
এক সময় খটখট শব্দে মুখরিত থাকত রুহিতপুরের তাঁতশিল্প এলাকা। এখন অনেকটাই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার রুহিতপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প। রুহিতপুরের লুঙ্গির নাম দেশ পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। বর্তমানে সেই তাঁত ব্যবসা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
আজ (২৪ জুন) মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে তাঁত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুতা ও অন্যান্য উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁতশিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একসময় এ শিল্পের উৎপাদিত লুঙ্গি, গামছাসহ বিভিন্ন পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হতো। কিন্তু এখন লোকসান দিয়েই বাজারে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে রুহিতপুরের অধিকাংশ তাঁত মালিক ব্যবসা বন্ধ করে অন্য ব্যবসায় ঝুঁকেছেন।
তাঁত ব্যবসায়ীরা আরও জানান, যদি সরকার তাঁদের পাশে দাঁড়ায়, তাহলে তাঁতশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা করেন তারা।
১৫-২০ বছর আগেও রুহিতপুর, উত্তর ও দক্ষিণ রামেরকান্দা, কামার্তা, গোয়ালখালী, নারায়ণ পট্টি ও আশপাশের এলাকায় প্রায় হাজারখানেক তাঁত অবশিষ্ট ছিল, যা একসময় ছিল তিন থেকে চার হাজার। প্রতিটি বাড়িতেই একাধিক তাঁত ছিল। রুহিতপুর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে বাচ্চারা ঘুম থেকে উঠত তাঁতের খটখট শব্দে। সুতা আর মাড়ের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত আশেপাশের গ্রামগুলোতেও। তাঁতশিল্পীদের কাছে সেই গন্ধ ছিল আনন্দের সুবাস। আজ তা শুধুই স্মৃতি।
তাঁত মালিকদের দাবি, সুতা ও অন্যান্য উপকরণের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া এবং স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করা হলে তাঁতশিল্প আবার সচল হতে পারে। তাঁরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান—এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে রক্ষা করতে সহযোগিতা করা হোক, না হলে একদিন এই শিল্প পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তাঁত ব্যবসায়ী সুব্রত বলেন, কাপড়ের দামের চেয়ে সুতার দাম বেশি হওয়ায় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না। এক থানে ৪ পিস লুঙ্গি হয়, এতে ব্যয় হয় ৫০০ টাকা, আর বিক্রি হয় ৬৩০ টাকায়। তাও কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে সুতা এনে তৈরি করে আবার কাপড় কুমারখালীতেই বিক্রি করতে হয়। এতে শ্রমিকের বেতন, যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে পারেন না। শুধু বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতে পরিবারের ৫ জন সদস্য নিজেরাই শ্রম দেন।
ব্যবসা ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে তাঁত ব্যবসায়ী ওকিল বলেন, গত বছর যে কাপড় বুনেছি, তা এখনো বিক্রি হয়নি। প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকলেও অনেকেই এখন আর কাপড় বুনছেন না। যে দুই-একটি বাড়িতে এখনও বুনা হয়, তারাও সুতার সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে সমস্যায় পড়েছেন। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাঁরা অন্যদের মতো তাঁরাও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।
তাঁত ব্যবসায়ী মালেক মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই বাবা-দাদার কাছ থেকে তাঁতের কাজ শিখেছি। অন্য কোনো কাজ জানি না, তাই এখনও তাঁতের কাজই করি। তবে সুতার দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে তাঁত ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
তাঁত ব্যবসায়ী রুকন বলেন, একসময় রুহিতপুরের অধিকাংশ ঘরেই তাঁতের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা তৈরি হতো। এখন সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই তাঁত ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা এখনও বাপ-দাদার পেশাকে ধরে রেখেছি। বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি ঘরে তাঁত রয়েছে এবং অল্প পরিমাণ লুঙ্গি ও গামছা তৈরি হয়।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া বলেন, রুহিতপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের নাম অনেক শুনেছি। তাঁতশিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সজিব