
ছবিঃ সংগৃহীত
এবার রাজধানীর খিলক্ষেতের একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে প্রশাসনের লোক পরিচয়ে মব সৃষ্টি করে তল্লাশির নামে কয়েকজনকে মারধরের পর ভয়ভীতি দেখিয়ে নগদ এক লাখ টাকা ও প্রাইম ব্যাংকের ৪ লাখ টাকার চেকসহ বাসার সিসিটিভি এবং ডিভিআরসহ মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে নিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। শুধু তাই নয়, দুর্বৃত্তরা এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে ফ্যাসিস্ট সরকারের তকমা লাগিয়ে মামলা ঠুকে দেওয়া ও প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশকারীদের একটি ভিডিও ক্লিপ দৈনিক জনকণ্ঠ-এর হাতে এসেছে। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে এখনও কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, গত ১০ জুন বিকেল ৪টার দিকে খিলক্ষেত থানাধীন উত্তর নামাপাড়া বোটঘাট এলাকার ক ২২৮/৬/১ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা চাকরিজীবী মোহাম্মদ সহিদুল ইসলামের ফ্ল্যাটে মব সৃষ্টি করে হামলা, মারধর ও লুটপাটের এ ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ডাকাতি মামলার অভিযুক্ত আসামি শিমুলের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মুক্তার, খালেক ও ইসমাইলসহ ২০ জন যুবক নিজেদের পুলিশ প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকে মব সৃষ্টি করে নগদ অর্থ ও অন্যান্য মূল্যবান মালামাল লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, ঘটনার সময় মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম ও তার স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে নিজ ফ্ল্যাটে অবস্থান করছিলেন। তখন বাড়ির প্রধান ফটক বন্ধ দেখে পাশের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ টপকে তাদের ছাদ দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়ে ৩–৪ জন যুবক। এক পর্যায়ে তারা তাদের ফ্ল্যাটের কলিং বেল বাজায়। ভেতর থেকে শব্দ পেয়ে পরিচয় জানতে চান তারা। তখন ফ্ল্যাটের সিসিটিভিতে দেখে অপরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় আবারও পরিচয় জানতে চান। এরপর তারা নিজেদের থানার প্রশাসনের লোক পরিচয় দেন। পরে তারা দরজা খুললে যুবকরা ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন রুম তল্লাশি করতে শুরু করেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের এক আত্মীয়কে ধরে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন। এ সময় বাধা দেন গৃহকর্তার স্ত্রী। পরে তারা সিসিটিভিতে দেখতে পান বাড়ির নিচে আরও ১০–১৫ জন লোক ভবনের ভেতর ও বাইরে পাহারা দিচ্ছে। পরে দুর্বৃত্তরা নিজেদের কখনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আবার কখনো পুলিশ প্রশাসনের লোক পরিচয় দিয়ে এক রুম থেকে আরেক রুমে ঢুকে বিভিন্ন কক্ষের আসবাবপত্র তছনছ করতে শুরু করেন।
ঘটনার একপর্যায়ে দুর্বৃত্তরা ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এরপর প্রাণভয়ে ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ সময় ঘর থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা লুটে নেয়। একই সঙ্গে ফ্ল্যাটের ২টি সিসিটিভি ও ডিভিআর খুলে লুটে নিয়ে যায়। এরপর বাকি টাকার জন্য ঘরে থাকা এটিএম কার্ডসহ তাদের গার্ড দিয়ে স্থানীয় একটি বুথে নিয়ে আরও ৫০ হাজার টাকা তুলে নেয়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক প্রাইম ব্যাংকের বাকি ৪ লাখ টাকার একটি চেক (চেক নম্বর–৪৬০৯৬৮৩) লিখিয়ে নিয়েছে। পরবর্তীতে ১০০ টাকা মূল্যমানের পরপর ৩টি সাদা স্ট্যাম্পে পাথর ক্রয় বাবদ পাওনা টাকা উল্লেখ করে জোরপূর্বক সই নিয়ে অন্যান্য মালামাল লুটপাট চালিয়ে সন্ধ্যার আগেই পালিয়ে যায়।
ঘটনার সময় সিসিটিভি ভেঙে ফেলায় কোনো প্রমাণ না থাকায় গৃহকর্ত্রী কৌশলে মোবাইলে ১ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ধারণ করেন। তাতে দেখা গেছে, কালো প্যান্ট, কাঁধ ও কলারে লাল এবং নীল রঙের টি-শার্ট পরিহিত ও হাতে ঘড়ি, চশমা রাখা এক যুবক অপর দু’জনকে তল্লাশির অর্ডার দিয়ে ঘোরাঘুরি শেষে সোফায় বসেন। অপর দু’জনের একজন নিজেকে ইসমাইল বলে পরিচয় দেন। তার পরনে নেভি ব্লু জিন্স প্যান্ট ও এস রঙের টি-শার্ট এবং অপরজন ফুলপ্যান্ট ও এস রঙের ফুলহাতা শার্ট পরিহিত এবং চোখে চশমা ও মাথায় টুপি বা কাপড় বাঁধা ছিল।
ভুক্তভোগী সহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পরপরই তারা বিষয়টি খিলক্ষেত থানা পুলিশ ও স্থানীয় পূর্বাচল সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেন। এরপর মধ্যরাতে থানা থেকে পুলিশের এসআই আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে চলে যান। পরদিনও পুলিশের কোনো তৎপরতা না থাকায় বিষয়টি আবারও সেনা ক্যাম্পে জানানো হয়। এরপর খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরাও আমাদের ফোন করে তথ্য নেন। পরবর্তীতে ১১ জুন রাতে পুলিশ তলব করলে আমরা থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আজিজ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল উদ্দিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে বাদীর একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত চলছে। তবে এখনও জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তদন্তের পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইমরান