ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ফুলবাড়ীতে অবৈধ জালে মাছ নিধন, জেলেদের জীবিকায় টান

মাহফুজার রহমান মাহফুজ, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২৪ জুন ২০২৫

ফুলবাড়ীতে অবৈধ জালে মাছ নিধন, জেলেদের জীবিকায় টান

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে অবৈধ জাল দিয়ে অবাধে মাছ নিধনের ফলে বিলুপ্ত প্রায় দেশি প্রজাতির মাছ। বর্তমানে হাট বাজারগুলোতে দেখা মেলেনা দেশি প্রজাতির অনেক মাছের। মানুষ যেমন পুষ্টিগুনে ভরা সু-স্বাদু দেশি মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছেন, তেমনি জেলেদের জীবন জীবিকাতেও টান পড়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদনদী, খালবিল, ডোবা, নালা ও জলাশয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল, রিং জাল, চায়না দুয়ারী জালের ছড়াছড়ি। এছাড়াও খাল-বিল-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণসহ মাছের বিচরণক্ষেত্রের অনুকূল পরিবেশ সংকট হওয়ার কারণে দিনকে দিন দেশীয় প্রজাতির মাছগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে। 

আগে এ অঞ্চলে কৈ, মাগুর, শিং, টেংরা, পুঁটি, ডারকানা, মলা, ঢেলা, শোল, বোয়াল, ভ্যাদা, বাইম, খলিশা, ফলি, চিংড়ি, টাকি, বালিয়া, চাপিলা, চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিতপুঁটি, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, চান্দা, চ্যাং, ছোট চিংড়ি ,শালবাইম, ধুতরা, গছি, বইরালিসহ আরও অনেক দেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানে প্রায় বিলুপ্ত এসব দেশীয় প্রজাতির মাছ। এদিকে নদ নদীতে মাছ না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।

উপজেলার কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের জেলে টইসস্যা চন্দ্র বিশ্বাস (৭৫) বলেন, "এখন আর আগের মত খালবিলে মাছ পাওয়া যায়না। কারেন্ট জাল, রিং জাল ও চায়না দুয়ারি জাল আসার পর থেকে মাছ আর চোখে পড়েনা। মাছের এমন অভাব হবে কোনদিন কল্পনাও করিনি। কি দিন ছিল, আর কি দিন আসলো। এখন সংসার চালানোই কঠিন। অন্য কোন কাজ করে যে খাব, তাও তো পারিনা। এই বয়সে এখন কি করে খাব, বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেই চিন্তা করছি।" 

ওই এলাকার গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ও অনিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, তারা কয়েকজন মিলে মোটা অংকের টাকা খরচ জাল বানিয়েছেন। কিন্তু মাছ ধরতে গিয়ে মাছ পাচ্ছেন না। এখন মালিকানা পুকুর জলাশয়ে জাল টেনে সামান্য আয় করেন। কিন্তু তাতে তাদের সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। 

বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের জেলে গোলজার হোসেন বলেন, "আমি খালবিল নদী নালায় মাছ ধরি। সেই মাছ হাটে বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাই। এবারে আগাম বৃষ্টিরতে খালবিল নদী নালা পানিতে ভরে গেছে। আশা করেছিলাম পানিতে জাল ফেললেই প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু মাছ তো নাই। শুধু এবারই নয় গত কয়েক বছর ধরে নদী নালায় মাছের খুব অভাব। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত জাল টেনেও মাছের দেখা মিলছে না। পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন যাপন করতে হচ্ছে। অন্য কোন কাজ করে সংসার চালানোর উপায় খুঁজছি।"

শাহ বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুজাউদ্দৌলাহ বলেন, "অবৈধ জালে মাছ নিধনের ফলে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। জালের পাশাপাশি ইদানীং নদ নদী খালবিলে বৈদ্যুতিক ফাঁদ ও বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরা হয়। এর ফলে শুধু মাছই নয় জলজ পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজ পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের নজরদারির পাশাপাশি জনসচেতনা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।"
  
ফুলবাড়ী উপজেলা মৎস্য অফিসার হাফিজুর রহমান বলেন, "মৎস্য সংরক্ষণ আইনে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ কারেন্ট জাল ও রিং জাল ধ্বংস  করা হয়েছে এবং উপজেলায় এখনও আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি জেলেরা যাতে নিজ পেশায় ঠিকে থাকতে পারে সেজন্য তাদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

Jahan

×