ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিদেশে উচ্চ শিক্ষার খুঁটিনাটি

মো. রফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২১:০১, ১০ জুন ২০২৫

বিদেশে উচ্চ শিক্ষার খুঁটিনাটি

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুমুখীনীতি, অনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক গোষ্ঠীবদ্ধ পড়ালেখার প্রভাব, স্কুল-কলেজের বাইরে কোচিং কেন্দ্রিক শিক্ষকতা, অসম ও অদূরদর্শী  শিক্ষা ব্যবস্থাপনা- ইত্যাদি কারণে অনেক মেধাবী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত জায়গায় যেতে পারছে না। আবার অনেকে  কেবল  আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে পারছে না।

এমন বাস্তবতায় বিগত দুই দশক ধরে এ দেশের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়- ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় এচঅ-৫ পেয়েছে মোট ১,৪৫,৯১১ জন। সেখানে পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের সিট সংখ্যা ৫১,১৫২টি। সুতরাং মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও কেবল আসন সংখ্যা স্বল্পতার কারণে প্রায় ১ লাখ এচঅ-৫ পাওয়া ছাত্রছাত্রী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে অভিভাবক এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে পড়ালেখা করতে যাওয়ার প্রবণতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পায়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমেই আসে কোন দেশ এবং কোন বিশ^বিদ্যালয় পড়ালেখার মান ও অর্থনৈতিকভাবে বন্ধুসুলভ। এক্ষেত্রে ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউকে, জামার্নি, মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিশ^বিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী বিবেচনায় আনে যে বিষয়গুলো তা হলো- বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা, চাকরির ক্ষেত্রে- প্রারম্ভিক ন্যূনতম মাসিক স্যালারি ৩-৪ লাখ টাকা, বিশে^র অনেক দেশের মানুষের সংস্কৃতি জানা, উন্নত দেশে স্থায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে চীন এগিয়ে থাকা, গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা, ফরেন রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা, মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলোতে অধিক বেতনে চাকরির সুযোগ, দ্রুত সময়ে স্টাবলিস হওয়া।
তাই বিদেশে পড়ালেখা করতে যাওয়ার আগে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই যেসব প্রশ্ন করে থাকে তা হলো যেমন- কোনো দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের ঞঁরঃরড়হ ঋববং কত? কোর্স কত দিনের? বসবাস ও খাওয়া বাবদ কত টাকা  লাগবে? খ-কালীন চাকরি করা যাবে? যদি যায়, তবে কত ঘণ্টা? পড়ালেখা শেষ করে কি বিষয়ভিত্তিক চাকরি পাওয়া যাবে? পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর কতদিন পর্যন্ত থাকা যায়? স্থায়ী হওয়া যাবে কি? যদি যায়, তবে কত সময় লাগবে? আমি কি ওই দেশের নাগরিককে বিয়ে করতে পারব? যদি পারি, তবে অতিরিক্ত কি কি সুবিধা পাব? ছাত্র থাকা অবস্থায় কি দেশে আসতে পারব? পড়ালেখা করে কি টিউশন ফি ম্যানেজ করা সম্ভব? পার্ট-টাইম জব কত ঘণ্টা করা যায়?

আমি যদি নির্ধারিত ঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করি, পরবর্তীতে ভিসা বর্ধিত করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে কি-না? ছাত্রছাত্রীদের জন্য কি ধরনের ঔড়ন আধরষধনষব? ঞঁরঃরড়হ ঋববং দিতে দেরি হলে কি বের করে দেবে? আমি যে বিষয় নিয়ে যাচ্ছি, বিশ^বিদ্যালয়ে যাওয়ার পর সে বিষয় পরিবর্তন করে অন্য বিষয় নিতে পারব?
উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর সদুত্তর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা নেমে যায় বিদেশী বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিযোগিতায়। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ দেশে বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য যে ডকুমেন্টসগুলো চাওয়া হয় তা হলোÑ পাসপোর্ট, সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, মার্কসশিট, আপনার পক্ষে ২ জন শিক্ষকের প্রত্যয়নপত্র, এসওপি, ইংলিশ দক্ষতার প্রমাণপত্র (আইইএলটিএস, টোফেল, পিটিই, ওআইইটিসি, জিআরই, ডুয়ালিংগ), ব্যাংক সলভেনসি, ছবি, নমিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বীÑ মর্মে সার্টিফিকেট, বায়োডাটা।

