![বিদেশে যেতে খালেদাকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে বিদেশে যেতে খালেদাকে জেলে গিয়ে আবেদন করতে হবে](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/1-2309301745.jpg)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন
বাংলাদেশের ওপর মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বুধবার তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্য তার (খালেদা জিয়া) সাজা স্থগিত করে বাড়িতে থাকার ও দেশে চিকিৎসা নেওয়ার যে অনুমোদন কার্যকর আছে তা বাতিল করে, জেলে গিয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে হবে। কারণ আদালতের কাজের ওপর আমাদের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই।
সাক্ষাৎকারে ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার এটাই প্রশ্ন, কথা নেই, বার্তা নেই, হঠাৎ ভিসা স্যাংশন দিতে চাচ্ছে কী কারণে? আর মানবাধিকারের কথা যদি বলে বা ভোটের অধিকারের কথা যদি বলে... আমরা, আওয়ামী লীগ; আমরাই তো এদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছি। আমাদের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে, এই ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য। খবর ওয়েবসাইটের।
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, তার জন্য যত রকম সংস্কার দরকার, সেটা আওয়ামী লীগ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করাসহ ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ এই স্লোগানও আমার দেওয়া। আমি এভাবে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছি। কারণ আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় স্বৈরশাসকরা দেশ শাসন করেছে। তাদের সময় সাধারণ মানুষের ভোট দিতে হয়নি। তারা ভোটের বাক্স ভরে নিয়ে ফলাফল ঘোষণা করে দিয়েছেন। এরই প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন, সংগ্রাম করে আজ নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে আসতে পেরেছি।
এখন মানুষ তার ভোটের অধিকার সম্পর্কে অনেক সচেতন। সেটা আমরা করেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সময় কোনো কাজ ‘অতিরিক্ত’ করতে পারে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা, সেটা র্যাব হোক, পুলিশ হোক বা অন্য যে কোনো সংস্থা হোক, তারা অন্যায় করলে আমাদের দেশে সেটার বিচার হয়। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে, আমাদের দেশে তার বিচার হয়। এই বিচারে কেউ রেহাই পায় না। অনেক সময় তারা কোনো কাজ অতিরিক্ত হয়তো করে, করতে পারে। কিন্তু করলে সেটা আমাদের দেশের আইনেই বিচার হচ্ছে। যেখানে এমন বিচার হচ্ছে, এমন ব্যবস্থা আছে সেখানে এই স্যাংশন কী কারণে?’
২০০৯ এ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন, প্রত্যেকটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব নির্বাচনে মানুষ তার ভোট দিয়েছে স্বতস্ফূর্তভাবে। এই নির্বাচনগুলো নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তবতাটা কী? বাংলাদেশের মানুষ তার ভোটের অধিকার নিয়ে সব সময় সচেতন। কেউ ভোট চুরি করলে তাদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না।’
উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিলেন। সে কিন্তু দেড় মাসও টিকতে পারেনি। ওই বছরের ৩০ মার্চ জনগণের রুদ্র রোষে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। আবার ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা করেছিল। সেই ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন করে সে যখন সরকার গঠনের ঘোষণা দিল... এর পর জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। সেই নির্বাচন বাতিল হয়ে গেল।
কাজেই আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু এখন ভোট সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। কাজেই একটা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে-এটা তো আমাদেরই দাবি ছিল। এবং আন্দোলন করে আমরাই সেটা প্রতিষ্ঠিত করেছি। তো আজ তারা স্যাংশন দিচ্ছে, আরও দেবে; দিতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের যে অধিকার; তাদের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার অধিকারসহ সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল, বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, এখন মানুষের সেরকম হাহাকার নেই, এমনকি আমাদের যে বেকারত্ব সেটাও কিন্তু কমিয়ে এখন মাত্র তিন শতাংশ। সেটাও তারা কাজ করে খেতে পারেন।’
বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, ওয়াইফাই কানেকশন সারা বাংলাদেশে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা ঘাটের অভূতপূর্ব উন্নয়ন আমরা করে দিয়েছি। মানুষ যেন কাজ করে খেতে পারে। আমাদের কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং, আমরা এগুলোর ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছি। এভাবে দেশের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেখানে এভাবে স্যাংশন নিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো...। ঠিক আছে, স্যাংশন দিলে (বাংলাদেশীরা) আমেরিকা আসতে পারবে না, আসবে না। আমেরিকায় না আসলে কী আসবে-যাবে? আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে।’ কেন আমেরিকা স্যাংশন দিচ্ছে, তা জানেন না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশী বিদেশী মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনার যে অভিযোগগুলো করেছে, সে ব্যাপারে তার সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারে তিনি সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তারও জবাব দেন। ৩৫ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বিরোধীদলগুলোর দাবিকে নাকচ করে দিয়ে বলেন, এ ব্যবস্থায় ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিরোধীদলগুলোর বিশেষ করে প্রধান বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরাধ করলে মামলা হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার সংকট নিয়েও তিনি প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আশা ॥ ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ দল ভারতে অবস্থান করছে। একটি অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রোমোতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্রিকেটারদের প্রতি জননেত্রীর মমত্ববোধের কথা জানিয়েছেন। আর বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলকে নিয়ে ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শুভ কামনা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন, সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে খেলবে এবং নিজেদের সবটুকু ঢেলে দিয়ে এমনভাবে খেলবে যেটি দেশের সম্মানটা বজায় রাখবে।
আগামী ৫ অক্টোবর মর্যাদার ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু হবে। বাংলাদেশ অবশ্য প্রথম ম্যাচ খেলবে ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। সেই ম্যাচের আগে প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘আমরা সবসময় আশা করি যে বিশ্বকাপে আমরা ভালো খেলা দেখাতে পারব। আমি তাদের বলব যে বাংলাদেশের সম্মানটা যেন বজায় থাকে। তারা সেভাবে সবটুকু ঢেলে দেবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে খেলবেÑ সেটাই আমি চাই। আমার সঙ্গে সবসময় তাদের যোগাযোগ থাকে।’ আর প্রধানমন্ত্রী ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এবং ক্রিকেটারদের জন্য মমত্ববোধের বিষয়টি সবসময়ই দেখা গেছে।
অধিনায়ক সাকিবও বলেছেন, ‘শুধু আমাকে না, আমাদের পুরো দলকেই উনি অনেক অনুপ্রাণিত করেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন একটা জিনিসের ব্যাপারে আপনার আগ্রহ দেখাবে, স্বাভাবিকভাবেই এই জায়গাতে সবারই আগ্রহটা অনেক বেড়ে যায়। শুধু ভালো সময়ে না, খারাপ সময়েও অনেক বেশি খোঁজ-খবর রাখেন। যেটা হয়তো বাইরের মানুষরা জানতে পারে না। কিন্তু আমরা এটা খুব ভালোভাবেই জানি।’ এই ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এবার সর্বোচ্চ সেরা খেলাটা দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি তাদের বলব যে বাংলাদেশের সম্মানটা যেন বজায় থাকে। তারা সেভাবে সবটুকু ঢেলে দেবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে খেলবে- সেটাই আমি চাই।
আমার সঙ্গে সবসময় তাদের যোগাযোগ থাকে। আসার আগেও ওদের সঙ্গে কথা বললাম, প্লেয়ারদের সঙ্গে যারা সংগঠক তাদের সঙ্গেও কথা বলি। আমি সবসময় খেয়াল রাখি, খেলাধুলায় যাতে সবসময় আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করে, সেদিকে আমার দৃষ্টি থাকে। বিশ্বকাপে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, এটা সবচাইতে ভালো দিক। ভালোভাবে খেলতে পারলে, ভালো রেজাল্ট করতেও পারবে। আমি আশাবাদী সবসময়।’ সাকিবও বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আশা করব এই বিশ্বকাপেও আমরা ভালো কিছু করব এবং তার সমর্থনটা সবসময় আমাদের ভেতরে থাকবে।’