাকে বার্তা দিয়েছেন যে, তাদেরকে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করতে সহযোগিতা করতে হবে। কিন্তু গণ অধিকার পরিষদ নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে, তা নিয়ে আমি বলব, রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। কখন কী হয়, তা এখনই বলা যায় না।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের একটি কমন শত্রু রয়েছে, সেটা হলো আওয়ামী লীগ। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি কোনোভাবে সুযোগ পায়, তাহলে তারা বিরোধী দল হবে। কিন্তু গণতন্ত্রের কথা বললে, আওয়ামী লীগের যদি জনসমর্থন থাকে, তাহলে তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত। আপনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু তাদেরকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া উচিত নয়।"
রাশেদ খান আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, "আওয়ামী লীগের সময় ১৫-১৬ বছর আমরা ভয়ের মধ্যে ছিলাম। এখনো সেই ভয় কাটেনি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, কিন্তু ক্ষমতায় থাকা লোকেরা তা মনে রাখছে না। আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মী, সাধারণ ভোটার ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত নয়। তবে যারা অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।"
তিনি শেষে বলেন, "আওয়ামী লীগ গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত নয়। জনগণের পক্ষ থেকে এই দাবি উঠছে।"
আঁখি