
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বাড়তে থাকা সামরিক উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় বৈশ্বিক রাজনীতির চালচিত্র দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত কেবল দুটি দেশের দ্বন্দ্ব নয়, বরং বিশ্বে জিও-পলিটিক্সের এক গভীর রূপান্তরেরও ইঙ্গিত বহন করে।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক পরিসরে অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বাইরে তেমন কোনো শক্তিশালী বন্ধু রাষ্ট্র তাদের পাশে দৃশ্যমান নয়। বিশেষত গাজা পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার কারণে বিশ্বজুড়ে মানবাধিকারকর্মী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব গড়ে উঠেছে।
অন্যদিকে ইরান দীর্ঘদিন ধরে একটি আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। তাদের সামরিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হলেও, চলমান আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ প্রমাণ করেছে যে ইরান এখন কেবল প্রতিরক্ষায় নয়, বরং পাল্টা আঘাত হানার সামর্থ্যও রাখে।
বিশ্ব রাজনীতিতে ইসরায়েলের একচ্ছত্র আধিপত্যে দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রের ইহুদি কমিউনিটির প্রভাব একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি নাগরিকের প্রভাব বিভিন্ন সেক্টরে লক্ষণীয়, বিশেষ করে রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মিডিয়া খাতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলের সামরিক নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকার ভেতর থেকেই কিছু ইহুদি বুদ্ধিজীবীর সমালোচনা ইঙ্গিত দেয় যে এই প্রভাব হয়তো একেবারে স্থায়ী নয়।
চীন-যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে চীনের আধিপত্য ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। চীন এখন ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারে, অস্ত্র নির্মাণে এবং সামরিক প্রযুক্তিতে অনেকাংশে যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের থেকে এগিয়ে গেছে বলে একাংশের বিশ্লেষণ। সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা প্রসঙ্গে কেউ কেউ বলছেন, এটি চীনের সামরিক প্রযুক্তির এক বাস্তব পরীক্ষা হয়ে উঠেছে।
এদিকে, পানির সংকট নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সংঘাতের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্রসহ বহু আন্তঃসীমান্ত নদীর উৎস চীনে হওয়ায়, পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে চীন বিশাল বাঁধ নির্মাণ করছে যা ভারতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। ভারত যদি এতদিন বাংলাদেশকে জাতিসংঘে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেখেছিল, এখন তারাই চাইছে চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি এক ধরনের ‘কার্মিক প্রতিক্রিয়া’, যা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশ্ববাসী এখন তাকিয়ে আছে—এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি কতদূর গড়ায়, এবং তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনার মতো আশঙ্কা কি বাস্তবে রূপ নেয় কিনা।
আঁখি