ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এখন থেকে মাত্র ৩ মাসেই বেদখল জমির দখল ফেরত! জেনে নিন পুরো আইনি প্রক্রিয়া

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১৩ জুন ২০২৫; আপডেট: ১০:২৯, ১৩ জুন ২০২৫

এখন থেকে মাত্র ৩ মাসেই বেদখল জমির দখল ফেরত! জেনে নিন পুরো আইনি প্রক্রিয়া

একটি সময় ছিল যখন জমি বেদখলের পর দখল পুনরুদ্ধার করতে বছরের পর বছর আদালতের দ্বারে ঘুরতে হতো। মামলার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা জমির প্রকৃত মালিকদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করত। তবে এখন আর সেই ঝামেলা নেই। কারণ, নতুন আইন ও বিধিমালার আওতায় এখন মাত্র তিন মাসেই পাওয়া যেতে পারে বেদখল হওয়া জমির দখল ফেরত। কীভাবে?জেনে নিন সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া।

কোথায় মামলা করবেন জমির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য?
আপনার মালিকানাধীন জমি থেকে কেউ জোরপূর্বক উচ্ছেদ করলে রিকভারি অফ পজিশন বা খাস দখলের জন্য মামলা করতে হয়। আগে যেখানে জজ কোর্টে মামলা করে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হতো, এখন সেই মামলা সরাসরি দায়ের করা যায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট। আর পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় মাত্র তিন মাসের মধ্যেই।

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এবং বিধিমালা ২০২৪
২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন এবং ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর গৃহীত বিধিমালার মাধ্যমে এখন অনেক দ্রুত ও কার্যকরভাবে দখল পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে। বিধিমালার ৬ নম্বর বিধি অনুযায়ী, অবৈধভাবে দখলচ্যুত ব্যক্তির আবেদন গ্রহণ ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন পদ্ধতি
কোনো ব্যক্তি যদি আদালত বা কর্তৃপক্ষের আদেশ ছাড়া তার দখলীয় জমি থেকে উচ্ছেদ হন, তাহলে তিনি নির্ধারিত ফর্ম অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করতে পারবেন। এই ফর্মটি বিধিমালার পরিশিষ্ট ৫-এ উল্লেখিত।

আবেদন ফর্মে যেসব তথ্য দিতে হবে
১. জমির তফসিল, খতিয়ান, দাগ ও পরিমাণ
২. সর্বশেষ জরিপ ও নামজারী খতিয়ানের তথ্য
৩. ভূমি হস্তান্তর বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানার তথ্য
৪. আদালতের আদেশ থাকলে তার বিবরণ
৫. কতদিন ধরে দখলে ছিলেন, কিভাবে দখল করেছিলেন
৬. উচ্ছেদের সময় ও পদ্ধতি
৭. জমি যৌথভাবে দখল ভোগ করা হয়েছিল কিনা
৮. কোনো দেওয়ানী মামলা চলমান থাকলে তার অবস্থা
৯. ছবি, ভিডিওসহ যেকোনো প্রমাণাদিসহ আবেদন

প্রয়োজনীয় সংযুক্তি
আবেদনের সঙ্গে জমি মালিকানার দলিল, জরিপ কাগজ, নামজারী খতিয়ান, হোল্ডিং নম্বর, ভূমি উন্নয়ন করের তথ্য, নোটিশ ফর্ম, ছবি বা ভিডিও, ফটোকপি ও ফি জমা দিতে হবে।

এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কীভাবে পদক্ষেপ নেবেন?
আবেদন পাওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলবেন। এরপর মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য আদেশ দেবেন এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তদন্ত করবেন, পক্ষসমূহের শুনানি গ্রহণ করবেন এবং উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ বিবেচনা করে আদেশ দিবেন।

একতরফা আদেশ এবং দখল হস্তান্তরের পদ্ধতি
প্রতিপক্ষ অনুপস্থিত থাকলে একতরফা আদেশ দিয়েও দখল পুনরুদ্ধার করা যাবে। আদেশের পর ১৫ দিনের মধ্যে দখল হস্তান্তর না হলে, ম্যাজিস্ট্রেট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় দখল ফিরিয়ে দিতে পারেন।

অবৈধ দখলদারের বাধা হলে কী হবে?
দখল হস্তান্তরে বাধা দিলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি আদালতে অভিযোগ পাঠাতে পারেন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাও করা যাবে।

অ্যাডভোকেট ছাড়াও আবেদন করা সম্ভব, তবে আইনের ধারা অনুযায়ী, দখল পুনরুদ্ধারের আবেদন ব্যক্তি নিজে অথবা তার নিযুক্ত কেউ করতে পারেন। তবে আইনের জটিলতা বোঝা সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজ না হওয়ায় একজন দক্ষ অ্যাডভোকেটের সাহায্য গ্রহণই বেশি যুক্তিযুক্ত।

কত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে প্রক্রিয়া?
বিধিমালায় নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও, ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩-এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবেদন পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে এবং দায়িত্বে অবহেলা করলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

দেওয়ানী আদালতে মামলা থাকলে কী করবেন?
দেওয়ানী আদালতে মামলা চলমান থাকলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট আদালত চাইলে বা আবেদন করলে সেই মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে পারেন।

ভূমি দখল সংক্রান্ত দীর্ঘমেয়াদী ভোগান্তি ও জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এবং বিধিমালা ২০২৪ কার্যকর একটি পদক্ষেপ। এই আইন অনুযায়ী, আপনি এখন মাত্র তিন মাসে ফিরে পেতে পারেন আপনার বেদখল হওয়া জমির পূর্ণ দখল। তাই আইন জানুন, প্রয়োগ করুন, এবং নিজের অধিকার সুরক্ষিত রাখুন।

আফরোজা

×