
ছবি: সংগৃহীত।
জামিনে মুক্তির পরও অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ কাউকে আবার গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাচ্ছে—যা সাধারণ মানুষের জন্য বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি কোনো পুলিশি ভুল নয়, বরং আইনি প্রক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও তথ্য না জানার ফলে ঘটে এমন পরিস্থিতি।
বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগণের মধ্যে এই ভুলগুলো বেশি লক্ষ্য করা যায়। কেউ একজন মামলায় হাজিরা না দিলে আদালত তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে। পরে সেই ব্যক্তি যদি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান, অনেক সময় দেখা যায় তিনি “পরওয়ানা ফেরত” বা “রিকল অর্ডার” নামে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাগজ সংগ্রহ না করেই বাসায় ফিরে যান। ফলস্বরূপ পুলিশ তার বিরুদ্ধে থাকা আগের ওয়ারেন্ট অনুসারে তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী, জামিনের পর আদালত যে আদেশ দেন, সেটি থানায় জমা দেওয়ার জন্য একটি কপি অভিযুক্তকে প্রদান করা উচিত। অনেক সময় আইনজীবী এ কাগজটি অভিযুক্তকে সরবরাহ করেন না বা তা সংগ্রহ করতে দেরি হয়। ফলে থানার রেজিস্টারে আসামির নাম কাটা না থাকায় পুলিশ পূর্বের ওয়ারেন্ট অনুসারে তাকে আবার ধরে নিয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে রাতে পুলিশ বাড়িতে গেলে ভুক্তভোগী বা তার পরিবার পুলিশকে বোঝাতে পারেন না যে সে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। জামিনের কোনো প্রমাণ কাগজ না থাকায় পুলিশ আইন অনুযায়ী তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং পরদিন আবার আদালতে হাজির করে। আদালতে হয়তো ওইদিনই জামিন মঞ্জুর হয়, কিন্তু এই অপ্রয়োজনীয় গ্রেপ্তার এবং থানায় রাতযাপন একটি দুর্ভাগ্যজনক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জামিন পাওয়ার পর অবশ্যই “পরওয়ানা ফেরত” বা “রিকল” অর্ডারের একটি কপি সংগ্রহ করতে হবে। কপি সংগ্রহের পর সেটি নিজে গিয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে হবে। থানার অফিসার সেই কাগজ রিসিভ করে রেজিস্টার থেকে নাম কেটে দিয়ে আপনাকে একটি সিল ও স্বাক্ষর করা রিসিভড কপি দিবেন।
এই কপির একাধিক ফটোকপি তৈরি করে একটি বাড়িতে, একটি ব্যক্তিগতভাবে এবং প্রয়োজনে কর্মস্থলে সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে পুলিশ কোনো কারণে যোগাযোগ করলে আপনি সাথে সাথেই বৈধ প্রমাণ দেখাতে পারবেন।
একজন ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, “জামিন পাওয়ার পর ভেবেছিলাম সব শেষ। কিন্তু বাসায় ফেরার পর পুলিশ রাত তিনটায় এসে আবার ধরে নিয়ে গেল। কাগজ না থাকায় আমি কিছুই করতে পারিনি।”
এভাবে শুধু ভুক্তভোগী নয়, তার পরিবার, মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানও ভয়, লজ্জা এবং মানসিক চাপের মধ্যে পড়েন। পুলিশের সাথে অপ্রয়োজনীয় বাকবিতণ্ডাও হয় যা এড়ানো সম্ভব ছিল একটি কাগজের জন্য।
আইন জানা না থাকলে ভুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু সচেতনতা ছাড়া এই ভুলের মাশুল হতে পারে গ্রেপ্তার, হেনস্তা ও সামাজিক বিব্রতকর পরিস্থিতি। তাই মামলায় জামিন পাওয়ার পর অবশ্যই “রিকল কপি” সংগ্রহ করে যথাযথভাবে থানায় জমা দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মিরাজ খান