ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘অকাস’ সাবমেরিন চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১২ জুন ২০২৫

‘অকাস’ সাবমেরিন চুক্তি পুনর্মূল্যায়নে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উদ্যোগ

বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশলগত চুক্তি—‘অকাস’ (AUKUS)–নিয়ে নতুন করে ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে হোয়াইট হাউজ চুক্তিটি পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে উদ্বেগ বেড়েছে চুক্তির অপর দুই অংশীদার—যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে।

২০২১ সালে চীনকে প্রতিহত করতে এই ত্রিপাক্ষিক নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে পারমাণবিকচালিত সাবমেরিন পাবে। একইসঙ্গে তিন দেশ মিলে একটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বহর তৈরি করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

তবে বাইডেন প্রশাসনের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, সাবেক প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের কৌশলের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা পুনর্মূল্যায়ন করতেই এই উদ্যোগ। এতে জাতীয় স্বার্থে পরমাণু প্রযুক্তি হস্তান্তরের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চুক্তি পর্যালোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন এলব্রিজ কোলবি। তিনি পূর্বে অকাস নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেই পরমাণু প্রযুক্তির ঘাটতিতে ভুগছে, তখন কেন তার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেবে?”

চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের খবর প্রকাশের পরই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে লন্ডন ও ক্যানবেরায়। যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই প্রতিরক্ষা বাজেট ২০২৮ সালের মধ্যে জিডিপির ২.৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে, এবং পরবর্তী মেয়াদে তা ৩ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্যও রয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া এখনো ৩.৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা ব্যয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনাগ্রহী। এ নিয়ে পশ্চিমা সামরিক অক্ষের মধ্যে মতপার্থক্যও দেখা যাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস জানিয়েছেন, অকাস চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী। তার ভাষ্য, “অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রকৃতি ও অবস্থানই বলে দেয়, আমাদের জন্য দীর্ঘপাল্লার সাবমেরিন কতটা প্রয়োজনীয়।” একইসঙ্গে তিনি দেশীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান। এটি ফ্রান্সের সঙ্গে বাতিল হওয়া সাবমেরিন চুক্তির প্রসঙ্গ টেনেই বললেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ভাষ্য, প্রশাসন পরিবর্তনের পর বড় কৌশলগত সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করা স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার সরকার জানিয়েছে, “এই ঐতিহাসিক প্রকল্পে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই।” যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “অকাস চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যুগান্তকারী নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব। এটি ইন্দো-প্যাসিফিক ও ইউরো-আটলান্টিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, অকাস চুক্তি অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা সক্ষমতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। যুক্তরাজ্যের পর এটি হবে দ্বিতীয় দেশ, যাকে যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু চালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি দিচ্ছে। এই সাবমেরিনগুলো ডিজেলচালিত সাবমেরিনের তুলনায় দ্রুত এবং দীর্ঘ দূরত্বে অভিযান চালাতে সক্ষম হবে। একইসঙ্গে শত্রুপক্ষকে দূর থেকে লক্ষ্য করে আঘাত হানার সামর্থ্যও থাকবে অস্ট্রেলিয়ার হাতে।

সানজানা

×