ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

লাম্পিতে বিপর্যস্ত খামারিরা 

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২৪ জুন ২০২৫

লাম্পিতে বিপর্যস্ত খামারিরা 

লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত গরু

বৈরি আবহাওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও ভ্যাকসিনেশনসহ নানাবিধ কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে ভয়াবহভাবে বাড়ছে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (LSD)। ভাইরাসজনিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু ও মহিষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বাছুর। বিশেষ করে উত্তরের দুই জেলা কুড়িগ্রামে এই রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে গরু।

গত এক মাসে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলাতে আক্রান্ত হয়েছে ৬০ টি গবাদি পশু তার মধ্যে ৩ টি গরু মারা গিয়েছে। এছাড়া গোটা জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩৫১ টি গবাদি পশু। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ২৯ টি পশু। সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গিয়েছে। 

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লাম্পি স্কিন রোগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও গবাদিপশুর জন্য এটি মারাত্মক সংক্রামক একটি রোগ। এটি ছোঁয়াছে খুব দ্রুত এটি এক পশু থেকে অন্য পশুতে ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত গরুদের জ্বর হয়, শরীর ফুলে ওঠে, ত্বকে গুটি দেখা দেয়, মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং ধীরে ধীরে পশুটি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পশুর মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত পশুর পাশে সুস্থ পশু থাকলে সেখানেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত পশুকে দ্রুত আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা নিতে হয়।

এ পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন। তারা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা পত্র নিয়েও তেমন কোন সুফল মিলছে না বলেও খামারিদের অভিযোগ। এ রোগের চিকিৎসাও অনেকটা খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় বড্ড বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র খামারি ও কৃষকরা।

বিদেশী প্রজাতির ২ মাস বয়সি বাছুর নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে এসছেন জেলার উলিপুর উপজেলার বাসিন্দা আরুফ উদ্দিন। সম্প্রতি জন্ম নেয়া বাছুরটি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১০ দিন আগে। গ্রাম্য ডাক্তার চিকিৎসা করেছে কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। তাই তিনি নিয়ে এসেছেন শহরে। তিনি বলেন, ‘ বাছুরটার অবস্থা ভালো না। জ্বর আর কাপনি কখন জানি কী হয়, সেই জন্য এটে আনছি। দেহি ডাক্তার কী কয়।’ 

৮ মাসের গর্ভবতী গাভী নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার থেকে ভেটেরিনারি হাসপাতালে এসেছেন আসাদুল ইসলাম নামের এক খামারি। তিনি বলেন, ‘গরুটার পেটত বাচ্ছা, ৭ দিন থাকি জ্বর আর শরীর কাপে। খুব বিপদত আছি। আল্লাহ জানে কপালত কী আছে। হামার এলাকাত ৫-৬ টা বাছুর মরছে এ পর্যন্ত। 

কুড়িগ্রার সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: কামরুল ইসলাম বলেন,‘ গত ১ মাসে আমাদের এখানে ৬০ টি গরু চিকিৎসা নিতে এসেছে। তার মধ্যে ৩ টি গরু মারাও গিয়েছে। আসলে এ রোগের ভ্যাকসিন এখনও আসে নি। আশা করছি আগষ্ট মাসে ভ্যাকসিন আসবে তখন রোগের প্রকোপটা কমে যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘ আমরা খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছি গরুর ঘর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি রোগাক্রান্ত গরুকে মশারি দিয়ে রাখার।’  
 
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, জেলায় এখন পযন্ত ৩৫১ টি গবাদি পশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ২৯ টি পশু। তবে দিনে দিনে এই রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা কমছে। 

তাসমিম

×