ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

তুরস্কের একে পার্টির আদলে নতুন দল গড়তে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা

প্রকাশিত: ১৩:০২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তুরস্কের একে পার্টির আদলে নতুন দল গড়তে চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা

বাংলাদেশের ছাত্র নাগরিকদের নতুন দল কেমন হবে? জানিয়েছেন দলটির মুখপাত্ররা।তুরস্কের একে পার্টির আদলে রাজনৈতিক দল চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা।


একে পার্টির মধ্যে এমন কি বৈশিষ্ট্য আছে যা ছাত্রদের আকৃষ্ট করল?ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিবিরের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, "এই পার্টিগুলো কিভাবে করে জনগণের কাছে গেল, জনগণের ভাষা বোঝার ক্ষেত্রে তারা কোন ধরনের ট্যাকটিক্স ফলো করেছে, তাদের গঠনতান্ত্রিক কাঠামোটা কেমন- এই জায়গাগুলো আমরা স্টাডি করছি এবং বোঝার চেষ্টা করছি যে ওই অঞ্চলের তরুণদের বোঝার ক্ষেত্রে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা কি থিংকিং নিয়ে এসেছে যাতে করে ওই থিংকিংটা ওই অঞ্চলের লোকজন খুব সহজে গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে রাজনৈতিকভাবে শাসন ক্ষমতার দায়িত্ব দিয়েছে।"


তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের একে পার্টি জন্মের পর থেকেই ক্ষমতায়। প্রায় ২৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় আছে দলটি। কিংস পার্টি না হলেও সরকারের একাংশে সহযোগিতায় গঠিত হয় একে পার্টি। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অনেকেই ছিলেন সরকারের মন্ত্রী বা এমপি। সরকার থেকে পদত্যাগ করে দলে যোগ দেন এবং নির্বাচনের পর আবারো ক্ষমতায় আসেন।


জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একে পার্টি এখন তুরস্কের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। ২০০১ সালের ১৪ আগস্ট, তুরস্কের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেট পার্টি এবং ট্রু পাথ পার্টির নেতাদের নিয়ে গঠিত হয় একে পার্টি। 
১৯৮৩ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত একটানা ১০ বছর এবং এরপর ১৯৯৯ থেকে ২০০২ পর্যন্ত তুরস্কের ক্ষমতায় ছিল ডেমোক্রেট পার্টি। আর মাঝখানে পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল ট্রু পাথ পার্টি। এর মধ্যে ডেমোক্রেট পার্টি ছিল মধ্যপন্থী দল, আর পাথ পার্টি ছিল ডানপন্থী। দুই দশক ধরে ক্ষমতার ভাগীদার এই দুই দলের নেতাদের সাথে ডানপন্থী আরো কিছু নেতা মিলে গড়ে তোলেন একে পার্টি।


একে পার্টির সাথে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের এখানেই পার্থক্য, তারা যাদের নিয়ে দল গড়তে যাচ্ছে, গত ২০ বছরে তারা কেউ ক্ষমতায় ছিল না। বড় রাজনৈতিক নেতা বা রাজনৈতিক ফিগার বলতে যা বোঝায়, সে অর্থে তেমন কোন নেতা ছাত্র নাগরিকদের নতুন দলে নেই।


জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি বা একে পার্টির রাজনৈতিক আদর্শ ইনসাফ বা ন্যায়বিচার। ছাত্ররাও বলছেন তাদের দলেরও মূল বৈশিষ্ট্য হবে ইনসাফ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, "মানুষের হোক, বাংলাদেশের নাগরিকের হোক এবং দেশের মানুষ প্রজা থেকে নাগরিক হয়ে উঠুক, যদি মানুষ মনে করে দেশের নাগরিক মনে করে আমরা বিবর্জিত হয়েছি, ঠিক যেহেতু আমাদের কাছে উদাহরণ হিসেবে আওয়ামী লীগ রয়েছে, সেই উদাহরণটিকে আমরা মনে রাখতে চাই, ঠিক একইভাবে আমরা যাব।"


ক্যাডার বা গ্রেড ভিত্তিক সদস্য কাঠামো একে পার্টিকে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মজবুত ভিত্তি দিয়েছে, একইভাবে ছাত্র নাগরিকরাও তৃণমূলের সংগঠন গড়ায় বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তারা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনে করতেও আগ্রহী।


একে পার্টির এক অনন্য বৈশিষ্ট্য ইনক্লুশন, ভিন্ন মতাবলম্বীদের মত প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে দলটি। দলের অধিকাংশ নেতা ইসলামী অনুসারী হলেও তারা তুরস্ককে ইসলামী রাষ্ট্র করেননি। সংবিধানের স্যাকুলার আদর্শ এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রকে আলাদা রাখার সাংবিধানিক বিধান কখনো রেখেছে একে পার্টি। একে পার্টির গঠনতন্ত্রে আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল আতারতুকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।


বিভেদের মধ্যে ঐক্য খুঁজে নেয়ার কারণে দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে তুরস্কের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে দলটি। অথচ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একে পার্টির আদলে গড়ে ওঠা অন্য অনেক দল হারিয়ে গেছে। আরব বসন্তের পর মিশর, তিউনিশিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন দেশে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে। 


এর মধ্যে তুরস্কের একে পার্টির আদলে মিশরের জাস্টিস পার্টি, লিবিয়ায় জাস্টিস পার্টি, তিউনিশিয়ায় ইন্নাদাগদা, পার্টি ইয়েমেনের ইসলাম পার্টি উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে মিশরের জাস্টিস পার্টি ক্ষমতায়ও যায় কিন্তু দু বছরের মাথায় সে সরকারের পতন ঘটে। অন্য দেশগুলোতেও এক দুই বছর পর দলগুলো নিষিদ্ধ বা নির্যাতনের মুখোমুখি হয়।


সূত্র:https://tinyurl.com/3dh63hwk

আফরোজা

×