এছাড়াও কিছু কিছু দেশের জন্য অতিরিক্ত কিছু ডকুমেন্ট প্রয়োজন হয়Ñ যেমন অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে GTE Form, Health Certificate, নিউজিল্যান্ডের ক্ষেত্রে বার্থ সার্টিফিকেট এবং স্পন্সরের কাগজপত্র, যেমন- ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, জব/ব্যবসা সংক্রান্ত কাগজপত্র, টিন+ট্যাক্স পেপার (গত ২-৩ বছরের), জমির দলিলের ফটোকপি, স্পন্সরের ছবি, এনআইডি, পাসপোর্ট, ইনকামের উৎস (Source of Fund)।
তবে মনে রাখতে হবে, যদি কোনো শিক্ষার্থী তার সম্পূর্ণ Tuition Fees একসঙ্গে পেমেন্ট দেয়, যেমনÑ ইউকে এর ক্ষেত্রে অনার্স ৩ বছরের টিউশন ফি অথবা মাস্টার্স ১ বছরের টিউশন ফি একসঙ্গে পরিশোধ করে দেয়, তবে তার জন্য অর্থসংক্রান্ত ডকুমেন্টারি প্রমাণপত্র বেশি কিছু দরকার হয় না। তাই যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিত ‘টিউশন ফি’ একবারে দিয়ে দেওয়া। এতে ভিসা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। এখন দেখা যাক কোনো দেশের টিউশন ফি কত? ‘টিউশন ফি’ মূলত নির্ভর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেডিং ও সাবজেক্টের ওপর এবং এটি বার্ষিক হিসাবে গণনা করা হয়। যেমন ইউকে- ১২০০০-৪০০০০ পাউন্ড, ইউএসএ- ১৪০০০-৪০০০০ ডলার, অস্ট্রেলিয়া- ১২০০০-৪০০০০ ডলার, কানাডা- ১৫০০০-৫০০০০ ডলার।
এশিয়া, ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে কম। যেমন- হাংগেরি ১৫০০-৫০০০ ইউরো, পোল্যান্ড ২০০০-৪০০০ ইউরো, নরওয়ে ১০০০-২০০০ ইউরো, চেক রিপাবলিক ১০০০-৪০০০ ইউরো, আর্জেন্টিনা ১০০০-৫০০০ ইউএসডি, মেক্সিকো ১০০০-৩০০০ ইউএসডি, তাইওয়ান ১৫০০-৪০০০ ইউএসডি, জাপান ৫০০০-৭০০০ ইউএসডি। টিউশন ফি ছাড়াও আরও দুটি বড় খরচ- সেগুলো হলো বাসস্থান ও খাবার। ইউকে তে লন্ডনের বাইরে থাকা খাওয়া বাবদ ৫৫০-৮০০ পাউন্ড আর লন্ডনের ভেতরে ৬০০-৯০০ পাউন্ড জনপ্রতি খরচ হয়। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সম্মিলিতভাবে একটি বাসা ভাড়া করে সেখানে শেয়ারিং করে থাকে।
বাস্তবতা হলো- বাংলাদেশ থেকে যেসব ছেলেমেয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে পাড়ি জমায় তাদের অধিকাংশই কেবল প্রথম বর্ষের খরচ বাড়ি থেকে নেয়। বাকি সময়গুলোর টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচ নিজ থকে ইনকাম করে চালায়। যেহেতু বছরে ৯ মাস ক্লাস হয়, সেহেতু বছরের বাকি ৩ মাস তারা ফুল টাইম কাজ করে পরের বছরের টিউশন ফির একটা বড় অংশ ইনকাম করে ফেলে। এছাড়া সাপ্তাহিক ২০ ঘণ্টাতো আছেই। অনেক ছাত্রছাত্রী বিশ^বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীনও সময়ও ৩০-৪০ ঘণ্টা কাজ করে প্রতি সপ্তাহে। এটা এজন্য সম্ভব হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পর্যায়ে সপ্তাহে ৩-৪ দিন ক্লাস থাকে এবং মাস্টার্স পর্যায়ে ২-৩ দিন ক্লাস থাকে।
ইউকে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে পার্ট টাইম জবের ক্ষেত্রে পপুলার হলো-কেএফসি, ম্যাক ডোনাল্ড, বার্গার কিং, টেসকো, আজদা, ওয়ালমার্ট, ফুড ডেলিভারি, বাঙালি রেস্টুরেন্ট, ফ্রি লিফলেট ও পেপার বিলি ইত্যাদি। তবে যারা একটু বুদ্ধিমান তারা বাংলাদেশে থাকতেই কফি মেকিং ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের ওপর ডিপ্লোমা করে। ফলে তারা বিভিন্ন কফি সপে, আবাসিক হোটেলে কাজ পায়, যার আওয়ারলি পেমেন্ট অনেক ভালো। বাংলাদেশ থেকে যারা ফার্মেসি ওষুধ বিক্রির সার্টিফিকেট কোর্স করে ৬ মাস কিংবা ১ বছর মেয়াদি, তারা বিভিন্ন ওষুধের দোকান, যেমন ইউকে ‘বুষ্ট’এ জব পায়।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ব্যাংক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, তাদের মধ্যে- সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এসবিসি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ অন্যতম। বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এম পাওয়ার বেশ পপুলার। স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা যেসব পপুলার অর্গানাইজেশনে যোগাযোগ করতে পারে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ডিএএডি- জার্মানি/এইএক্সটি- জাপান, ইপিএইচ-জুরিখ- সুইজারল্যান্ড, কেএআইএসইটি- সাউথ কোরিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে নানা রকম চেরিটি অর্গানাইজেশন আছে, যারা ছাত্রদের ফান্ডিং করে।
আমাদের দেশের ছাত্রছাত্রীর স্টাডি গ্যাপ থাকে। সেক্ষেত্রে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্টাডি গ্যাপ গ্রহণযোগ্য কি-না? এটি নির্ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর। তবে ইউরোপের অধিকাংশ বিশ^বিদ্যালয় অনার্স কোর্সের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এইচএসসি পাস করার পর সর্বোচ্চ ২ বছর মাস্টার্স কোর্সের জন্যÑ অনার্স পাস করা যায় সর্বোচ্চ ৫ বছর। কোনো কোনো বিশ^বিদ্যালয় ৭-১০ বছর পর্যন্ত গ্রহণ করে। তবে তার জন্য অবশ্যই শক্তিশালী ও যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে হয়। তবে ইউএসএর ক্ষেত্রে অধিক গ্যাপ গ্রহণীয়।

আবার বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ে আছে যাদের এইচএসসি রেজাল্ট অথবা অনার্স রেজাল্ট ভালো না। তারাও কিন্তু বিদেশে উচ্চ শিক্ষা করতে যাচ্ছে অত্যন্ত সহজ পন্থায়। কীভাবে? বাংলাদেশে কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের যেমন ইউকে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা এবং ইউএসএসর বিশ^বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশে ফাউন্ডেশন ও প্রি-মাস্টার্স কোর্স করায়। ছাত্রছাত্রীরা এখানে সফলতার সঙ্গে কোর্সগুলো করে পরবর্তীতে যে বিশ^বিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশন অথাব প্রি-মাস্টার্স কোর্স করল, সেই বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে। এতে করে বিদেশে গিয়ে ফাউন্ডেশন ও প্রি-মাস্টার্স করতে যে খরচ হয়, তার অর্ধেকের কম খরচ হয় এখানে।
বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার একটি নামকরা বিশ^বিদ্যালয় আছে (বিশ^ র‌্যাঙ্কিং ১০০-এর মধ্যে) তারা কেবল প্রথম বর্ষ এখানে সমাপ্ত করার পর ২য় বর্ষ থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ার ক্যাম্পাসে যাবার সুযোগ পায়। ইউরোপÑ আমেরিকা ছাড়াও এশিয়ার কিছু দেশ উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলাদেশিদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যেমনÑ মালয়েশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, জাপান ও কোরিয়া। জাপান আন্তর্জাতিক ছাত্রদের আকৃষ্ট করতে ‘গ্লোবাল ৩০ প্রজেক্ট’ নামে একটি স্কিম চালু করেছে যার উদ্দেশ্য হলোÑ বিদেশি ছাত্রদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করা।

