
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহুল আলোচিত বিরোধপূর্ণ দ্বীপ দক্ষিণ তালপট্টি নিয়ে ইতিহাস, কূটনীতি ও ভূ-রাজনীতির এক জটিল অধ্যায় রচিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সুন্দরবনের জেলেদের মাধ্যমে আবিষ্কৃত এই দ্বীপটি নিয়ে শুরু হয় দুই দেশের টানাপোড়েন। বাংলাদেশের দাবি, দ্বীপটি খুলনা জেলার শ্যামনগরের দক্ষিণে অবস্থিত হওয়ায় এটি বাংলাদেশেরই অংশ। কিন্তু ভারত দ্বীপটির নাম পরিবর্তন করে “নিউমুর” বা “পূর্বাসা” নামে দাবি করতে থাকে।
উত্তেজনা, দখল ও প্রতিরোধ
১৯৮১ সালের ১১ মে ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আইএনএস সন্দেহয়ক দ্বীপে পাঠিয়ে সেখানে নৌঘাঁটি স্থাপন করে। পাল্টা পদক্ষেপে ১৩ মে বাংলাদেশ নৌবাহিনী দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে ভারতীয় ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। তিন দিন ধরে মুখোমুখি অবস্থানের পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের নেতৃত্বে ভারতীয় সেনারা পিছু হটে। দ্বীপটিকে পরে নো-ম্যানস ল্যান্ড ঘোষণা করা হয়।
কৌশলগত গুরুত্ব ও সম্পদ সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূ-কৌশলগত অবস্থানের কারণে এই দ্বীপে ভারতের সামরিক ঘাঁটি স্থাপিত হলে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে নজরদারি চালানো সহজ হতো। পাশাপাশি, দ্বীপের নিচে গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদের সম্ভাবনা থাকায় দুই দেশের আগ্রহ বেড়েছে।
⚖ আন্তর্জাতিক মামলা ও রায়
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে দক্ষিণ তালপট্টিসহ ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে মামলা করে। কিন্তু ২০১৪ সালে আদালত দ্বীপের অবস্থানকে ভারতের পক্ষে রায় দেয়, যদিও ১৯,৪৭০ বর্গ কিমি বাংলাদেশের অনুকূলে আসে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক ব্যর্থতাই এতে দায়ী।
🌊 দ্বীপ কি সত্যিই বিলীন?
২০১০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দ্বীপটি সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গেছে। তবে সমুদ্র বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আব্দুর রব বলেন, “তালপট্টির রেকর্ডপত্র বাংলাদেশে রয়েছে। ভাটার সময় দ্বীপের কিছু অংশ এখনও জেগে ওঠে।”
তাঁর দাবি, ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে হাড়িয়া ভাঙ্গা নদীর গতিপথ ও পলি নিয়ন্ত্রণ করে দ্বীপটিকে আবার গঠিত হতে দিচ্ছে না। ভারতের এই ভূরাজনৈতিক কৌশল, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা সম্প্রসারণ ঠেকানোর উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য।
🔍 জাতীয় স্বার্থে নতুন করে উদ্যোগ জরুরি
মেরিটাইম ও ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “তালপট্টি দ্বীপ হয়তো আয়তনে ক্ষুদ্র, কিন্তু এর পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের বিশাল সমুদ্রসীমা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন।” অতএব, আন্তর্জাতিক আদালতের আগের রায় ও বর্তমান ভৌগোলিক বাস্তবতার আলোকে দক্ষিণ তালপট্টি ও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন (EEZ) বিষয়ে নতুনভাবে কূটনৈতিক ও আইনি উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
আঁখি