
ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ১২ দিন পর আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় বিশ্ব কিছুটা স্বস্তি পেল। যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও ইসরায়েল—তিন পক্ষই নিজেদের 'জয়ী' ঘোষণা করেছে। কিন্তু সত্যিই কি তিন পক্ষেরই লাভ হয়েছে? নাকি কেউ শোচনীয়ভাবে পরাজিত? যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এর পারমাণবিক হামলা এবং ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যুদ্ধ ভয়াবহ মোড় নেয়। এরপরেই আসে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার নীতি নিলেও হঠাৎ করে তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় বি-২ বোমারু বিমান দিয়ে হামলা চালায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘চূড়ান্ত ধ্বংস’ বলে দাবি করলেও, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, "খুবই ভয়াবহ ক্ষতি" হয়েছে, কিন্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের যা পেল
- কোনো মার্কিন সেনা নিহত হয়নি।
- সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে।
- যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে।
ট্রাম্প বলেন, “তারা সব কিছু তাদের সিস্টেম থেকে বের করে ফেলেছে, এখন আর ঘৃণা থাকবে না।” এতে করে ট্রাম্প নিজের ঘরোয়া সমর্থনও ধরে রাখতে পারেন, কারণ তিনি দীর্ঘমেয়াদী ‘ফরএভার ওয়ার’ বিরোধী।
ইসরায়েল
যুদ্ধ শুরুর আগেই ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী শাদমানি, মোহাম্মদ কাজেমি ও হাসান মোহাক্কে-র মতো শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে ইসরায়েল সামরিক ও গোয়েন্দা নেতৃত্ব দুর্বল করে ফেলে।
এছাড়া, ইসরায়েলের আরও বড় জয় ছিল
- যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি যুদ্ধে টেনে আনা
- নিজের রাজনৈতিক অবস্থান মজবুত করা
- ঘরোয়া নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহুর ভাবমূর্তি শক্তিশালী করা
ইসরায়েলের এই অভিযান তাদের “ডগড ফাইটার” বা দৃঢ় যোদ্ধা হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে।
ইরান
যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তখন তেহরান প্রতিশোধ নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু তারা জানত, সরাসরি প্রাণঘাতী হামলা করলে পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাতারের ‘আল-উদেইদ’ ঘাঁটিতে হামলা করে—তাও আগাম বার্তা দিয়ে।
এই কৌশলের মাধ্যমে ইরান যা পেল
- তারা ‘দুর্বল’ না হয়ে বরং 'প্রতিরোধকারী শক্তি' হিসেবে আবির্ভূত হলো
- আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে প্রাণহানি এড়ায়, ফলে মার্কিন পাল্টা হামলার দরকার পড়েনি
- জনগণের কাছে শক্ত প্রতিক্রিয়ার বার্তা দিতে সক্ষম হয়
যুদ্ধবিরতির ঠিক আগ মুহূর্তেও ইরান ইসরায়েলের শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যাতে তারা দেখাতে পারে—“আমরাও লড়েছি, পিছু হটিনি।”
যদিও যুদ্ধ থেমেছে, কিন্তু এটি এক ধরনের “ভঙ্গুর শান্তি”। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু ইরান তা অস্বীকার করছে। অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক বলছেন, এই সংঘর্ষ ইরানকে তার পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরও গোপনে এগিয়ে নেওয়ার প্রেরণা দিতে পারে।
মুমু ২