এ স্কিমের আওতায় জাপানের ১৩টি নামকরা বিশ^বিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করার পূর্ণ সুযোগ পাওয়া যাবে। ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিং-এ এ প্রথম বিশে^র ২০০টি বিশ^বিদ্যলয়ের মধ্যে ৩৬টি ইউএসএস, ১৭টি চিনে, জার্মানিতে ২০টি, অস্ট্রেলিয়ায় ৭টি, ইউকেতে ২২টি। এছাড়াও তাইওয়ান, সিংগাপুর, ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডে অনেক নামকরা বিশ^বিদ্যালয় আছে, যারা কেবল Research Oriented Student দের ভর্তি নেয়। র‌্যাঙ্কিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই Scholarship হয়- তবে Result হতে হয় অনেক ভালো এবং ইংরেজিতে পারদর্শিতা লাগবেই। অনেক ক্ষেত্রে Research Proposal এর উপরও এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে Scholarship হয়। মনে রাখবেন, আপনার মধ্যে Extra-ordinary কিছু পেলে বিশ^বিদ্যালয়গুলো আপনাকে লুফে নিবে।
ইউকে এ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় টপ-আপ প্রোগ্রাম অফার করে। যেমন- ইউনিভার্সিটি অব কভেন্টি, হাডার্স ফিল্ড, ইউডব্লিউই (ব্রিষ্টল)। প্রোগ্রামটি তাদের জন্য যারা বাংলাদেশে ৩ বছরের অনার্স করেছেন। তারা প্রথমে ১ বছর মেয়াদি টপ-আপ প্রোগ্রাম করে পরবর্তী বৎসরে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবে। ইংরেজিতে দক্ষতার প্রশ্ন এলো অবশ্যই বলতে হবে পড়ালেখা করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকতে হবে অথবা যে দেশে যাচ্ছেন, সে দেশের ভাষার ওপর দক্ষতা থাকতে হবে। তবে অধিকাংশ দেশই ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা অফার করে। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশের চাহিদা আইইএলটিএস ন্যূনতম ৬, টোফেল ৬০-৭৮, ডুয়ালিংগ ১০৫-১১৫, পিটিই ৫১.৬। তবে বিশেষ কিছু বিষয় যেমনÑ নার্সিং, মেডিক্যাল সায়েন্স, আইন এ বিষয়গুলোর জন্য ইংরেজি স্কোর বেশি লাগে।
কোনো দেশে কত সময়ে স্থায়ী হওয়া যায়? এক্ষেত্রে ইউকেতে- ১০ বছর, আয়ারল্যান্ডে ৫, সুইডেনে ৫, অস্ট্রেলিয়ায় ৫-১৫, নিউজিল্যান্ডে ৫-৮, ইউএসএ ৫-১০ বছর। স্থায়িত্বের বিষয়টি নির্ভর করে আপনার চাকরির ধরন ও আপনি কি পরিমাণ ঞধী দিচ্ছেন সরকারকে। তবে ইউকেতে আপনি ১০ বছর বৈধভাবে থাকলে এবং আপনার বিরুদ্ধে কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলে নাগরিকত্ব পাবেন।
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের ছাত্র যখন বিশ^বিদ্যালয় পাস করে সরকারি চাকরির জন্য প্রতিযোগিতায় নামে, তখন স্বল্প কিছু মেধাবী ছাড়া অধিকাংশ মেধাবী ছাত্র সরকারি চাকরির সুযোগ পায় না। তারা অনুপোযুক্ত তা নয়, বরং আসন সংখ্যা সীমিত সে কারণে। এরপর এই মেধাবিরা বেসরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে ১৫০০০-৪০০০০ টাকার বেতনে। যেখানে না আছে চাকরির নিরাপত্তা, না আছে নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, না আছে চাকরিতে আত্মতৃপ্তি। চাকরি পাওয়ার জন্য অনৈতিক পন্থা অবলম্বন তো আছেই। এখানে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর স্বাবলম্বী হতে তাদের বয়স হয়ে যায় ৩৫-৪০ বছর, তাও যদি সে ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী হয়।
বিপরীতভাবে, বিদেশে বিশ^বিদ্যালয় থেকে পাস করার পর একজন ছাত্রছাত্রী। কাজের অভাব হচ্ছে না। সে তার যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে এবং যথেষ্ট আয় করে নিজে চলছে এবং দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। এখানে একজন ছাত্রছাত্রীর বয়স যখন ৩০ হচ্ছে, তার আগেই সে সেই দেশের জীবন ব্যবস্থায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছে এবং কাক্সিক্ষত বাড়ি, গাড়ি, সবই করে ফেলছে। পরবর্তীতে যখন সে স্থায়িত্ব পাচ্ছে  তার বাবা-মা, শ^শুর-শাশুড়ি, ভাই-বোনকে স্পন্সর করে নিয়ে যেতে পারছে।

সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, পরিবেশ  বিপর্যয়, নৈতিক অবক্ষয়, ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে যদি কেউ তার ছেলে অথবা মেয়েকে বিদেশে পড়ালেখার জন্য পাঠিয়ে একটু চিন্তা মুক্ত থাকতে চায়, সেটা তার জন্য মন্দ নয়। পাশাপাশি, আমাদের এটাও ভাবতে হবে দেশ থেকে যদি মেধাবীরা চলে যায়, তবে দেশ মেরুদ-হীন হয়ে যাবে। তাই উত্তম হলো বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে দেশে ফেরত এসে দেশের উন্নয়নে নিজেকে কাজে লাগানো। এতে হয়তো আপনি অনেক কিছু হারাবেন। কিন্তু বিনিময়ে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করে যেতে পারবেন।

লেখক : বিপণন কর্মকর্তা

×