ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ভোগ্যপণ্য আমদানি

-

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ৯ নভেম্বর ২০২৪

ভোগ্যপণ্য আমদানি

সম্পাদকীয়

আগামী বছরের মার্চ মাসে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। খাদ্যপণ্যের এই তালিকায় রয়েছে চাল, গম, চিনি, ডাল, ছোলা, ভোজ্যতেল, খেজুরসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটিতে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চাল ও গম এবং ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এর আগে গত সপ্তাহে ভোজ্যতেল ও ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও রমজানে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আগামী ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে আরও বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার।

মূলত খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সাধারণ মানুষের ব্যয় কমাতেই সরকারের এই উদ্যোগ, যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এ প্রসঙ্গে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সরকারি পর্যায়ে আরও সার, চিনি, গম ও চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থ। এ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ মজুত বাড়াতে সরকার ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য ১-৩ টাকা বাড়াতে পারে। সুসম খাদ্য নিশ্চিত করতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের প্রাপ্যতাও নিশ্চিত করা হবে। 
চলতি বছর আমনের ফলন অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেড়েছে সব রকম চালের দাম। একই সঙ্গে আটা-চিনি ও ভোজ্যতেলের দামও। শেষোক্ত তিনটি পণ্যের ক্ষেত্রে বলা যায় আন্তর্জাতিক বাজারসহ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত। তবে চালের দাম বাড়ছে কেন? গত এক মাসে মোটা চালের দাম প্রতিকেজিতে বেড়েছে চার থেকে ছয় টাকা। আটার দাম কেজিতে প্রায় ১০ টাকা। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে চিনি ও ভোজ্যতেলের দামও। মূলত ব্যবসায়ী, কৃষক ও ভোক্তা পর্যায়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও অবৈধ মজুতের কারণে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কৃষক নিজস্ব খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ধান-চাল মজুত রেখেছেন।

দ্বিতীয়ত, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিসহ আড়তদার ও চাতাল মালিকরা চালের বিপুল মজুত গড়ে তুলেছেন অতি মুনাফার আশায়। তৃতীয়ত, সচ্ছল ভোক্তাশ্রেণিও বেশি পরিমাণে খাদ্যপণ্য কিনছেন দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায়। অথচ সরকারের হাতে বর্তমানে চাল ও গমের মজুত সন্তোষজনক। চাল ও কয়েকটি পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার কিংবা কমানো হয়েছে। ব্যাংকও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে আমদানিকারকদের।
প্রধানত ব্যবসায়ী, মিল মালিক, আড়তদার ও আমদানিকারকদের কারসাজিতে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। এবারে ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে সরকার সহায়তা করছে কৃষককে, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন। জাতীয় বাজেটে কৃষি খাতে যথেষ্ট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও সহায়ক কর্মসূচি রাখা হয়েছে, যাতে কৃষকসহ গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির খামার, ফুলফল-সবজি উৎপাদকÑ প্রায় সবাই কমবেশি উপকৃত হতে পারেন। অন্তর্বর্তী সরকার সবিশেষ জোর দিয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর। এই পরিস্থিতিতে আমদানিকারকসহ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের উচিত দেশের জনগণের স্বার্থে সরকারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা। এর পাশাপাশি প্রয়োজন রমজানে অতি মুনাফার প্রবণতা ত্যাগ করে রোজাদারদের জন্য নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ।

×