
ছবি: সংগৃহীত।
স্মৃতিভ্রংশ বা অ্যালঝেইমার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলেন তাদের পরিচিতি, প্রিয়জনদের মুখ, এমনকি নিজেদের অতীতও। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে এই স্মৃতির ক্ষয় ঠেকাতে নানা গবেষণা করে আসছিলেন। এবার এক যুগান্তকারী গবেষণায় জানা গেল—মস্তিষ্কের এক বিশেষ স্তর, যাকে বিজ্ঞানীরা ‘সুইট লেয়ার’ বা ‘মিষ্টি স্তর’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, সেটি পুনরুদ্ধার করে স্মৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব! এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে স্মৃতিভ্রংশ রোধ ও চিকিৎসায় নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, মস্তিষ্কের নিউরনের চারপাশে থাকা একটি সূক্ষ্ম স্তর—যা গ্লাইকান বা চিনির অণু দিয়ে গঠিত—স্মৃতির রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। গবেষকরা এই স্তরটিকে ‘সুইট লেয়ার’ নামে অভিহিত করেছেন, কারণ এতে উচ্চমাত্রায় গ্লাইকোপ্রোটিন থাকে। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তর ক্ষয় হতে থাকে, যার ফলে নিউরোনগুলোর মধ্যে যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই গবেষণায় ইঁদুরের উপর পরীক্ষায় দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে এই মিষ্টি স্তরটি পুনর্গঠন করার পর প্রাণীগুলো আগের মতোই স্মৃতি ফিরে পায়। তাদের শেখার ক্ষমতা এবং পুরনো তথ্য মনে রাখার দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন নিউরোবায়োলজিস্ট অধ্যাপক রিচার্ড হান্টার। তিনি বলেন, “আমরা প্রমাণ পেয়েছি, স্মৃতিশক্তি হ্রাসের পেছনে শুধু নিউরনের ক্ষয় নয়, বরং এই রক্ষাকবচ স্তরের ক্ষয়ও সমানভাবে দায়ী। এটি পুনর্গঠন করে আমরা আশাব্যঞ্জক ফল পেয়েছি।”
এই আবিষ্কার শুধু বার্ধক্যজনিত স্মৃতিভ্রংশ নয়, বরং অ্যালঝেইমার এবং পারকিনসনের মতো নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে Nature Neuroscience জার্নালে।
তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহে এই পদ্ধতি প্রয়োগের আগে আরও বিস্তৃত গবেষণা দরকার। কারণ মানুষের মস্তিষ্ক অনেক জটিল এবং প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতে পারে। তবুও প্রাথমিক ফলাফল বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করেছে যে, একদিন হয়তো স্মৃতি হারানোকে পুরোপুরি প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে।
মস্তিষ্কের ক্ষয়রোধ ও স্মৃতিশক্তি রক্ষায় ‘মিষ্টি স্তর’ নিয়ে এই গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি ভবিষ্যতে নিউরোসায়েন্স গবেষণায় নতুন দরজা খুলে দিতে পারে এবং আমাদের বয়সজনিত মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি এনে দিতে পারে।
নুসরাত