
ডলার সঙ্কট
বাড়ছে রেমিটেন্স
ডলার সঙ্কটের মধ্যেই চলতি আগস্ট মাসের ৭ দিনেই প্রবাসীরা ৫৫ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ৯৫ টাকা ধরে) এই অর্থের পরিমাণ ৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন এসেছে ৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। এটি গত বছরের আগস্টের একই সময়ের চেয়ে ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।
গত বছরের আগস্ট মাসের ৭ দিনে (১ থেকে ৭ আগস্ট) ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। রেমিটেন্সের এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে এই পরিমাণ আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র থেকে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসীরা ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার (২.১ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। যা ছিল আগের ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রতি ডলার ৯৫ টাকা হিসাবে টাকার অঙ্কে ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশে রফতানি আয়, মাথাপিছু আয় বাড়লেও সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে (জুলাই-২১ থেকে জুন-২২) রেমিটেন্স এসেছে ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এটি ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার।
চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব
এবার দেশের বাজারে চিনির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রিফাইনারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এ্যাসোসিয়েশন। একই সঙ্গে আমদানি শুল্ক মওকুফ এবং ব্যাংক রেটে ডলার চেয়েছে।
এ সংক্রান্ত একটি চিঠি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে দিয়েছেন এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান। বুধবার (১০ আগস্ট) চিঠিটি দেয়া হয়। তবে কেজিতে কত টাকা বাড়াতে চাওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করা হয়নি। এতে বলা হয়, চিনির রিফাইনারিগুলো বিলম্বে মূল্য পরিশোধের সুবিধা নিয়ে ঋণপত্র খোলার পর মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
ফলে বিপুল লোকসান হচ্ছে কোম্পানিগুলোর। অপরিশোধিত চিনি আমদানির জন্য যখন ঋণপত্র খোলা হয়, তখন ডলারের দাম ছিল ৮৩-৮৫ টাকা। কিন্তু এখন ওইসব এলসির মূল্য পরিশোধের সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আমাদের কাছ থেকে প্রতি ডলার ১১৫ টাকা হারে বিনিময়মূল্য আদায় করছে। এতে চিনি আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে বাড়তি অর্থ।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আগে টনপ্রতি চিনি আমদানিতে শুল্ক দিতে হতো ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। ডলারের দাম বাড়ায় এখন শুল্ক দিতে হচ্ছে টনপ্রতি ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা।
গম আসবে রাশিয়া থেকে
বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় পরিমাণ গম রফতানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। প্রাথমিকভাবে ৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গত বৃহস্পতিবার এক বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র্র মজুমদার ও বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভিকেনতেভিচ মান্টিটস্কি এ বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে উভয় পক্ষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও গম রফতানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ভিকেনতেভিচ মান্টিটস্কি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা আছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে রাশিয়া ভূমিকা রাখতে আগ্রহী।’
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক চমৎকার। এ সম্পর্ক বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হচ্ছে। রাশিয়ার গম রফতানির আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
কার্ডে ডলার নেয়ার পরামর্শ
আমদানির তুলনায় রফতানি ও রেমিটেন্স আসছে না, তাই ডলার সঙ্কট বলে জানালেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র। ব্যাংক ও খোলাবাজারে দরের উর্ধগতি ও সরবরাহ সঙ্কটের এই সময়ে বিদেশ ভ্রমণে কার্ডের মাধ্যমে ডলার নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় এই পরামর্শ দেন। ১১ আগস্ট ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে নগদ অর্থে ডলারের দরের পার্থক্য ১০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। ফলে কিনে ডলার নেয়ার চেয়ে কার্ডে নেয়াই সাশ্রয়ী।
গ্রাহকদের কাছে নগদ অর্থে কাগুজে ও কার্ডে দুই ভাবেই ডলার বিক্রি করে ব্যাংক। কাগুজে ডলার কিনতে যেখানে খরচ হয়েছে ১০৯.৫০ টাকা পর্যন্ত, সেখানে ব্যাংক কিংবা কার্ডের মাধ্যমে ডলার কেনায় ৯৮ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছিল।
বিদেশে ভ্রমণে কার্ডে ডলার নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে সিরাজুল বলেছেন, ‘প্রতি বছর যে পরিমাণ পর্যটক দেশে আসছে, তার চেয়ে বেশি যাচ্ছে আমাদের দেশ থেকে। বিশেষ করে শিক্ষা, চিকিৎসা, সেমিনার ও ভ্রমণে তারা ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। ‘তারা হাতে (কাগুজে) ডলার না নিয়ে কার্ডে নিলে খরচ অনেক কম পড়বে। এখন সব জায়গাতেই অনলাইন মাধ্যম বড় হচ্ছে। বিদেশ ভ্রমণে কার্ডের মাধ্যমেও ডলার নিয়ে যাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে খোলাবাজার ও ব্যাংকের চেয়েও তুলনামূলক কম দরে পাবেন তারা।’