ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আইসিটি খাতের উত্তরণ

প্রকাশিত: ১৭:১১, ১১ জুন ২০২৫

আইসিটি খাতের উত্তরণ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাত বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। তবে সম্ভাবনার তুলনায় আমাদের অর্জন অনেক সীমিত। এই খাতের সমস্যা কাটিয়ে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বিগত সরকার। অথচ শুধু কম্পিউটার প্রশিক্ষণেই গত ১৬ বছরে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০৩১ সালের মধ্যে আইসিটি খাতে ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। অথচ কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই বললেই চলে। 
দেশে সাড়ে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সার আছেন, যারা ২৫৩টি মার্কেট প্লেসে কাজ করেন। তাদের মধ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন প্রায় আড়াই লাখ। তাদের প্রকৃত আয় ৫ বিলিয়ন ডলার হলেও দেশে পাইওনিয়ার গেটওয়ের মাধ্যমে বৈধভাবে মাত্র দেড় বিলিয়ন ডলার আসে। এখন সময় এসেছে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করা এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের। বর্তমানে দেশের সফটওয়্যার ও আইটি সেবা রপ্তানি প্রায় ১ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই অর্জন টেকসই করতে এবং রপ্তানি আরও বহুগুণ বাড়াতে হলে আমাদের মৌলিক কাঠামোগত কিছু সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দক্ষ মানব সম্পদের অভাব অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে প্রচুর সংখ্যক আইটি গ্র্যাজুয়েট বের হলেও তাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক মানের কাজে পর্যাপ্ত প্রস্তুত নয়। ফলে, একটি বড় অংশকে আবার প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে, যা সময় ও খরচ সাপেক্ষ। তাই শিক্ষাক্রম যুগোপযোগী করা এবং আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন নিশ্চিত করা জরুরি। অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতাও এই খাতের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে। উচ্চগতির ইন্টারনেটের প্রাপ্যতা এখনো সারাদেশে সুলভ নয়। বিশেষ করে বিভাগীয় শহরের বাইরে ফ্রিল্যান্সার বা আইটি উদ্যোক্তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন দ্রুতগতির ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ এবং টেক হাব বা আইটি পার্কের সম্প্রসারণ। স্টারলিংক আসছে। কিন্তু সবাই তো এটা এফোর্ড করতে পারবে না। সেক্ষেত্রে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে কাজ করতে হবে সরকারকে।
নীতিনির্ধারণী স্তরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে স্থানীয় উদ্ভাবক ও স্টার্টআপদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে, তারা পেছনে পড়ে যাবে। একই সঙ্গে, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও সহজ ও স্বচ্ছ করা দরকার। এ ছাড়াও সাইবার নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা ও ডিজিটাল অধিকার নিশ্চিত করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এসব বিষয়ে সচেতনতা এবং যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে খাতটি হুমকির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে আইটি খাতের আরেকটি চ্যালেঞ্জ কৃত্রিম বুদ্ধিমতা (এআই)। ভবিষ্যতে এটা বিশাল একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আইটি কোম্পানিগুলোকেই কাজ করতে হবে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করে দেওয়াসহ আন্তর্জাতিক এক্সপো আয়োজনের মাধ্যমে দেশকে ব্র্যান্ডিং করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে পরিণত করতে হলে আইসিটি খাতের উত্তরণ অনিবার্য। যা সম্ভব হতে পারে সরকার, বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জনগণের মধ্যে একটি কার্যকর সমন্বয় গড়ার মাধ্যমে। আইসিটি খাতকে বর্তমানে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের দাবি।

প্যানেল

×