
ছবি: জনকণ্ঠ
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও জেলার জামালপুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে অবস্থিত জামালপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদ, যা স্থানীয়ভাবে জামালপুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত, একটি ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এই মসজিদটি জেলার বিমানবন্দর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
নির্মাণ ইতিহাস
মসজিদটির নির্মাণ শুরু হয় ১৭৮০ সালে, যখন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলার তাজপুর গ্রামের পীর বংশের আব্দুল হালিম চৌধুরী ঠাকুরগাঁওয়ের তৎকালীন বসন্তনগরে (বর্তমানে জামালপুর) বসতি স্থাপন করেন। তিনি বর্ধমানের জমিদার লালা মুক্তি প্রসাদ নন্দের কাছ থেকে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন এবং ১৭৭০ সালে রাজপ্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। রাজপ্রাসাদের দ্বিতীয় তলার নির্মাণকালে, ১৭৮০ সালে, ভারতের এলাহাবাদ থেকে মিস্ত্রি এনে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ১৮০১ সালে, যা চার পুরুষের প্রায় ২১ বছরের প্রচেষ্টার ফল।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
মসজিদটির প্রবেশমুখে রয়েছে একটি বড় ও সুন্দর তোরণ। মসজিদের ছাদে রয়েছে তিনটি বড় গম্বুজ এবং ২৮টি মিনার, প্রতিটির উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। মিনারগুলোর নকশা ও কারুকাজ অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। মসজিদটি চারটি অংশে বিভক্ত: মূল কক্ষ, ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং অর্ধপ্রাচীরে বেষ্টিত ছাদবিহীন বারান্দা। মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালে লতাপাতা ও ফুলের নকশা রয়েছে। একসঙ্গে প্রায় ৩০০ মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন।
সংরক্ষণ ও পর্যটন
মসজিদটি প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদটির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের দাবি জানিয়েছেন।
এই মসজিদটি শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং এটি বাংলাদেশের স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।