
ছবি: সংগৃহীত
গ্রীষ্ম আসার সঙ্গে সঙ্গে এশিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে আবারও কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে। এদিকে অনেক রোগী এক ধরনের তীব্র গলা ব্যথার অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন, যা এতটাই যন্ত্রণাদায়ক যে এটি “রেজর ব্লেড থ্রোট” নামে পরিচিতি পাচ্ছে — যেন কেউ ব্লেড দিয়ে গলা কেটে ফেলেছে এমন অনুভূতি।
যদিও এটি নতুন কোনো উপসর্গ নয়, তবে দ্রুত ছড়ানো একটি ওমিক্রন সাবভ্যারিয়েন্টের (সরকারিভাবে যার নাম NB.1.8.1, আর অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে “নিম্বাস”) প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে এটি আবার আলোচনায় এসেছে।
চীনের রোগীরা এবং অন্যান্য জায়গার আক্রান্তরা এই গলা ব্যথাকে “চূর্ণ কাঁচ গিলে ফেলার মতো” ব্যথাদায়ক বলে বর্ণনা করছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এই যন্ত্রণায় তারা কথা বলতে, খেতে, এমনকি পানিও খেতে পারছেন না।
চীনের শীর্ষ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবো-তে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “কোভিড-পরবর্তী রেজর ব্লেড থ্রোট অসহ্য — গলা ফুলে গেছে, প্রচণ্ড ব্যথা, আমি কথাই বলতে পারছি না।” আরেকজন লিখেছেন, “আমি রেজর ব্লেড থ্রোটে আক্রান্ত, শরীর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।”
তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উপসর্গ কোনো নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্টের জন্য নয় এবং এটি নতুন কিছু নয়।
“গলা ব্যথা কোভিড-১৯–এর একটি সাধারণ উপসর্গ এবং এটি নতুন নয়; এটি NB.1.8.1 সহ কোনো নির্দিষ্ট ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে এককভাবে যুক্ত নয়,” বলেন ইউসিএসএফ–এর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. পিটার চিন-হং। “কোভিড-১৯–এর উপসর্গ হিসেবে গলা ব্যথার তীব্রতার মাত্রা সব সময়ই বিভিন্ন ধরনের হয়ে এসেছে, যার মধ্যে কিছু ছিল অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।”
তিনি আরও জানান, কোভিডে আক্রান্ত প্রায় ৭০% মানুষেরই গলা ব্যথা হয়। অন্যান্য সাধারণ উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, হালকা কাশি, জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা এবং সর্দি — যা আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর সঙ্গেও মিল রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “বর্তমানে পাওয়া তথ্যে দেখা যাচ্ছে না যে NB.1.8.1 অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করছে।” তবে সংস্থাটি বলেছে, এই সাবভ্যারিয়েন্টটি বর্তমানে প্রচলিত LP.8.1 ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি প্রতিরোধী (ইমিউন ইভেসিভ) বলে মনে হচ্ছে।
চীনে, যেখানে মার্চ মাসে এই ঢেউ শুরু হয়, সেখানে সংক্রমণ জুনের শেষ নাগাদ সর্বোচ্চে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টটি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ২০টিরও বেশি দেশে শনাক্ত হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে প্রথমদিকের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (CDC) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ২৫০ জন কোভিডে মারা গেছেন।
চিকিৎসকরা জনগণকে টিকাদান হালনাগাদ রাখার এবং সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশেষ করে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।
চিন-হং বলেন, “আমার কাছে এটা একটা বড় বার্তা যে, আপনি হয়তো হাসপাতাল বা জরুরি বিভাগে না গেলেও ২০২৫ সালে কোভিড এখনো আপনাকে অনেক অসুস্থ করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “গ্রীষ্মের দিকে আমরা কোভিডের আরও একটি ঢেউ দেখতে পারি, যার পেছনে NB.1.8.1–এর মতো ভ্যারিয়েন্টগুলোর প্রভাব থাকতে পারে। ইতোমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কিছু জায়গায় বর্জ্যজলে ভাইরাসের উপস্থিতি বেড়েছে।”
কোভিড-১৯ ভবিষ্যতে আরও নিয়ন্ত্রণযোগ্য হলেও স্থায়ীভাবে থাকতেই পারে — এই বাস্তবতায় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বারবার পরিচিত সতর্কবার্তাই দিচ্ছেন: মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া, টিকা নেওয়া এবং অসুস্থ অবস্থায় ঘরে থাকা — এইগুলোই এখনো সেরা প্রতিরোধ।
যাদের গলায় তীব্র ব্যথা হচ্ছে, তাদের জন্য চিন-হং প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, “লোজেন্স বা গার্গল স্প্রে, মধু দিয়ে গরম চা, স্যুপ, বরফের টুকরো ও আইসক্রিম এসবও উপসর্গ কমাতে সাহায্য করতে পারে।”
তথ্যসূত্র: https://www.sfchronicle.com/health/article/covid-razor-blade-throat-symptom-nb181-variant-20372191.php
আবির