ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

১৭ বিলিয়নের ধনভাণ্ডার: ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজ নিয়ে মুখ খুললেন গবেষকরা

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ১২ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৩২, ১২ জুন ২০২৫

১৭ বিলিয়নের ধনভাণ্ডার: ৩০০ বছর আগে ডুবে যাওয়া জাহাজ নিয়ে মুখ খুললেন গবেষকরা

ছবি: সংগৃহীত

তিন শতাব্দী আগে কার্টাহেনা উপকূলে ডুবে যাওয়া একটি স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজ নিয়ে চলছিল রহস্য আর গবেষণার প্রতিযোগিতা। সান হোসে নামের এই জাহাজে ছিল প্রায় ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সোনা, রূপা ও পান্না, যা ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান জাহাজডুবিগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হয়। এতদিন বিষয়টি গোপন রাখা হলেও, এবার আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা উডস হোল ওশেনোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট (WHOI) এর গবেষকরা জানালেন কিভাবে তাঁরা এই ঐতিহাসিক জাহাজের সন্ধান পেয়েছিলেন।

জাহাজটির ইতিহাস

১৭০৮ সালের ৮ জুন, স্প্যানিশ যুদ্ধজাহাজ সান হোসে কলম্বিয়ার উদ্দেশ্যে পানামা থেকে যাত্রা করেছিল, সঙ্গে ছিল পেরুর পোটোসি খনি থেকে আনা বিপুল পরিমাণ ধনসম্পদ। এটি ছিল ৬২টি কামানসহ তিন মাস্তুলবিশিষ্ট এক বিশাল গ্যালিয়ন, স্প্যানিশ বহরের প্রধান জাহাজ। কিন্তু যাত্রাপথে ‘War of the Spanish Succession’ যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জাহাজটি ডুবে যায়। ছিলেন প্রায় ৬০০ আরোহী, যাদের সকলেই প্রাণ হারান।

জাহাজডুবির পর ব্রিটিশরা এর ধনসম্পদ উদ্ধার করতে পারেনি। এই বিপুল সম্পদ হারানোর ফলে ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার অনেক বণিক ও রাজনীতি প্রভাবিত হয়। একে বলা হয় ‘The holy grail of shipwrecks’।

জাহাজের সন্ধান মিলল যেভাবে

২০১৫ সালে, কার্টাহেনার উপকূল থেকে গভীর সমুদ্রের তলদেশে REMUS 6000 নামের একটি স্বয়ংক্রিয় পানির নিচের যান ব্যবহার করে সান হোসে’র ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করে WHOI-এর গবেষকরা। এই REMUS 6000 একই যন্ত্র যা ২০১১ সালে এয়ার ফ্রান্স ৪৪৭ বিমানের ধ্বংসাবশেষ ও ২০১০ সালে টাইটানিক জাহাজের ছবি তুলতে ব্যবহৃত হয়েছিল।

গভীর সমুদ্রের মেঘলা পরিবেশে REMUS একটি গুরুত্বপূর্ণ ছবি তোলে—ডলফিন খোদাই করা ব্রোঞ্জের কামান, যা সান হোসে জাহাজের অন্যতম স্বতন্ত্র চিহ্ন। এই চিহ্নই নিশ্চিত করে যে এটি সান হোসে-ই।

এখন কী হবে এই গুপ্তধনের?

জাহাজডুবি যেমন নাটকীয় ছিল, তেমনি এর গুপ্তধন নিয়েও চলছে বহু বছরের আইনি লড়াই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাণিজ্যিক উদ্ধার কোম্পানি Sea Search Armada (SSA) দাবি করে, তারা ১৯৮০-এর দশকে এই জাহাজের অবস্থান খুঁজে পেয়েছিল এবং এর অর্ধেক সম্পদের মালিকানা চায়। তবে কলম্বিয়া সরকার বলে, তারা আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের সহায়তায় ২০১৫ সালে জাহাজটি খুঁজে পেয়েছে। এই বিরোধ গড়িয়েছে আন্তর্জাতিক স্থায়ী আদালত পর্যন্ত।

এদিকে ইউনেসকো কলম্বিয়াকে আহ্বান জানিয়েছে, জাহাজের ঐতিহাসিক মূল্যকে রক্ষা করে যেন এটি কোনোভাবেই বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার না করা হয়। এর অবস্থান এখনো রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা হিসেবে রাখা হয়েছে।

একটি যাদুঘর গড়ার পরিকল্পনা

গবেষকদের মতে, সান হোসে শুধুই ধনসম্পদের উৎস নয়; বরং এটি ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও নৌ-আর্কিওলজিক্যাল তথ্যভান্ডার, যা ১৮ শতকের ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থার নানা দিক তুলে ধরবে।

কলম্বিয়া সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে, তারা একটি সংরক্ষণ ল্যাব ও যাদুঘর গড়ে তুলবে, যেখানে কামান, মৃৎপাত্রসহ অন্যান্য নিদর্শন সংরক্ষণ ও জনসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হবে।

৩০০ বছর সমুদ্রের তলে ঘুমিয়ে থাকা এক জাহাজ এখন নতুন করে আলোচনায়। গুপ্তধন নিয়ে বিতর্ক যতই থাকুক, সান হোসে জাহাজডুবি ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়, যা আধুনিক প্রযুক্তি আর গবেষণার মাধ্যমে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হচ্ছে বিশ্ববাসীর সামনে।

 

সূত্র: সিএনএন।

 

রাকিব

×