ইসরায়েল যখন ইরানে হামলা চালিয়েছে, তখনই ইসরায়েল, ইরান, ইরাক এবং জর্ডানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলতে শুরু করে বিশ্বজুড়ে বিমান সংস্থাগুলো। ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার আকাশপথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় অসংখ্য ফ্লাইট, অনেক ফ্লাইট বাতিল বা রুট পরিবর্তন করে নিরাপদে যাত্রী ও কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়।
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলগুলো এখন শুধু বিমান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে না, বরং বিমান সংস্থার জন্য আর্থিক ক্ষতির কারণ ও নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত হয়েছে।
২০০১ সালের পর থেকে দুর্ঘটনাবশত ছয়টি বাণিজ্যিক বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে এবং আরও তিনটি খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছে, জানিয়েছে এভিয়েশন রিস্ক কনসালট্যান্সি ‘অসপ্রে ফ্লাইট সল্যুশনস’।
ইসরায়েল শুক্রবার জানিয়েছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক নেতাদের টার্গেট করেছে। তারা এটিকে একটি দীর্ঘমেয়াদি অভিযানের শুরু হিসেবে উল্লেখ করেছে, যার উদ্দেশ্য ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে, ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কায়।
ইসরায়েলি ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার এল আল এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলে যাতায়াতকারী সব ফ্লাইট বন্ধ করেছে এবং কিছু বিমান দেশ থেকে সরিয়ে নিচ্ছে। ইসরায়েলি ক্যারিয়ার ইসরায়ার জানিয়েছে, তারা তাদের বিমানগুলো তেল আবিব বিমানবন্দর থেকে সরিয়ে নিচ্ছে, যা সপ্তাহান্ত পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ধারণা।
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা মে মাসে ইসরায়েলের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর থেকে ইতোমধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স তেল আবিবে ফ্লাইট স্থগিত করেছিল।
ইরানের আকাশসীমাও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে — দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও পাইলটদের উদ্দেশে জারি করা নির্দেশনায় এ তথ্য জানানো হয়।
ইসরায়েলের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এমিরেটস, লুফথানসা ও এয়ার ইন্ডিয়া-সহ বেশ কিছু বিমান সংস্থার ফ্লাইট ইরানের আকাশে ওড়ার সময় রুট পরিবর্তন করা হয়।
এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নিউইয়র্ক, ভ্যাঙ্কুভার, শিকাগো ও লন্ডন থেকে চলাচলরত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকামুখী ফ্লাইটগুলো রিটার্ন করেছে বা রুট পরিবর্তন করা হয়েছে।
লুফথানসা বলেছে, তারা তেহরানে ফ্লাইট স্থগিত করেছে এবং আপাতত ইরান, ইরাক ও ইসরায়েলের আকাশসীমা এড়িয়ে চলবে।
এমিরেটস, যা ইরাক, জর্ডান, লেবানন ও ইরানে ফ্লাইট বাতিল করেছে, এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
ইরাক শুক্রবার সকালে আকাশসীমা বন্ধ করে সব বিমান চলাচল স্থগিত করেছে, জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম।
ইরাকের পূর্বাঞ্চল – বিশেষ করে ইরান সীমান্তবর্তী অঞ্চল – বিশ্বের ব্যস্ততম বিমান চলাচল করিডোরগুলোর একটি, যেখানে এক মুহূর্তে ইউরোপ ও এশিয়া সংযুক্তকারী অসংখ্য ফ্লাইট চলাচল করে।
জর্ডান, যা ইসরায়েল ও ইরাকের মাঝে অবস্থান করছে, ইসরায়েলি অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পর আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়।
ফ্লাইট ডাইভারশন পরিস্থিতি:
Safe Airspace (OPSGROUP পরিচালিত একটি বিমান নিরাপত্তা ও তথ্য প্ল্যাটফর্ম) জানিয়েছে, বিমানগুলো এখন ইজিপ্ট ও সৌদি আরব হয়ে দক্ষিণে বা তুরস্ক, আজারবাইজান ও তুর্কমেনিস্তান হয়ে উত্তরে বিকল্প রুট নিচ্ছে।
আজারবাইজানের বাকু শহরের হেইদার আলিয়েভ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি এয়ারলাইনের ফ্লাইট (যার মধ্যে ছিল এতিহাদ ও তুর্কিশ এয়ারলাইনস) ডাইভার্ট করা হয়েছে।
ম্যানচেস্টার থেকে দুবাই গামী এমিরেটস ফ্লাইট ইস্তানবুলে নামানো হয়েছে, এবং বেলগ্রেড থেকে আসা ফ্লাইদুবাই ফ্লাইট আর্মেনিয়ার ইয়েরেভানে অবতরণ করেছে।
বাজেট ক্যারিয়ার ফ্লাইদুবাই জানিয়েছে, তারা আম্মান, বৈরুত, দামেস্ক, ইরান ও ইসরায়েলে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। এছাড়াও আরও অনেক রুটের ফ্লাইট বাতিল, রিডাইভার্ট বা উড়ানে ওঠার আগেই ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কাতার এয়ারওয়েজ শুক্রবার তাদের দুটি দামেস্কগামী নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করেছে, ফ্লাইটরাডার২৪-এর তথ্য বলছে।
বিপদের স্মৃতি:
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে বাণিজ্যিক বিমানের চলাচল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হঠাৎ ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে আকাশপথে চলাচলরত ফ্লাইটগুলো যেকোনো সময় বিপদের মুখে পড়তে পারে— এমন বাস্তবতা পাইলট ও যাত্রী উভয়ের জন্য উদ্বেগজনক।
ইউরোকন্ট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতিদিন প্রায় ১,৪০০টি ফ্লাইট ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে যাতায়াত করত।
গত বছর কাজাখস্তান ও সুদানে অস্ত্রবাহী হামলায় দুটি বাণিজ্যিক বিমান গুলি করে নামানো হয়। এর আগে ২০১৪ সালে ইউক্রেনে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ১৭ ও ২০২০ সালে তেহরান থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পিএস৭৫২ গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছিল।
Jahan
