দেশের কৃষির অন্যতম উপাদান মৎস্য খাত। মানুষের প্রাণিজ আমিষ ও পুষ্টি চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ হয় মাছ থেকে। প্রবাদ রয়েছে মাছে ভাতে বাঙালি। বাড়িতে কোনো আত্মীয়স্বজন এলে বড় মাছ আনার রীতি আজও প্রচলিত। মাছ দিয়ে তৈরি নানা পদের খাদ্য প্রণালী প্রায় নিয়মিত হাজির থাকে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে। জেলে জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়েও নির্মিত হয়েছে বিখ্যাত নাটক, সিনেমা ও কালজয়ী উপন্যাস। মাছ ধরা ও চাষ করা অনেকের জীবন-জীবিকারও উৎস। এ ধরনের পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছে বহু নর-নারীর জীবন ও জীবিকা। এক জরিপে উঠে এসেছে, মৎস্য খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে ১৪ লাখ নারীসহ দেশের মোট জনসংখ্যার ১২ শতাংশের অধিক মানুষ।
সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতা-শ্রমিকের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে নানা সফলতা এলেও মৎস্যজীবী ও মৎস্যখাতে বৈষম্য এখনো দূর হয়নি। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেছেন, যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তারাই প্রকৃত মৎস্যজীবী। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না। নারী মৎস্যজীবীদের স্বীকৃতিকে বড় ধরনের সমর্থন জানাতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্য মৎস্যজীবীদের কোনো পার্থক্য করা যাবে না। যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে মৎস্যজীবীরা আর গরিব থাকবে না। মৎস্যজীবীদের জন্য কৃষি ব্যাংকের মতো নতুন একটি ব্যাংক খোলা যেতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের মৎস্য খাত একটি অপার সম্ভাবনার খাত। এই খাতের সমৃদ্ধির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা লাখ লাখ পুকুরে চলছে মাছ চাষ। সেই সঙ্গে উদ্ভাবন হচ্ছে নতুন নতুন মাছের জাত। বিলুপ্তপ্রায় অনেক দেশী মাছের প্রজাতি ফিরে আসছে। পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মৎস্য চাষিরা সরাসরি তাদের উৎপাদিত মাছ পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের ব্যবসায়ীদের কাছে। শহরের মানুষও টাটকা মাছের স্বাদ নিতে পারছেন। কিন্তু যে জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, ঝড়-তুফান ও বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন জলাশয় ও সমুদ্র থেকে মাছ ধরে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের আমিষের চাহিদা মেটান সেই জেলেদের জীবন কীভাবে কাটে তার খবর আমরা কজনই বা রাখি!
দেশে মাছের উৎপাদন বাড়লেও জেলেদের জীবনমানের কাক্সিক্ষত উন্নতি হয়নি। সামগ্রিকভাবে জেলেরা বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে যারা সমুদ্রে মাছ ধরেন, তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়। অনেকের স্থায়ী ঘরবাড়িও নেই। কাজেই মৎস্যজীবীদের জীবনমান উন্নয়নে শুধু খাদ্য সহায়তা নয়, আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। জেলেরা যাতে মহাজনদের ঋণচক্রে আবদ্ধ না থাকেন, সে জন্য তাদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা চাই। উপকূল ও চরাঞ্চলের অনেক স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভিভাবকরা সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে পারেন না। এ বিষয়েও সরকারের সুদৃষ্টি কাম্য।
মৎস্য খাতে বৈষম্য
শীর্ষ সংবাদ: