ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

অর্থ পাচারে সেভেন স্টার

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১৪ মে ২০২৫

অর্থ পাচারে সেভেন স্টার

সদ্য ঘোষিত নিষিদ্ধ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী (২০০৯-২০২৪) শাসনামলে নামে-বেনামে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ তছরুপের মহোৎসব চলেছিল। সাম্প্রতিককালে এমন নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ১৫ বছরে ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে। এই বিপুল অঙ্কের টাকার বড় অংশই বিদ্যুৎ খাতের। প্রাথমিক অনুসন্ধানে এমন তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত শ্বেতপত্র কমিটি।  এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, ‘গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে। বিশেষ আইনের কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হয়নি। এই অনিয়ম ও দুর্নীতির বিচার হতে হবে।’
আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের সাত ভিআইপি অর্থপাচারের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে তদন্তে। যাদের পরিচিতি ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ হিসেবে। সেভেন স্টার গ্রুপে আছেন পলাতক শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, ভাগ্নে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, সাবেক মুখ্য সচিব ও এসডিজি বিষয়ক সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এবং সামিট গ্রুপের মালিক মুহাম্মদ আজিজ খান। এরাই মিলেমিশে লুণ্ঠিত টাকা পাচার করে এখন নিরাপদে বিদেশে অবস্থান করছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সংস্থাটি জানতে পারে, অর্থপাচারে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সাতজন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি সরাসরি জড়িত। এছাড়া বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি পাওয়া প্রায় সব কোম্পানিই অর্থপাচারে জড়িত। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে যারাই বিদেশে অর্থপাচার করেছে ‘সেভেন স্টার গ্রুপকে’ কমিশন দিয়েই অর্থপাচার করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে গত সাড়ে ১৫ বছরে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করা হয়েছে, সেই অর্থ পাচারের কারণেই ডলার সংকট তীব্র হয়েছে। এভাবে অর্থপাচারের কারণে কিছু ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। অন্যদিকে দেশজুড়ে দেখা গেছে তীব্র ডলার সংকট। অর্থপাচারকারীদের সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক তিন গভর্নরের নামও এসেছে।
বাংলাদেশী মুদ্রার বদলে ডলারে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয় শুধু অর্থপাচারের সুবিধার জন্য। যারা সত্যিকারের ব্যবসায়ী, তারাও ব্যাংকে এলসি খুলতে হিমশিম খেয়েছেন তখন। ব্যবসায়িক কাজে ডলার কিনতে পারেননি সে সময়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো সামাল দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। দুদকের অনুসন্ধানী দল বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানতে পারে, সেভেন স্টার গ্রুপের এই দুর্নীতিবাজরা রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো একাধিকবার সরকারের কাছে বিক্রি করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এভাবেই শেখ কামাল থেকে জয়-ববি হয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের অতল গহ্বরে তলিয়েছে। কুইক রেন্টালের লাইসেন্স পেয়ে যারা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে, তারা প্রায় সবাই ঋণখেলাপি। বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির চক্রে পড়ে এভাবেই দেশের অর্থনীতির ভিত দুর্বল করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদের দেশের প্রচলিত আইনে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে যথাযথ বিচার ও শাস্তির সম্মুখীন করা বাঞ্ছনীয়।

প্যানেল

×