ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুদ্ধাপরাধ মামলা

ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফুলের মালা

খালিদ ইবনে আমিন

প্রকাশিত: ১৭:৪৭, ১১ জুন ২০২৫

ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফুলের মালা

আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনকালের দেড় দশকে পরিকল্পিতভাবে জুডিশিয়াল কিলিং বা বিচারিক হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা হয়েছিল সাজানো মামলায়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই দেখা যায় যে, রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে না পেরে বিচারিক হত্যাকাণ্ডের আশ্রয় নেওয়া হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম সত্যিই সৌভাগ্যবান। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের ৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার পর, আজহারুল ইসলামের রায় কার্যকর ঝুলে ছিল। গণ-অভ্যুত্থানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক উচ্চ আদালতের নতুন সেটআপে আজহারুল ইসলামের রিভিউ আবেদনের রায় প্রমাণ করে, আওয়ামী আমলে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগ জুডিশিয়াল কিলিংয়ে মেতে উঠেছিল। যুদ্ধাপরাধের প্রতিটি মামলা চলাকালীন রাজধানী ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত গোপন সেফ হাউসে মিথ্যা বানোয়াট সাক্ষী দেওয়ার জন্য ট্রেনিং দেওয়া হতো সাক্ষীদের। এ বিষয়ে তৎকালীন ফ্যাসিবাদবিরোধী গণমাধ্যমগুলো অসংখ্য রিপোর্ট করে। বিবেকবান সাক্ষীরা সেফহোমে শেখানো সাক্ষ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করায়, তাদের আদালতে তোলা হয়নি। তাদের নামে একটি করে লিখিত জবানবন্দি জমা দিয়ে বলা হয়েছিল এদের খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, সাক্ষীদের সকলেই সেফ হাউসে ছিলেন। সাক্ষীদের অনুপস্থিত দেখিয়ে লিখিত জবানবন্দি ট্রাইব্যুনাল গ্রহণ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলায় রিভিউ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিলে এই প্রথম কেউ খালাস পেলেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট মগবাজারের বাসা থেকে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। শেখ হাসিনার বিচারিক হত্যাকাণ্ডের এ যাত্রা শুরু হয়েছিল কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি আপিল করেন আজহার। এই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩০ অক্টোবর আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। এই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দিতে বলা হয়। পরে আপিলের সংক্ষিপ্তসার জমা দেওয়া হয়। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে চলতি বছর ২৭ মে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এ রায় প্রদান করেন। অন্য বিচারপতিরা হলেন মো. আশফাকুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান চৌধুরী, মো. রেজাউল হক, ইমদাদুল হক, মো. আসাদুজ্জামান ও ফারাহ মাহবুব।
সম্মিলিত রায়ে বলা হয়, এটিএম আজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনীত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংশ্লিষ্ট অভিযোগগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা আদালত আজ স্বীকার করছে। এই ব্যর্থতা বিচারিক প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আপিল বিভাগ আরও দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছে যে, পূর্ববর্তী রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বৃহত্তর প্রেক্ষাপট এবং রাষ্ট্রপক্ষের মামলার অন্তর্নিহিত প্রমাণের দুর্বলতাগুলোর যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি। ফলে ন্যায়বিচারের স্বার্থে এটিএম আজহারুল ইসলামকে দোষী সাব্যস্তকরণ এবং তার সাজা বহাল রাখা আর সম্ভব নয়। মামলায় দাখিলকৃত বস্তুগত প্রমাণ এবং আইনি যুক্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ছিল ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে ন্যায়বিচারের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শিত হয়েছে। পূর্ববর্তী রায়টি দুঃখজনকভাবে এত গুরুতর প্রকৃতির একটি ফৌজদারি কার্যধারায় প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই এবং ন্যায্যতার সর্বোচ্চ মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আপিল বিভাগ আরও বলেন, আদালত বিচারিক দায়িত্বের গভীর বোধ নিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, তাদের পূর্ববর্তী রায়ে তারা এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন ও তাকে দোষী প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার এই সুযোগ সৃষ্টির কৃতিত্ব জুলাই গণ-আন্দোলনের অকুতোভয় নেতৃত্বের। এ সুযোগ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
দেশের বিজ্ঞ আইনবিদগণ মনে করছেন, এই রায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমন এক নজির হিসেবে উপস্থাপিত হবে, যা বঞ্চিত মানবতাকে যুগ যুগ ধরে আলোর পথ দেখাবে। আগামী দিনে দেশের উচ্চ আদালতের আত্মসমালোচনামূলক নজির হিসেবে বিবেচিত হবে। এ রায় যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারিক মানদণ্ড, নিরপেক্ষতা ও ন্যায্যতার প্রশ্নে ভবিষ্যৎ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, এটিএম আজহারুল ইসলাম সৌভাগ্যবান, তিনি ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বলে। আমরা এটাও মনে করি, এ রায়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেটেড ইনজাস্টিজের অবসান হয়েছে। এ রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আদালতের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে। 
পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রকাশিত হওয়ার পর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অতীতের অনেক রায় সম্পর্কে এ রায়ে অনেক পর্যবেক্ষণ থাকবে। আমরা মনে করি সরকারের উচিত হবে, পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর একটা রিভিউ বোর্ড গঠন করে অতীতের রায়গুলোকে পুনর্বিবেচনা করা, যেন মৃত্যু পরবর্তীতে হলেও যাদের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে, অবিচার করা হয়েছে, বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার করা হয়েছে, তাদের পরিবার, তাদের দল এবং এ দেশের মানুষ যেন ন্যায়বিচার পেতে পারে। এটিএম আজহারুল ইসলাম একজন নির্দোষ ব্যক্তি। এ রায়ের মাধ্যমে আমরা মনে করি সত্য জয়ী হয়েছে, মিথ্যা পরাজিত হয়েছে। আজহারুল ইসলামের মামলা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এ মামলায়, চারটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বিচারকরা বলেছেন, অতীতের রায়ে বাংলাদেশসহ এই ভারতীয় উপমহাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার পদ্ধতি পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছিল। এটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল। আদালতের সামনে উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ মূল্যায়ন করা ছাড়াই আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। আদালত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি বিচারের নামে অবিচার। অতীতে যেসব তথ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছিল, আপিল বিভাগ তা সঠিকভাবে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে এটিএম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। 
ইতোপূর্বে জামায়াতের এবং বিএনপির ছয় শীর্ষস্থানীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এছাড়া অন্ততপক্ষে পাঁচজন জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন নির্যাতনের শামিল। দেশি-বিদেশি চক্রান্তে, সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলীয় আওয়ামী জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বছরঘোরার আগেই ক্ষমতা পাকাপোক্ত, নিরঙ্কুশ ও স্থায়ী করতে শৃঙ্খলিত ও উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তি জামায়াত নির্মূলের মিশনে নামে। এজন্য শেখ হাসিনা একাত্তরের অস্ত্র কাজে লাগায়। কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আদতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থি নেতৃত্বকে বিচারিক হত্যাকাণ্ড করা হয়। কারণ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পুরো বিচার প্রক্রিয়াই ছিল অস্বচ্ছ এবং আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা উঠে এসেছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের বিচারক দলের সম্মিলিত রায়ে।
দেশের জনগণ শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের এক বছরের মাথায় টের পেতে শুরু করে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নিধনের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। স্বাধীন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নতুন কিছু নয়। ১৯৮১ সালের মে মাসে ভারতে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফেরার পর ৮০ ও ৯০-এর দশকের পুরোটা সময় তার রাজনৈতিক হিংস্রতার অনন্য নজির পাওয়া যায় শেখ হাসিনার একান্ত অনুচর মতিউর রহমান রেন্টু লিখিত ‘আমার ফাঁসি চাই’ গ্রন্থে। লেখক বিবেকের তাড়নায় শেখ হাসিনার নির্দেশে কোথায় কাকে খুন করেছেন কিংবা হামলা করেছেন তার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছেন। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী জমানায় বিরোধী দল-মত নির্মূল করা হয়েছে প্রচণ্ড শক্তি প্রয়োগ করে। আওয়ামী সরকার গুম খুন বিচারবহির্ভূত হত্যা থেকে শুরু করে এমন কোন মানবতাবিরোধী অপরাধ নেই, যা তারা করেনি। সর্বশেষ জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে পাখির মতো গুলি করে দেড় সহস্রাধিক হত্যা ও ২০ হাজার মানুষকে করেছে আহত, পঙ্গু ও দৃষ্টিহীন।
কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ছিল, তা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট, ২০১২ সালের ৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর একটি আদেশে জানা যায়, বিচারপতি নিজামুল হক ও প্রবাসী আইন বিশেষজ্ঞ জিয়াউদ্দিন আহমেদের স্কাইপ কথোপকথন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন এবং ই-মেলে চিঠি আদান-প্রদান করতেন, যা ছিল আইনের ঘোরতর লঙ্ঘন। 
এমনকি দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মাওলানা সাঈদীর সাফাই সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে পাওয়া যায় ভারতের কারাগারে। এ থেকে এ দেশের জনগণ মনে করে আওয়ামী লীগের এ বিচারিক হত্যার সঙ্গে ভারতও জড়িত ছিল। শেখ হাসিনার সাজানো ট্রাইব্যুনালের অসাড়তার প্রমাণ পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যের সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট স্কাইপ ও ই-মেল কেলেঙ্কারির অডিও রেকর্ডসহ রিপোর্ট প্রকাশ করলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এর পরও থেমে থাকেনি শেখ হাসিনার বিচারিক হত্যাযজ্ঞের নির্মমতা। একে একে জামায়াতের কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলী, আলী আহসান মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপির ডাকসাইটে নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে। এদের কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ নিঃসংশয়ে প্রমাণিত নয়। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে শেখ হাসিনা জামায়াতকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলটির শীর্ষ পাঁচ নেতাকে বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে হত্যা করেন।
বাংলাদেশে প্রবাদ রয়েছে, চোরের দশ দিন, মালিকের একদিন। আবার অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়। চব্বিশে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে উৎখাত হওয়া পলাতক আওয়ামী লীগে লুটেরা, খুনিরা এখন নিজেরাই তাদের সৃষ্ট আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কিংবা ফেরারি। তাদের বিরুদ্ধে গুম-খুন ও গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার চলমান। আগামীর বাংলাদেশে নতুন মোড়কে আর কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে নাগরিক সমাজকে। ভুলে গেলে চলবে না, ইতিহাস কাউকে কখনো ক্ষমা করে না, আগামী দিনে যারাই বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার গঠন করবে, তারা যদি এই ধ্রুব সত্যবচন মনে রাখে তবে পথ হারাবে না বাংলাদেশ। এ দেশের আমজনতা ১৯৭১-এ ৯ মাসের গণযুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করেছে। আবার ২০২৪-এ ভারতীয় আধিপত্যবাদের দোসর আওয়ামী ফ্যাসিবাদের মোকাবিলা করেছে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে প্রতিবেশী কোনো পরাশক্তির ক্রীড়নকে পরিণত হবে না আমাদের সোনার বাংলাদেশ। দিন শেষে আমরা বলতে পারি, এটিএম আজহারুল ইসলামের খালাস পাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, দেশে ন্যায়বিচারের ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমুজ্জল হয়েছে।
লেখক : সাংবাদিক

প্যানেল

×