ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: চিন্তা ও চেতনায় অসাম্প্রদায়িক

শরিফুল রোমান

প্রকাশিত: ১২:২৯, ২১ মে ২০২৫

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান: চিন্তা ও চেতনায় অসাম্প্রদায়িক

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ছবিঃ সংগৃহীত

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, নিজ ধর্ম বিশ্বাসের প্রতি আস্থাশীল থাকলেও চিন্তা ও চেতনায় ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তার শাসন আমলে এদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল অহংকার করার মতো। তিনি মসজিদ মাদ্রাসার পাশাপাশি মঠ-মন্দির, গির্জা প্রতিষ্ঠা করে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। জিয়া ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, বাংলাদেশি হিসেবে সবার স্ব-স্ব ধর্ম পালনের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেন। তিনি প্রতিদিন ১৬-১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতেন। 

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থাকার পরেও অতি সাধারণের মতো জীবনযাপন করতেন। এমন কোনো শাখা বা বিভাগ নেই যেখানে তার হাতের স্পর্শ পড়েনি। কোনো ধরনের লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। 

সময় সময় জনগণের অবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য মধ্য রাতে বের হয়ে যেতেন এবং চলার পথে হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে কোনো প্রটোকল না নিয়ে গ্রামের মেঠোপথে হাঁটা শুরু করতেন এবং বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষের সার্বিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেন।

জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাক আহমদ কর্তৃক জারিকৃত সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন। রাজনৈতিক দল ও রাজনীতি করার গণতান্ত্রিক ধারার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ১৯ দফা যুগান্তকারী কর্মসূচি ঘোষণা করে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন, খাল খনন, মৎস্য চাষ, শিল্প বিপ্লব, শিক্ষা বিপ্লব, কৃষি বিপ্লব ও বন্ধ কলকারখানা চালুর মাধ্যমে দেশকে আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশের বদনাম ঘুচিয়ে স্বনির্ভর দেশে পরিণত করেন। তার আমলেই প্রথম বিদেশে চাল রপ্তানি করা হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি, বিদেশি বিনিয়োগ, দেশে প্রথম গার্মেন্ট শিল্প ও ইপিজেড প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি প্রতিবেশী দেশসহ সব দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোর সাথে বিশেষ সুসম্পর্ক, মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমবাজারে প্রবেশ তার বৈদেশিক নীতির অভূতপূর্ব সাফল্য। তিনি ছিলেন সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা। দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা, যুব ও মহিলাদের কর্মসংস্থান, দেশে খেলাধুলার উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। তিনি ছিলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘এদেশের মাটি ও মানুষ আমাদের সংস্কৃতির উৎস’, বাংলাদেশ আমাদের শেষ ঠিকানা। তাই তার সভা-সমাবেশে ‘প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ’ গানের সাথে হাততালির মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠান শুরু করতেন। তার শাসন আমলে জাতীয় সংসদের উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট জিয়া জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদান রাখায় মহান নেতা শেরে বাংলা এ কে এম ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ জাতীয় নেতাদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বিশাল হৃদয়ের পরিচয় দিয়ে গেছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সব সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ছিলেন।

১৯৮১ সালের ৩০ মে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন শেষে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের ৪ নম্বর কক্ষে ঘুমে নিমজ্জিত। বাইরে মূষলধারে বজ্রবৃষ্টি। সে সময়ের একদল বিপদগামী সেনা কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রকারীদের ক্রীড়নক হিসেবে ব্যবহার হয়ে এদেশের গণমানুষের নেতা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে।

জিয়াউর রহমান কর্মজীবন শুরু করেন সৈনিক হিসেবে এবং তার জীবনাবসান হয় একজন সফল রাজনীতিবিদ ও গণমানুষের নেতা হিসেবে। ঢাকা মানিকমিয়া এভিনিউতে স্মরণকালের বৃহৎ নামাজে জানাজা তার প্রতি জনগণের ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। জিয়ার রাজনৈতিক আদর্শের কর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের উচিত জিয়াউর রহমানকে বুকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে জিয়াউর রহমানের কর্মময় আদর্শ তুলে ধরা।

মুমু

×